ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, বিএনপি দুটি কথা বলে। একটা হলো- সংবিধান পাল্টানো দরকার, আরেকটা পাকিস্তান সরকারই ভালো ছিল।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদ আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে শান্তি এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা ও স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এরশাদ আমলে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা মো. ময়েজউদ্দিনের স্মৃতিচারণ করে বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, তিনি সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নামে আগরতলা মামলা হওয়ার পর সেই সময়ে আওয়ামী লীগের এত বিত্ত ছিল না। উকিলরা টাকা দেওয়া ছাড়া মামলা চালাবেন না। তিনি উকিল নিয়ে মামলা চালিয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি অর্থ কমিটি করেন। পরে তিনি ওই কমিটির আহ্বায়ক হন। পরে তিনি সংসদ সদস্য হন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।
আজকে আমি বলতে চাই, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি সোচ্চারভাবে বঙ্গভবনে গিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন।
মাঝখানে কিছুটা সময় তিনি অন্য ভাবধারায় থাকলেও শেখ হাসিনা দেশে এসে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন। কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। গাজীপুরে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা ঠিক করার জন্য তিনি বারবার সেখানে যান।
আমু বলেন, আজকে আমরা তার মৃত্যু দিবস পালন করছি। এ সময়ে এসে আমরা অবাক হয়ে যাই। ময়েজউদ্দিনের হত্যাকারী আজম খানকে এরশাদ পুত্রতুল্য স্নেহ দিয়েছিলেন। তারা আজকে বড় বড় কথা বলে। ৮৬ সালে এরশাদ আমলে ১২ দিন নির্বাচনের ফল স্থগিত রাখা হয়। তারা আজকে গণতন্ত্র শেখাতে চায়।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবং তার প্রার্থীদের মানুষ ভোট দেবে। কোনো ষড়যন্ত্র নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে সন্ত্রাস আমদানি করেছিলেন। শফিউল আলম প্রধানকে তিনি রাজনীতিতে এনেছিলেন। ময়েজউদ্দিন সাহেবের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি তাকে আবার রাজনীতিতে এনেছেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সন্ত্রাসকে রাজনীতিতে আনার ক্ষেত্রে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।
তিনি বলেন, আজকে যারা নির্বাচনে আসতে চায় না, তাদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে হবে। এরা আন্তর্জাতিকভাবেই চিহ্নিত সন্ত্রাসী দল। এরা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। এ অপশক্তিকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, ময়েজউদ্দিন সাহেব যে কর্মীদের প্রতি এত অন্তঃপ্রাণ ছিলেন। তাকে এটাক করা হয়েছিল। আমার সঙ্গে তার পরিচয় ৬০-এর দশকে। সে সময় তিনি কমলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি কিছু পরোয়া করতেন না। অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মোশতাক যখন নেতাদের ডেকে সংগঠিত করেছিলেন। তখন বর্তমান আইনমন্ত্রীর বাবা সিরাজুল হক এবং ময়েজউদ্দিন সরাসরি তাকে বলেছেন, তুমি খুনি। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আপসহীন ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আমার বাবা সব সময় বলতেন রাজনীতি হলো সমাজসেবার সব চাইতে বড় প্ল্যাটফর্ম। তাকে থানার সামনে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। আসামিদের মধ্যে ১৩ জনের থেকে ১২ জনকে বিএনপি রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর একজন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। আমি গর্বিত এমন বাবার সন্তান হতে পেরে।
শহীদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠাবে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
এর আগে শহীদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের সভাপতি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। সভায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
এমকে/আরবি