খুলনা: চারিদিকে ছায়াঘেরা গাছগাছালির মাঝে খুলনায় ব্রিটিশ আমলে নির্মিত টাউন জামে মসজিদটির অবস্থান। কেডি ঘোষ রোডের পূর্ব প্রান্তে খুলনা জিলা স্কুলের পশ্চিম পাশে ১৮৫৪ সালে নির্মাণ করা হয় খুলনা শহরের অন্যতম এ প্রাচীন মসজিদটি।
১৯৭৩ সাল থেকে মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করা মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ্ বাংলানিউজকে বলেন, প্রাচীন এ মসজিদটিতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) ও মসজিদ কমিটির সহযোগিতায় মিনার তৈরি করা হয়েছে। মিনারটির উচ্চতা ১৩২ ফুট।
কেসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বাংলানিউজকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ১ কোটি ৪০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে খুলনা টাউন জামে মসজিদে ১৩২ ফুট উচ্চতার মিনারটি তৈরি করা হয়েছে। মিনারটি ব্লাক স্টোন ও টাইলস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি খুলনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মিনার।
প্রথম রমজান শুক্রবার (২৪ মার্চ) বাদ জুম্মা কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক মিনারটির উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ্।
আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে এই মসজিদেই খুলনা শহরের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দোতলা এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার মানুষের নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির ঠিক পূর্ব পাশে বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবন, পশ্চিম পাশে ডিআইজির বাসভবন। আর সামনে সিভিল সার্জনের বাসভবন।
মসজিদ প্রসঙ্গে খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ হল টাউন জামে মসজিদ। এ মসজিদটি খুলনার ঐহিত্যও বটে।
মসজিদের পাশের হাজী মসসিন রোডের বাসিন্দা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অধ্যাপক সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, টাউন জামে মসজিদটি খুলনা শহরের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদ। এখানে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা জেলা প্রশাসক, ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরাসহ বরেণ্য রাজনীতিবিদরা নামাজ আদায় করেন। নানা কারণে এ মসজিদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদটিতে সুউচ্চ নতুন মিনার হওয়ায় এর সৌন্দর্য আরও বেড়েছে।
প্রাচীন এ মসজিদ সম্পর্কে ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, এটি খুলনা শহরের সবচেয়ে পুরানো মসজিদ। ভৈরব নদের পাড়ে কেডি ঘোষ রোডের পূর্ব দিকে ১৮৫৪ সালে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদটির নির্মাণশৈলী সম্পর্কে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। প্রথমে মসজিদটি ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে মাঝে মধ্যে এটি সংস্কার করা হয়েছে। একতলা বিশিষ্ট এই মসজিদে ছোট ছোট অনেক গম্বুজ ও ভেতরে চারটি অংশ এবং পাশেন একটি পুকুর ছিল। সেখানে মুসল্লিরা ওজু করতেন। পুকুরটি এখন মসজিদের আওতায় নেই। ১৯৮০-৮২ সালের দিকে শেষবার সংস্কারের সময়ে গম্বুজগুলোও রাখা যায়নি। সে সময় মসজিদটি দোতলা করা হয়। পুরোনো মসজিদটি এখন আর নেই। তবে সর্বশেষ সংস্কারের সময় আগের মসজিদের একটি বারান্দা ও একটি গম্বুজ রেখে দেওয়া হয়। গাছগাছালিতে ভরা নিরিবিলি পরিবেশের মসজিদটির সামনে মাঝারি আয়তনের একটি ফাঁকা মাঠ রয়েছে। মসজিদের সামনে রয়েছে গোলাকার স্থাপনার সুন্দর একটি ওজুখানা। সবশেষ মসজিদটির প্রবেশদ্বারের কাছেই তৈরি করা হয়েছে সুউচ্চ মিনার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
এমআরএম/এমএমজেড