শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে খুলনা নগরের বিএমএ’র কাজী আজাহারুল হক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে খুলনার প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটি।
দুর্নীতিতে জর্জরিত এ অঞ্চলের নাগরিকদের পক্ষে দাঁড়ানোর প্রয়োজনে ‘ওজোপাডিকোর প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী সোমবার (১৭ জুন) বেলা ১১টায় নগরের পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন, বুধবার (১৯ জুন) খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্যের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া, বৃহস্পতিবার (২০ জুন) জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কাছে স্মারকলিপি দেওয়া এবং ২০ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত কেসিসি মেয়র ও সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওজোপাডিকোর প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিটি গঠন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম।
তিনি বলেন, সরকার প্রধান যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বারবার ঘোষণার কথা উচ্চারণ করছে ঠিক তখনই ২১ জেলা নিয়ে গঠিত ওজোপাডিকো গ্রাহকদের জোর করে প্রি-পেইড মিটার চাপিয়ে দিয়ে নানা দুর্নীতির মাধ্যমে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করে চলেছে। ওজোপাডিকো এতোটাই বেপরোয়া যে, নাগরিকদের কোনো কথায় তারা কর্ণপাত করছে না।
সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে খুলনায় প্রি-পেইড মিটার বসানো শুরু হলে আগের ডিজিটাল মিটার অকেজো হয়ে পড়ে, অথচ আগের ডিজিটাল মিটার ক্রয় করতে গ্রাহকদের এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ বহন করতে হয়েছে। গ্রাহকদের বিপুল অঙ্কের টাকা অপচয় করার অধিকার কারও নেই, এর দায় ওজোপাডিকো গ্রহণ করে গ্রাহকদের ডিজিটাল মিটারের টাকা পরিশোধ করতে তারা বাধ্য। এরই সঙ্গে বর্তমান প্রি পেইড মিটারে রয়েছে অনেক অস্বচ্ছতা, যা নাগরিকদের মনে দুর্নীতির সন্দেহ সৃষ্টি করছে।
ওজোপাডিকোর বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিনামূল্যে প্রি পেইড মিটার দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে সিঙ্গেল ফেজ মিটারে ৪০ টাকা ও থ্রি ফেজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা প্রতি মাসে কেটে নিচ্ছে ওজোপাডিকো।
আবার প্রি পেইড মিটার রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে রিচার্জের টাকা ও বিভিন্ন খাতে কেটে নেওয়া টাকার মধ্যেও ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। ওজোপাডিকোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতোটাই বেপরোয়া যে, গ্রাহকরা এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা চাইলে তারা উত্তেজিত হন এবং অনিহা প্রকাশ করেন। গ্রাহকরা সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, ওজোপাডিকোর ব্যবহৃত সফটওয়্যার এমনভাবে তৈরি যা গ্রাহকের রিচার্জের টাকা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে ত্রুটিযুক্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত।
মিটার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রথম রিচার্জে সঠিক বিল আসলেও পরবর্তী মাস থেকে শুরু হয় অধিক বিলের ভোগান্তি, এ সবই সফটওয়্যার কারসাজি বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। এছাড়া প্রত্যেক গ্রাহকের বিল থেকে ভ্যাট কেটে নেওয়া হচ্ছে ৫ শতাংশ। কিন্তু গ্রাহকদের কোনো কর চালান পত্র দেওয়া হয় না। যেখন ভ্যাট চালান পত্র সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে জমা দিতে হয় সেখানে এভাবে ভ্যাট কেটে নেওয়ার কোনো বিধান নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, প্রি পেইড মিটারে গ্রাহকদের প্রতি সবচেয়ে নিষ্ঠুর আচরণ হলো মিটার লকিং ও লক ওপেনিং পদ্ধতি। নতুন ধরনের পদ্ধতিতে কোনো ধরনের ট্রেনিং ছাড়া প্রি পেইড মিটার অপারেট করতে গিয়ে গ্রাহকদের মিটার অনিচ্ছাকৃতভাবে লক হয়ে যাচ্ছে। যা খুলতে বন্ধ ব্যতিত কর্মদিবসে ওজোপাডিকোর দারস্থ হতে হয় এবং দিতে হয় অর্থ দণ্ডও।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করনে সংগঠনের সদস্য সচিব সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন ও যুগ্ম-সদস্য সচিব শাহ মামুনুর রহমান তুহিন।
সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য রাখেন খুলনা উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যানও কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন ও মোড়ল নুর মোহাম্মদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা কমিটির নেতা মিজানুর রহমান বাবু, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ মফিদুল ইসলাম, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা খালিদ হোসেন, ন্যাপের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার রায়, গণতান্ত্রিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কামাল হোসেন জোয়ার্দার, সাবেক ছাত্রলীগ ফোরামের আহ্বায়ক শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাতক্ষীরা নাগরিক মঞ্চের শেখ মো. ওবায়েদুস সুলতান বাবলু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৯
এমআরএম/আরআইএস/