ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে বনানীস্থ কার্যালয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে একথা বলাই যায়। একই নির্বাচন কমিশন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারলেও দলীয় সরকারের অধীনে তা সম্ভব হয়নি। কারণ, কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রার্থীদের সঙ্গে অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনে হলে কখনোই লেভেল প্লেইং ফিল্ড হয় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী সমতা, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, দুর্নীতিতে দেশ ভেসে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী, আমলা আর রাজনীতিবিদদের একটি চক্র ব্যবসার নামে দেশে লুণ্ঠন করছে। রাজনীতির অবস্থা এমন হয়েছে যে, নির্বাচনে যারা পরাজিত হবে, তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেশের মানুষ এমন রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চায় না।
তিনি আরও বলেন, কেউ দেশ ও মানুষের কথা বললেই তাকে দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে।
এ সময় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, ‘এমন বাংলাদেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। দেশে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা নেই। গণভবনের একজন কর্মচারীর যে সম্মান আছে, তা এখন মন্ত্রী ও এমপিদেরও নেই। সরকারি কর্মচারীরা এখন লাগামহীন। মানুষের সম্মান ও মর্যাদার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এভাবে দেশ চলতে পারে না।
তিনি বলেন, মানুষের মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের জন্যই এখন কট্টর বিএনপি ও কট্টর আওয়ামী লীগ থেকে সম-দূরত্ব বজায় রেখে সব রাজনৈতিক শক্তিকে একই মোহনায় হাজির করতে হবে।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন গণতন্ত্রমনা একজন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক। তিনি রক্তপাতহীনভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন, ঠিক তেমনিভাবেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন আর কারও জোটে নেই। কারো বি-টিম হয়েও রাজনীতির মাঠে নেই। নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে জাতীয় পার্টি এগিয়ে চলছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেনি, প্রতিবাদ করেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। বঙ্গবন্ধুর জন্য কাদের সিদ্দিকীর মত এত ত্যাগ আর কারো নেই।
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন ধার করে মানুষ এনে মন্ত্রী বানাতে হচ্ছে তাদের।
কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেছেন, পল্লীবন্ধু একজন সৈনিক থেকে রাজনীতিতে এসে উন্নয়নের ইতিহাস রচনা করেছেন। দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ঐতিহ্য আছে।
কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেছেন, দেশে সোনা এখন তামা হয়ে যাচ্ছে, রড হচ্ছে বাঁশ আর ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
এসএমএকে/আরআইএস