শনিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এ পরামর্শ দেন।
দৈনিক কালের কণ্ঠের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ এলপিজির নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ’ এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
সভায় এলপি গ্যাস নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে এলপিজির ডিলার-গ্রাহকদের নিয়ে কর্মশালা করা এবং হুসপাইপ ও রেগুলেটার সিলিন্ডারের সঙ্গে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠক সঞ্চালনা করেন কালের কন্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সংসদ সদস্য (এমপি) নূরুল ইসলাম তালুকদার, এলপিজি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লেয়াব) সভাপতি আজম কে চৌধুরী, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, ইন্ডিয়ান অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কান্ট্রি ম্যানেজার তোফাজ্জল হক, জি গ্যাসের হেড অব অপারেশন নাওইদ রশিদ, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশে আদানী গ্রুপের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড কান্ট্রি হেড সৈয়দ ইউসুফ শাহরিয়ার, ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ খান প্রমুখ।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (সেলস) প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া জালাল।
স্বাগত বক্তব্যে কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, বসতবাড়িতে এখন এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে কারও ঘরে কমছে কাঠ বা খড়ির চুলার ব্যবহার। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের অনেকেই এ বিষয়ে জানেন না। তাই এলপিজির ব্যবহারে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে।
‘পাইপ লাইনে গ্যাস ব্যবহার সংযোগ বন্ধ ও শিল্প-কারখানায় গ্যাস নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়িতে সিএনজি দেওয়া হচ্ছে। এটি ঠিক নয়। ’
তিনি বলেন, সারা দুনিয়ায় এলপি গ্যাস একটি জনপ্রিয় জ্বালানি। বাংলাদেশেও এর দ্রুত প্রসার হচ্ছে। এলপিজির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে এ শিল্পের আরো প্রসার হবে।
বৈঠকে নূরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এলপিজি ব্যবহারে নিরাপত্তার বিষয়ে ঢালাওভাবে গ্রাহকদের দোষ দিলে চলবে না। কোম্পানিগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তারা সিলিন্ডারের সঙ্গে মানসম্মত রেগুলেটর হুসপাইপের ব্যবস্থা করতে পারে।
‘একই সঙ্গে সিলিন্ডারের সঙ্গে বাংলায় এর ব্যবহার বিধি দেওয়াসহ গ্রামের মানুষদের সচেতন করতে পারে। তাহলে সিলিন্ডার থেকে যে দুর্ঘটনা ঘটে তা কমে আসবে। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। ’
আজম কে চৌধুরী বলেন, দিন দিন এলপিজির ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। গত পাঁচবছর আগে এর ব্যবহার ছিলো মাত্র ৮০ হাজার মেট্রিকটন। ২০১৭ সাল থেকে বসতবাড়িতে এলপিজির ব্যবহার বেড়ে গেছে। আগামী দুইবছরে এর ব্যবহার আরো বাড়বে। তবে আগামী ৫ বছরে এলপিজির ব্যবহার বেড়ে ২ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এলপিজি ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। তবে ব্যবহারে নিরাপত্তার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এজন্য সিলিন্ডারে গ্যাস ফিলিং, আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বনের পাশাপাশি উদ্যোক্তাসহ গ্রাহকদের এলপিজি ব্যবহারে আরো সচেতন হতে হবে।
‘বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্ট্যান্ডার্ড মান না মেনে সিলিন্ডার তৈরি হচ্ছে। ফলে কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়গুলো নজরে আনতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ’
এলপিজির দাম কমানোর প্রসঙ্গে লোয়াব-এর সভাপতি বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দরে বর্তমানে যে ৩ হাজার টনের বাল্ক (জাহাজ) আসে ড্রেজিং করলে সেখানে ৬ থেকে ৭ হাজার টনের বাল্ক আসবে। এতে এলপিজি আমদানিতে ৬০ থেকে ৭০ ডলার দাম কমানো সম্ভব।
‘এজন্য দ্রুত বন্দরের নদীতে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এলপিজির সঙ্গে রাজউককেও (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সম্পৃক্ত করতে হবে। রাজউক যেখানে নতুন নগর তৈরি করবে সেখানে পাইপে এলপিজি সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করবে। ’
ইন্ডিয়ান অয়েলের তোফাজ্জল হক বলেন, এলপিজি গ্যাসের সামনে কোনো বাধা নেই। শুধু সুযোগ রয়েছে। এজন্য গ্রামের মানুষকে এলপিজি বিষয়ে সচেতন করতে হবে। যার দায়িত্ব নিতে হবে কোম্পানিকিই।
‘দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে ধরা যায় হুসপাইপ ও রেগুলেটর মানসস্মতভাবে তৈরি হয় না হওয়াকে। তাই একটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে কোম্পানিগুলোকে তৈরি করে গ্রাহকদের দিতে হবে নিজেদের স্বার্থে। কারণ গ্রাহকদের সুরক্ষাই তাদের সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। ’
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ খান বলেন, এলপিজি ব্যবহারে ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে প্রচারণা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
‘গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। একই সঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে আরও অ্যাকটিভ হয়ে প্রচারণা চালাতে হবে এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে। কেননা এলপিজি নিরাপত্তায় সচেতনতাই সবচেয়ে বড় বিষয়। ’
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, এলপিজির বাজারজাত করার জন্যই প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই আমাদের প্রতিযোগিতা মূল্যে এলপিজি দিতে হবে। এখাতে প্রতিযোগী বাড়লে আমরা কম দামে এলপিজি ব্যবহার করতে পারবো।
‘দুর্ঘটনা এড়াতে ডিলারসহ গ্রাহকদের নিয়ে কর্মশালা করার পাশাপাশি হুসপাইপ ও রেগুলেটর সিলিন্ডারের সঙ্গে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ’
ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য এলপিজি ও পাইপ লাইনে গ্যাসের দামের বৈষম্য কমাতে হবে। কারণ এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও এলপিজি চলে গেছে।
‘সিলিন্ডারের দাম কমাতে কোম্পানিগুলোকে প্রণোদনা দিতে হবে। নিরাপত্তা বিষয়ে অসচেতনাতার জন্যই দুর্ঘটনা ঘটে। তাই সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ভূমিকা হতাশাজনক। ’
এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন বলেন, ঢাকায় বসে এলপিজি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রচার করলেই চলবে না। এজন্য আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চায়ের দোকান পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে হবে।
জি গ্যাসের নাওইদ রশিদ বলেন, অবকাঠামোগত দুর্বলতার জন্য এলপিজির দাম কমানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি বাড়িঘরগুলো বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি হওয়ায় দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। এজন্য রাজউকসহ সবাইকে একসঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
জিসিজি/এমএ