ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনতো জি এম কাদের বলেছেন, দেশ পরিচালনায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, তেলের দাম না বাড়ালেও পারতো সরকার। ভ্যাট-ট্যাক্স না নিলে এবং জ্বালানি তেলের অর্জিত মুনাফা সমন্বয় করলেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হতো না। যে সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে মুনাফা করে কিন্তু মানুষের কষ্ট বোঝে না সেই সরকার জনগণের সরকার না।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রব্বানী রাজধানীর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টিতে যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত সভায় জি এম কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গণবিরোধী সরকার মানুষের কষ্ট বোঝে না। সরকার বিভিন্নভাবে মুনাফা করে, উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুণ্ঠন করছে। সরকার মুনাফার টাকা ব্যাংকে রাখছে, নামে-বেনামে সেই টাকা ঋণ করে বিদেশে পাচার করছে একটি শ্রেণি। প্রজাতন্ত্রের নামে দেশে এক ব্যক্তির শাসন তৈরি হয়েছে। গণতন্ত্রের নামে দেশে স্বৈরাশসন চলছে। উন্নয়নের নামে দেশে ঘুষ ও দুর্নীতির জোয়ার বইছে।
জি এম কাদের বলেন, গেল বছর শুধু সুইস ব্যাংকেই বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা। আমেরিকা, কানাডা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশে আরও অনেক টাকা পাচার হয়েছে। তথ্য চাইলেই সুইস ব্যাংক তথ্য দিচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশ সরকার পাচারকারীদের তথ্য চাচ্ছে না। কারণ যারা টাকা পাচার করেছে তারা সরকারে ও সরকারি দলের লোক। তারা যেন পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত না হয় সেজন্যই পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশ করছে না সরকার। সরকার বলছে ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে কিন্তু সেই তথ্যে গলদ রয়েছে। ডলারের দাম ১২৩ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, সংসদে আমরা কথা বললে কাজ হয় না। আমাদের পরামর্শ, কথার কথা হয়ে গেছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। আবার পরিচালন ব্যয় ট্যাক্সের ওপর নির্ভরশীল। ট্যাক্স আদায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হলে বেতন-ভাতা পরিশোধে ঝামেলা হতে পারে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, লোডশেডিং কেন? উৎসব করা হলো আমরা নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ? আমরা যখন বলেছি দেশ শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, তখন সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হলো আমি নাকি অশিক্ষিত। তাহলে এখন লোডশেডিং কেন? সারাদিন বিশ্বব্যাংক, আইএমনএফ এবং এডিবিকে গালাগাল করে এখন কেন ঋণের জন্য তাদের পেছনে ধর্ণা দিতে হচ্ছে? কেন এ অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলো? বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই কুইক রেন্টাল, রেন্টাল এবং ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
জি এম কাদের বলেন, দেশে বিরাজনীতিকরণ চলছে। রাজনীতি চিরতরে ধংসের পাঁয়তারা চলছে। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতার বিপরীতে প্রতিহিংসা শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনে যারা পরাজিত হবে তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে আওয়ামী লীগের নিশ্চিহ্ন হবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এমন রাজনীতি চাই না, আমরা চাই সহনশীল পরিবেশে রাজনীতি। আমরা রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চাই।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দেশে চিকিৎসা নেই বললেই চলে। হাসপাতালের মেঝেতে, বারান্দায়, সিঁড়িতে ও বাথরুমেও রোগীরা শুয়ে থাকে। কিন্তু সু-চিকিৎসা পায় না।
তিনি বলেন, আমরা পানির নিচ দিয়ে ট্যানেল, ফ্লাইওভার ও মেগা প্রকল্প আর চায় না। আমরা চাই, প্রতিটি উপজেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল। যেখানে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষ সু-চিকিৎসা পায়।
সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রব্বানীর সঙ্গে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ আলী, সামছুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, আব্দুল হান্নান তালুকদার, মতিউর রহমান তালুকদার, ইউপি সদস্য আব্দুল হাদি, আব্দুল হাকিম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা লিয়াকত আলী খান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
এসএমএকে/আরবি