অভিযোগ রয়েছে, আইনের তোয়াক্কা না করে মহানগরীর রূপসা মতিয়াখালী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসুন্ধরাসহ একাধিক ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসের খালি সিলিন্ডার মজুদ রেখে তাতে এলপি গ্যাস ভর্তি করে বাজারজাত করে আসছে খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি লিমিটেড।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনা অক্সিজেন কোম্পানির কার্যালয় ও এর পাশে টিনসেড ঘরে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডসহ ৯টি কোম্পানির কয়েক হাজার খালি সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, খুলনা অক্সিজেন লিমিটেডের মালিকানাধীন অপর প্রতিষ্ঠান সুপার গ্যাস লিমিটেডকে ঢাকার গাজীপুরে এলপি গ্যাস বোতলজাত করার প্ল্যান্ট করার প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর। তবে এখনো কোম্পানিটিকে চূড়ান্তভাবে এলপি গ্যাস বোতলজাত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
কিন্তু সুপার গ্যাস লিমিটেড অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে বিপজ্জনকভাবে খুলনা শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় তাদের অক্সিজেন কোম্পানিতে এলপি গ্যাস ফিলিং ও বাজারজাত করে আসছে।
এ বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. সামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এলপি গ্যাস রিফিল করার সুযোগ নেই। এই অনুমোদন কোনো প্রতিষ্ঠানকেই দেওয়া হয়নি। সুপার গ্যাস লিমিটেডের এলপি গ্যাস বোটলিং প্ল্যান্টের প্রাথমিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে গাজীপুরে।
‘খুলনায় তাদের (এলপি গ্যাস) ফিলিং করার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। চূড়ান্ত অনুমোদন না থাকায় এই মুহূর্তে তারা গাজীপুরেও ফিলিং করতে পারবে না। আর খুলনা অক্সিজেন কোম্পানিতে ফিলিং করলে তা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। ’
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার (২১ আগস্ট) রাতের আঁধারে ও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত খুলনা অক্সিজেন কোম্পানির অভ্যন্তরে মজুদ থাকা কয়েক হাজার খালি ও ভরা সিলিন্ডার একাধিক ট্রাকে করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এখানে ক্রস ফিলিংয়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে কম গ্যাস ভর্তি করে বাজারজাত করা হতো। এতে প্রতি সিলিন্ডারে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। বাজারে প্রচলিত বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাসের বর্তমান পাইকারি মূল্য (ডিও) ৮৭০ টাকা। কিন্তু গ্যাস কম দেওয়া সিলিন্ডারগুলো ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করেও তারা মোটা অংকের মুনাফা করছে। এতে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এলপি গ্যাসের বাজার দর। একই সঙ্গে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈধ এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা অক্সিজেন কোম্পানিতে অবৈধভাবে বোতলজাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এলপি সিলিন্ডার খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলা ও উপজেলা শহরের বাজারগুলোতে বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে তুলনামূলক দুর্গম এলাকার বাজারে বিক্রির পরিমাণ বেশি। নির্দিষ্ট কিছু ডিলার এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাদের বাইরে অন্য কারো কাছে বিক্রি করা হয় না।
পরিবেশবি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের ফিলিং প্রক্রিয়া যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনই এই কোম্পানির গ্যাসের ব্যবহারও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এর কারণ, অনুমতিপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো স্বয়ংক্রিয় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এলপি গ্যাস বাজারজাত করে। আর চক্রটি করছে যেনতেন প্রক্রিয়ায়। যে কারণে বাড়ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা। এ ধরনের চক্র বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনাও অহরহ ঘটছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলপি গ্যাস অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাব কমিটির কনভেনর ইঞ্জিনিয়ার জাকারিয়া জালাল বাংলানিউজকে বলেন, এলপি গ্যাস ও অক্সিজেনের মিশ্রন দায্যতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অক্সিজেন উৎপাদন কারখানার মধ্যে এলপি গ্যাসের মজুদ বা বোতলজাতকরণ মহা বিপজ্জনক। এতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘোর আশঙ্কা থাকে।
‘পাশাপাশি অন্য ব্র্যান্ডের সিলিন্ডার মজুদ ও তাতে এলপি গ্যাস ক্রসফিলিং করে বাজারজাতকরণ বেআইনি কাজ। এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা খুবই জরুরি। ’
তবে যোগাযোগ করা হলে এলপি গ্যাসের অবৈধ ক্রসফিলিং ব্যবসার কথা অস্বীকার করেছেন খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক মাশসু ববি।
তার দাবি, আমরা ‘সিলিন্ডার এক্সচেঞ্জ’ এর ব্যবসা করি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খালি সিলেন্ডার মজুদ রাখা হয়। যা ডিলাররা চেঞ্জিং মানির বিনিময়ে নিয়ে যান।
তবে এখানে এলপি গ্যাস বোতলজাত করার মেশিনারীজ ও রিজার্ভার ট্যাংক স্থাপনের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় এলপি গ্যাসের অবৈধ ক্রস ফিলিংয়ের সময় বিস্ফোরণে প্রাণ হারান নবী হোসেন নামে এক দিনমজুর। এ ঘটনায় আলমগীর চৌধুরী নামে আরো একজন আহত হন।
গ্রাহকেরা জানান, ভোক্তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে অধিক মুনাফার আশায় অনেকেই এ ধরনের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। এলপি গ্যাসে ঝুঁকি কমাতে এ ধরনের ক্রস ফিলিং বন্ধ হওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
এমআরএম/এমএ