ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশ যাবে কোন পথে ফয়সালা হবে রাজপথে। এই ফয়সালা করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে মহানগর দক্ষিণ ও মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত বিশাল সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ট্রাককে একত্রিত করে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। দুপুর ২টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় বিকেল ৬টার পর। ফকিরাপুলের মোড় থেকে কাকারাইল পর্যন্ত পুরো সড়ক ও ফুটপাতে হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই স্বৈরাচারী, লুটেরা, ভোট ডাকাত, ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কথা আপনাদের (নেতাকর্মীদের) বলেছেন, ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। এই ফয়সালা করতে প্রস্তুত বিএনপি ও তার সহযোগীগুলো।
তিনি বলেন, এদেশে যখন গণতন্ত্র ছিল না, তখন সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে। এরপর স্বৈরাচার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এদেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। আর আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা কোনো দিন গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে বিএনপিকে সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করতে হবে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে চাল, ডাল, তেল সব কিছুরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরেকদিকে বিদ্যুতের যে সমস্যা সেটা আরও বাড়ছে। এই সরকার আমদানি করার জন্য, দুর্নীতি ও চুরি করার জন্য আমার দেশে যে গ্যাস আছে সেই গ্যাস উত্তোলনের জন্য তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাদের নিজস্ব লোকদের দিয়ে গ্যাস আমদানির ফলে আজকে বিদ্যুতের দামও অনেক বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে তাদের ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। রপ্তানি থেকে গত ৭ বছরে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে হিসাব আছে ২৪০ বিলিয়ন ডলারের। আমাদের প্রশ্ন বাকি ৩০ বিলিয়ন ডলার কোথা গেলো? কারা নিয়ে গেলো? তা জনগণ জানতে চায়।
সমাবেশে যোগদানের সময়ে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমি বলতে চাচ্ছি, গত তিন বছরে এদেশের ৫৪ হাজার কোটি টাকা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। এখনো লোডশেডিং চলছে, আমরা বিদ্যুত পাই না। কিন্তু কুইক রেন্টালের টাকা বন্ধ নেই, ওদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। কার টাকা যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে কোনো খবর নেই। গত ১০ বছরে পাচার হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা। এভাবে দেশটাকে আজকে আওয়ামী লীগ দেউলিয়ার পথে নিয়ে গেছে। এই দেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের কোনো কথা নেই আমাদের দাবি একটাই- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে….। আমরা যখন রাস্তায় নেমেই গেছি। আমরা দাবি আদায় না করে যাবো না।
ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বাংলাদেশ আজ লুণ্ঠিত। এই দুর্নীতিবাজ সরকারের লুণ্ঠন থেকে দেশকে রক্ষা করা এখন সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক বিএনপির ওপর একটা ঈমানি দায়িত্ব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খান রিতা, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন।
সমাবেশে নিতাই রায় চৌধুরী, ফজলুর রহমান, আতাউর রহমান ঢালী, আবদুল কুদ্দুস, মাহবুব উদ্দিন খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতার, নেওয়াজ হালিমা আরলি, হেলেন জেরিন খান, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মাশুকুর রহমান মাশুক, শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, আমিরুজ্জামান শিমুল, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলসহ সহযোগী সংগঠন ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
এমএইচ/আরআইএস