পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের ৫১ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন হয়েছে। এ উপলক্ষে ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি পাঁচ তারকা হোটেলে (হোটেল মিরাজেম কাসকায়েস বাংলাদেশ দূতাবাস অভ্যর্থনার আয়োজন করে।
অভ্যর্থনা হলের প্রবেশদ্বারের কাছে হোটেলের এট্রিয়ামে বাংলাদেশের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দৃশ্য সম্বলিত ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অভ্যর্থনা হলটি ফুল আর রঙিন ব্যানারে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান ও তার সহধর্মিনী এবং দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা সস্ত্রীক আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে পর্তুগালে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক মিশনের প্রধান, পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, সাংবাদিক, বাংলাদেশের শুভার্থী ব্যক্তিবর্গ এবং পর্তুগাল প্রবাসী বাংলাদেশিদের নেতৃস্থানীয় ও গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও পর্তুগালের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান স্বাগত বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের চরম আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, এবারের স্বাধীনতা দিবস আমাদের কাছে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের বছরটি সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা সমতা, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে অনুসরণ করেই বাংলাদেশ জনকেন্দ্রিক উন্নয়নে ঈষর্ণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিগত এক দশকের অধিক সময় ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখে বিশ্বের ৪২তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তি সংস্কৃতি, মাতৃভাষার অধিকার, ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের অধিকারসহ নানা বৈশ্বিক বিষয়ে সক্রিয় প্রবক্তা হিসেবে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ পর্যায়ের অংশগ্রহণ এবং মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত করেছে। বাংলাদেশের সাফল্য আর অর্জনসমূহ স্বাধীনতার এই উদযাপনকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে।
এরপর এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিকপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যুদ্ধকালীন গানের সুরে স্থানীয় বাংলাদেশি শিল্পীর উদ্দীপ্ত নৃত্য পরিবেশনা সবাইকে বিমোহিত করে।
সাংস্কৃতিক পর্বের পরে অতিথিদেরকে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাধ্যমে আপ্যায়ান করা হয়। বাংলাদেশি দেশাত্মবোধক যন্ত্রসংগীতের আবহে অতিথিরা খাবার, বিশেষ করে বাংলাদেশের মিষ্টান্ন উপভোগ করেন।
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই আয়োজন অতিথিদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এর আগে, গত শনিবার (২৬ মার্চ) দূতাবাসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতিতে রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪২ ঘণ্টা, ২৯ মার্চ, ২০২২
এমএমজেড