ঢাকা: দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান।
ভোলায় পুলিশের গুলিতে দলীয় কর্মী আব্দুর রহিমের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে নেতাকর্মীরা হরতাল হরতাল বলে চিৎকার করলে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা রাস্তা দখল করতে রাজি আছেন? রাস্তায় না নামলে কিছু হবে না, রাস্তা দখল করতে হবে। আপনারা সবাই রেডি হয়ে যান, তৈরি হন। আমরা এই ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী সরকারকে টেনে হিঁচড়ে নামাব এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব- এটা হোক আজকে আমাদের শপথ। এ সময় কর্মীরা হরতাল, হরতাল শ্লোগান দিতে থাকলে তিনি বলেন, হরতাল দেওয়ার আগে আপনার রাস্তা দখল করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া চলবে না। এখন আমাদের দাবি একটাই- একদফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি। আসুন সেই এক দফা আদায়ের লক্ষ্যে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে, জনগণের প্রতিনিধিদেরকে পার্লামেন্টে পাঠানোর লক্ষ্যে, আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যিনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখন সুদূর ৮ হাজার মাইল দূর থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা বিশ্বাস করি, তার সফল নেতৃত্বে এদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা প্রতিফলিত হবে এবং দেশকে অবশ্যই অবশ্যই মুক্ত করতে সক্ষম হব। আগামী বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) থেকে বিএনপির প্রতিটি অঙ্গসংগঠন বিক্ষোভ করবে উল্লেখ করে পরবর্তিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
ভোলার ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভোলায় গত রোববার (৩১ জুলাই) পুলিশের গুলিতে আমাদের এক সহকর্মী নিহত হয়েছেন। যে ভোলা বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এক শান্তিপ্রিয় একটি জেলা। আমরা কখনো শুনিনি সেখানে রক্ত ঝরেছে পুলিশের গুলিতে। সেই ভোলায় সম্পূর্ণ বিনা কারণে, বিনা উস্কানিতে জনগণের দাবি নিয়ে সমাবেশ চলছিল, সেখানে অতর্কিতে পুলিশ আক্রমণ করে। গুলি করে আব্দুর রহিমকে হত্যা করে। সোমবার (১ আগস্ট) আমি গিয়েছিলাম আরেকজন সহকর্মী ভোলা ছাত্র দলের সভাপতি নুরুল আলমকে হাসপাতালে দেখতে…। তিনি আইসিইউতে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আব্দুর রহিমের মা সোমবার যখন মর্গ থেকে তার মরদেহ নিতে যান সেখানে বুকফাটা চিৎকার করতে করতে বলছিলেন, আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও। বাংলাদেশে এটা নতুন নয়। আমরা গত ১৪/১৫ বছরে সেটাই দেখছি। গুম হয়ে যাওয়া ইলিয়াস আলীর মেয়ে এখনো দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে কখন তার বাবা বাসায় ফিরে আসবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখনো বলে আমি আবার বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, আমাদের নেতা-কর্মীরা হাজিরা দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের চেহারা।
তিনি বলেন, আজকে দেখেন পুলিশ বাহিনী শুধু আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্র যন্ত্রকে সম্পূর্ণ ব্যবহার করে একতরফা হত্যা-নির্যাতন করে চলেছে। আমরা এই বাংলাদেশের মানুষ এভাবে নিরব হয়ে বসে থাকতে পারি না। অতীত ঐতিহ্য স্মরণ করে আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যেভাবে নব্বইতে গর্জে উঠেছিল মানুষ, ৫২ সালে সালাম-বরকতের মধ্য দিয়ে গর্জে উঠেছিল, ৬৯-এ আসাদের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে গর্জে উঠেছিল, আজকেও রহিমের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে আমাদের সেইভাবে গর্জে উঠতে হবে। আমাদেরকে দখল করে নিতে হবে রাস্তা-ঘাট। যারা আজকে জোর করে রাষ্ট্র দখল করে রেখেছে তাদের তখতে-তাউস থেকে নামিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশারফ হোসেন, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, ইউসুফ মৃধা, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, মহিলা দলের নিলোফার চৌধুরী মনি, হেলেন জেরিন খান, ওলামা দলের শাহ নেছারুল হক, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ছাত্র দলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
>>>আরও পড়ুন: হারিকেন ধরারও সময় পাবেন না: শেখ হাসিনাকে ফখরুল
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড