এই নবভরোনেসের মডেলের অনুরূপ বাংলাদেশের রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্প পরিচালনার জন্য নবভরোনেসের কন্ট্রোল সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরাও।
নবভরোনেস পাওয়ার প্লান্টের চারদিকে ৩ থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে অনেকগুলো গ্রাম রয়েছে। ১৯৫৭ সালে নবভরোনেসে যখন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয় তখান এখানে মাত্র দেড় শ’ পরিবার বসবাস করতো। বর্তমানে এখানে ৩১ হজার পরিবারের বসবাস। সেখানে জনসাধারণ নির্বিঘ্নে বসবাস করছেন। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে রেডিয়েশনের প্রভাব পড়ছে কি না সেটা জানার জন্য ৩ কিলোমিটারের মধ্যে চারদিকে ৩৩টি মনিটিরিং সেন্টার (পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র) রয়েছে। প্রকল্পের সীমান্তের (নির্দিষ্ট এলাকার) বাইরে এক কিলামিটারের মধ্যে জীব বৈচিত্রের ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা এর জন্য প্রতিনিয়ত ইকোলজিক্যাল রিচার্স করা হয়। পরিবেশের ওপর নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন প্রভাব ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নবভরোনেসের তথ্য কেন্দ্রের প্রধান ইউরি জানালেন, রেডিয়েশনের প্রভাব ধরা পড়লে বা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি হলে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ জন্যই এই ৩৩টি সেন্টার রয়েছে। এখানে জনস্বাস্থ্য ও জীব বৈচিত্রের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই।
এদিকে এই ৩৩টি সেন্টারের পর্যবেক্ষণে কখন, কী অবস্থা উঠে আসছে এ সংক্রান্ত সব তথ্য জনসাধারণের জানানোর জন্য সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাশিয়ার প্রত্যেকটি পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এক শ’ দুই হেক্টর জমির ওপর নবভরোনেস পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে ৭টি ইউনিট।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট পরিচালনায় যারা দায়িত্বে থাকেন তাদের প্রত্যেকেরই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। নবভরোনেস প্রকল্প পরিচালনার জন্য একটি কন্ট্রোল সেন্টার রয়েছে। এই কন্ট্রোল সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিশেষ করে সর্বশেষ যে ৩জি(+) প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ বিয়্যাক্টর পরিচালনার জন্য এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। রূপপুর পামাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়োগ পাওয়ার পর তাদেরকে এখানে পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি ব্যাচে এরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
এই কন্ট্রোল সেন্টারের প্রধান প্রশিক্ষক নিকলাই জানান, এখান থেকেই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে দেওয়া হয়। প্লান্ট চালানোর জন্য প্র্যাক্টিক্যাল ও থিওরিটিক্যাল দুই ধরণের প্রশিক্ষণই এখানে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কোর্স শেষ করার পর নবভরোনেসের এই কন্ট্রোল সেন্টারে ৬ মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের মেয়াদ নির্ভর করে টাইটেল (পদবী) ও পজিশনের (অবস্থান) ওপর। দুই থেকে তিন মাস থিওরিটিক্যাল প্রশিক্ষণের পর অপারেশনে (পরিচালনা) অংশ নেওয়ার জন্য পাওয়ার প্লান্টে পাঠানো হয়। পাওয়ার প্লান্টে ক্লাস ও প্রাকটিক্যাল দুইটাই করানো হয়। সব মিলিয়ে ৬ মাস প্রশিক্ষণ নিতে হয়। শুধু নবভরোনেসে নয় প্রতিটি প্রকল্পেই এ ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশে সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
এসকে/এজে