ঢাকা: দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না অবিলম্বে এ সংকট উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
মান্না বলেন, ১৩ বছরের সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থপাচারের কারণে দেশ আজ এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে। সরকারি হিসেবেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতোমধ্যে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। রফতানি উন্নয়ন তহবিলের নামে সরকারের মদদপুষ্ট প্রভাবশালী রপ্তানিকারকদের রিজার্ভ থেকে দেওয়া সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে অংকটা দাঁড়ায় ৩২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। বিলাস পণ্য তো দূরের কথা অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্যও ঋণপত্র খুলতে পারছে না সরকার। জ্বালানির সংকট মূলত সেখান থেকেই। আর এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। লোডশেডিংকে জাদুঘরে পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া সরকার এখন নিজেই লোডশেডিংয়ের পক্ষে সাফাই গাইছে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের ভেল্কিবাজি দেখিয়ে সরকার এখন সারাদেশে দিনে ১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এখন দেশের জ্বালানি নিয়ে শঙ্কিত।
ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তার ওপর লোডশেডিংয়ের কারণে সাধারণ জীবনযাত্রা ও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমতে কমতে প্রায় ডলারের দাম এখন একশ টাকা ছুঁইছুঁই। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় হুণ্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা বাড়ছে। ইতোমধ্যে কমে গেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। বিশেষজ্ঞরা রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন। অন্যদিকে গত এক বছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে লাগামহীনভাবে। সরকার ও সরকারি দল সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের বর্তমান রিজার্ভের প্রায় সমান। অর্থাৎ এভাবে চললে আগামী এক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্য হয়ে যাবে।
দখলদার স্বৈরাচার সরকার এখনও উন্নয়নের ডামাডোল বাজাচ্ছে। সরকার নাকি বিশ্বের দেশগুলোর জন্য রোল মডেল! সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য এখন আর এ দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। তবে বর্তমানে সরকারি হিসেবেই দেশের অর্থনীতি চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও এখন শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির এ সংকট তৈরি করেছে অবৈধ ভোট ডাকাত সরকার। তাদের লুটপাট, দুর্নীতি, পাচার আর অপরিণামদর্শীতা আজকে গোটা দেশের অর্থনীতিকে এক অন্ধকার পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে এ অযোগ্য সরকারের।
সরকারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা এ ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছেন। আপনাদেরই এ পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। আমি অনতিবিলম্বে এ সংকট উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২২
এমএইচ/আরবি