গত রোববার (৩০ জুন) বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকের জন্য গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসি। সোমবার (০১ জুলাই) থেকে কার্যকর হয় নতুন এই মূল্য।
এরইমধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়ে গেছে বলে দাবি করেন নাহিদ আহসান নামে মিরপুরের এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, গুলশানে অফিসে যাওয়ার জন্য অটোরিকশা খুঁজছি। গতকালও ১৮০ টাকায় গিয়েছি। আজ আড়াইশ টাকা চাইছে। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে গ্যাসের নাকি দাম বেড়েছে। অটোরিকশাতো এখন মিটারেও চলে না। আগেও বেশি ভাড়া ছিল এখন আরও বাড়লো। আমরা বেসরকারি চাকরি করি। আমাদের বেতনতো বাড়ে না। সরকারের ফাইলে মনে হয় আমাদের মতো মানুষদের কোনো অস্তিত্ব নেই। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে বলেও আশংকা নাহিদের।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং বাড়ি ভাড়া বাড়ার দুশ্চিন্ত রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকার গৃহিণী জান্নাতাউল ফেরদৌসের। তিনি বলেন, এমাসের মাসিক বাজার নিয়ে চিন্তায় আছি। বাজারে গেলেই দেখবো সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আর দোকানিরা অজুহাত দেবেন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির। বাড়িওয়ালাও বসে থাকবেন না। এমাসের ভাড়া নিতে এলে তিনিও হয়তো ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলবেন।
এদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। করের বোঝার মতো এটিকেও একটি বোঝা বলছেন তারা। আমিন আহমেদ আফসারী নামের উত্তরার এক ব্যবসায়ী বলেন, এমনিতেই বিভিন্ন করের বোঝায় আমরা জর্জরিত। সাধারণ মানুষের ওপর আরেকটি বোঝা চাপিয়ে দিলো সরকার। সরকার তার অর্থব্যয়ে মিতব্যয়ী হতে পারছে না; বিভিন্ন প্রকল্পে বিনা কারণে অনেক অর্থ নষ্ট হচ্ছে, আর তার খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা বিলাসবহুল গাড়ি পাচ্ছেন আর আমরা সেই বিলাসের খরচ জোগাচ্ছি।
অন্যদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মাহবুব রহমান এবং কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এতে করে মানুষের জীবনযাপনের মান ও ব্যয় বেড়ে যাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে সবকিছুর দাম বাড়বে। মানুষের যাতায়াতের খরচ বাড়বে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষমতাও হ্রাস পাবে। আয় আর ব্যয়ের হিমশিমের মাঝেই থাকবেন তারা।
গোলাম রহমান আরও বলেন, এই মুহূর্তে গ্যাসের দেশীয় যে উৎপাদন তা দিয়ে চাহিদার পূরণ হচ্ছে না। ফলে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি (লিক্যুইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানি করছে। সরকারকে বেশি দামে এলএনজি কিনতে হচ্ছে ফলে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েই সেটি বিক্রি করতে হচ্ছে। আমদানি করা গ্যাস দিয়ে চাহিদা মেটানো হয়তো সাময়িক সমাধান কিন্তু সরকারকে দেশের ভেতরেই বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে হবে। একই সঙ্গে গ্যাস ও জ্বালানি সেক্টরে যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা আছে সেগুলো বন্ধ করতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। নইলে আমদানি নির্ভর গ্যাস দিয়েও মূল্য নাগালের মধ্যে রাখা যাবে না।
বিইআরসি সচিব রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওইদিনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, গৃহস্থালি গ্রাহকদের এক বার্নার চুলার মূল্য নতুন করে নির্ধারিত হয়েছে ৯২৫ টাকা। আর দুই বার্নার চুলার মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৯৭৫ টাকা। এর আগে এক ও দুই বার্নার চুলার মূল্য ছিল যথাক্রমে ৭৫০ ও ৮০০ টাকা।
এছাড়াও গৃহস্থালি পর্যায়ে যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৬০ পয়সা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে সিএনজিচালিত যানবাহনের গ্যাসের দামও। ৩৮ টাকা থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে সিএনজির দাম।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস প্রতি ঘনমিটার ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, সার কারখানায় ৪ টাকা ৪৫ পয়সা এবং শিল্প কারখানা ও চা বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এর ধারা ২২(খ) এবং ৩৪ অনুযায়ী এই মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানানো হয় কমিশনের পক্ষ থেকে। সোমবার (১ জুলাই) থেকেই কার্যকর হবে নতুন এই নির্ধারিত মূল্য।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস