ঢাকা : জাতীয় সংসদের অধিবেশনে গান গেয়ে আর খিস্তি-খেউর না করে দেশের বন্যার্ত এলাকার জনগণকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার (১ জুলাই) নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে রিজভী বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত নিশি রাতের গর্ভে যে সংসদের জন্ম দেওয়া হয়েছে সেই সংসদকে এখন নতুন করে রঙ্গশালায় পরিবর্তন করেছেন। যে যার ইচ্ছেমতো গান, কবিতা, খিস্তি-খেউর আর মিথ্যাচার চালিয়ে জনম্যান্ডেটহীন সংসদকে রঙ্গশালায় পরিণত করা হয়েছে। সুতরাং, সংসদ অধিবেশনের নামে গান, নাটক, কবিতা আর খিস্তি-খেউর শোনার জন্য রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ না করে সেই টাকা বরং বন্যার্তদের পেছনে খরচ করুন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট কিংবা ভোট ডাকাতি, এমপিরা যেভাবেই হোক সংসদে প্রবেশ করুক, বাস্তবতা হচ্ছে সংসদ অধিবেশন চলাকালে প্রতি মিনিটে রাষ্ট্রের ব্যয় প্রায় দুই লাখ টাকা। সুতরাং, যেখানে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যাপীড়িত মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে, বেঁচে থাকার লড়াই করছে সেখানে রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে সংসদে বসে এক শিল্পীর গান শোনা রীতিমতো মানবতার প্রতি অবমাননার শামিল। জনগণের দুঃখ-দুর্দশার দিকে নজর না দিয়ে সংসদে সেই শিল্পীর মুখে নিজের বন্দনা শুনে নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রী পুলকিত হলেও জনগণ লজ্জিত হয়েছে।
রিজভী আরও বলেন, রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে আওয়ামী লীগ এখন লুটেরা আর টাকা পাচারকারীদের দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি এবং স্বাধীনতার ঘোষকের পরিবার সম্পর্কে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করাই এই দলটির নেতা-মন্ত্রীদের একমাত্র কাজ। এই দলটির সাধারণ সম্পাদক, আত্মীয়স্বজনদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি সম্পর্কে খোদ ওবায়দুল কাদের সাহেবের আপন ছোট ভাই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। প্রকাশ্যেই বারবার দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। অথচ ওবায়দুল কাদের সাহেব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি সম্পর্কে কিছু না বলে নিয়মিত বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার করেন।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যা কবলিত। সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ পনেরটি জেলার ৯৫টি উপজেলা এবারের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা কবলিত মানুষ চরম দুর্ভোগের আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় কিছুটা পানি নামতেই মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে পেটের পীড়া-ডায়রিয়া-কলেরা-রোগ বালাই।
নিজেদের বাড়িঘরের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। কেউ কেউ এলাকায় ফিরে বিধ্বস্ত ও শূন্য ভিটা দেখে অনেকে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। চারদিকে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। সেদিকে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২২
এমএইচ/এমজে