ঢাকা, শনিবার, ২০ পৌষ ১৪৩১, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

দুর্ভাগ্যজনকভাবে চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে: ফখরুল 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
দুর্ভাগ্যজনকভাবে চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে: ফখরুল  বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যে চক্রান্তের খেলার কারণে আমাদের নেত্রীকে ৬ বছর জেলে থাকতে হয়েছে, এখনো আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে।

সে চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।  

বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা ( অন্তর্বর্তী সরকার) ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো করা দরকার, একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা ক্ষেত্রে , যেখানে সবার অংশগ্রহণ গ্রহণযোগ্য হবে। যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, এ সংকটের একমাত্র সমাধান হতে পারে সবার গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন।  

তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে 'সবার আগে বাংলাদেশ ' সেই দলের নেতাদের দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। ইতিহাসে এ ঘটনা বহুবার হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এ চক্রান্তকে কখনো সমর্থন দেবে না। বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে, কখনোই ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একজনকে বের করতে পারলে দুইটা লোককে তারা সরিয়ে নিতে পারেনি। কারণ বিএনপি যে রাজনীতি, এটা হচ্ছে এ দেশের মানুষের জনগণের রাজনীতি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, মানুষের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার আনতে হবে। তাই বলে, সংস্কারের নাম করে আমরা এমন কিছু হতে দিতে পারি না, যেটা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান করে তিনি বলেন, কাল বিলম্ব না করে এ সংকট থেকে মুক্ত করতে অতিদ্রুত নির্বাচন ব্যবস্থা করুন।

ছাত্রদলকে ভ্যানগার্ড আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমাদের সামনের যোদ্ধা তারা, ছাত্রদলকে এখন নলেজ বেস পলিটিক্স করতে হবে, জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। আমাদের একটা সাইবার ওয়ার্ক করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অবস্থান সবচেয়ে বেশি রাখতে হবে। এটা যদি আমরা না করতে পারি তাহলে এ যুদ্ধে আমরা হারিয়ে যাব। ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভিটিস বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মেধা মনন দিয়ে তাদের পরাজিত করতে পারব বিশ্বাস রাখি।

সভাপতির বক্তব্য রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সফল হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রক্তের ওপর দিয়ে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সময়ে ক্যাম্পাসে কোথাও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের থাকতে দেওয়া হয়নি। আগামী দিনে সারাদেশের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নতুন ধারা রাজনীতি চালু করবে। কোথাও চাঁদাবাজি ও দখলবাজি থাকবে না। বক্তব্য শুরুতে ছাত্রদলের গুম-খুন ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করেন।

স্বাধীনতার পর নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে ভূমিকা রেখেছে ছাত্র বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গত ১৬ বছর বিদেশ থেকে আন্দোলনে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান। তার নেতৃত্বে আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া হয়েছেন। এখনো দেশের সামনে টুকটাক ষড়যন্ত্র করছে ভণ্ড প্রতারকরা, বিপদ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর থেকে প্লেকার্ড, ব্যানার হাতে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দেন। বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা নানা রঙ-বেরঙের ব্যাজ, টুপি-গেঞ্জি পরে ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বাইরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদলের প্রথম শহীদ চট্টগ্রাম মো. ওয়াসিম আকরাম, মো. সবুক মিয়া, আরিফুর রহমান রাসেলসহ নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যানার দেখা গেছে।  

এছাড়া বিগত আওয়ামী লীগের আমলে গুম হওয়া ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইলিয়াস আলী, নুরুজ্জামান জনি, মাহাবুবুল হক বাবলু, আবু তাহের দাইয়া, সাজেদুল ইসলাম সুমন, আমিনুল ইসলাম জাকিরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ব্যানার দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদলের নিহত ১৪২ জনের নামে তালিকার বই প্রকাশ করে সংগঠনটি।

দিনটি উপলক্ষে এদিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করেছেন।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুর মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আহসান রাজিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ সংগঠনটি অসংখ্য নেতাকর্মী।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
টিএ/জেএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।