ঢাকা: বিএনপির বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নেওয়ায় উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে রাজপথের এই অবস্থান অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ।
সরকার পতনে বিএনপি ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগও বিএনপির এ আন্দোলনকে রাজপথে মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সব সংঘর্ষের ঘটনা ইতোমধ্যে রক্তক্ষয়ী পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ঢাকার বনানী ও মিরপুর এবং মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভোলাসহ ২০টির বেশি জেলায় এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপির অভিযোগ তাদের কর্মসূচিতে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ হামলা চালাচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনের নামে বিএনপি সন্ত্রাস ও সহিংসতা চালাচ্ছে, পুলিশের ওপরে হামলা করছে। নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামছে। অতীতে যেভাবে বিএনপি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল, আবারো সেই ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। বিএনপি যাতে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারে, পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যেতে না পারে এ কারণে আগে থেকেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির এ সহিংসতা নৈরাজ্য প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো রাজপথের অবস্থান অব্যাহত রাখবে বলে দলের নীতি নির্ধারকরা জানান।
গত ২১ সেপ্টেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের নামে রাজপথে আবারও সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি। আজকাল বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠির সাথে জাতীয় পতাকা দেখা যাচ্ছে, এটা কীসের আলামত?
এর আগের দিন ২০ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা মাঠ ছাড়ব না। রাজপথ দখলে নিতে হবে, সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। আপনারা (বিএনপি) ফাঁকা মাঠে তাফালিং করবেন আর আওয়ামী লীগ আঙুল চুষবে, এটা মনে করবেন না।
বিএনপির অব্যাহত কর্মসূচি এবং আওয়ামী লীগের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি আগুন-সন্ত্রাসের পথেই হাঁটছে। অতীতের মতো তারা আবারও দেশে আগুন-সন্ত্রাস চালাতে চায়। তারা সেটারই মহড়া দিচ্ছে। মনে আছে ২০১৩ সালে গাইবান্ধায় পুলিশের গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছিল। সর্বশেষ মুন্সিগঞ্জেও সেই ঘটনা ঘটাতে পুলিশের ওপরে হামলা করেছে। একইভাবে পুলিশকে পিটিয়েছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করবে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারা অবশ্যই এ ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে এবং অবস্থান অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে যুবলীগ সেপ্টেম্বরের শুরুতেই ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে সংগঠনটি। রাজধানীতে যুবলীগ ঢাকা মহান উত্তর ও দক্ষিণ এলাকা ভিক্তিক বিক্ষোভ সমাবেশ করছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, আজ থেকে আমরা মাঠেই থাকবো, মাঠে থেকেই আপনাদের সকল নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র আর হিংসার জবাব দেবো। যদি বিএনপি-জামায়াত এদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটায়, জনগণের বন্ধু পুলিশের ওপর হামলা করে, জনগণের জান-মালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে যুবলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মী রাজপথে থেকে তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে।
এরপর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে যুবলীগ। গত ২২ সেপ্টেম্বর শ্যামলীতে, তার আগে মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, সবুজবাগ, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, শ্যামপুর, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সংগঠনটি। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে মিপুর ১ নম্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
এসকে/এমজেএফ