ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘রমজান ঐতিহ্য’

মালয়েশিয়ানরা মন্ত্রীর নেতৃত্বে চাঁদ দেখে রমজানকে বরণ করে

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
মালয়েশিয়ানরা মন্ত্রীর নেতৃত্বে চাঁদ দেখে রমজানকে বরণ করে

আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহ যে তিনি মালয়েশিয়ান জনগণকে ইসলাম দান করেছেন। কারণ, মালয়েশিয়া একটি দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্র।

দ্রুত ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে মালয় জাতি বিশ্ব দরবারে দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। আর তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে প্রতিবেশী প্রায় প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রই।

মালয়েশিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম হলেও এখানে অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠির বিপুল সংখ্যক মানুষ বসবাস করে। তাই মালয় মুসলিমরা স্বতন্ত্র বিশ্বাস ও সংস্কৃতি লালন করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা বেড়ে ওঠে একটি মিশ্র সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে।

মালয় সমাজে মুসলিম ও অমুসলিম পরস্পরের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রমজানে মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে অমুসলিমরাও প্রকাশ্যে কোনো পানাহার করে না।

এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো মালয়েশিয়াতেও ইসলামের প্রচার হয়েছে মুসলিম ব্যবসায়ী ও নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম প্রচারকদের মাধ্যমে। তাদের চেষ্টা, সাধনা ও ত্যাগের বিনিময়ে মালয়েশিয়ার ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মে পরিণত হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে মালয়েশিয়ার গর্ব করার মতো একটি বিষয় হলো, দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য মসজিদ।

কুয়ালালামপুরে অবস্থিত মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদটিও দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও বৃহদায়তনের জন্য মুসলিম বিশ্বে প্রসংশিত। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় রয়েছে একাধিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। যেখানে ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে যুগোপযোগী ইসলামি শিক্ষা দেয়া হয়।

মালয়েশিয়ার মুসলিমরা অধীর আগ্রহে রমজানের জন্য অপেক্ষা করে। শাবান মাসের ২৯ তারিখে প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মানুষ দলবেধেঁ চাঁদ দেখতে বের হয়। স্বয়ং ধর্মমন্ত্রী চাঁদ দেখা কমিটির নেতৃত্ব দেন। ধর্মমন্ত্রণালয় চাঁদ দেখতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। গণমাধ্যমেও রমজানকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমেই থাকে মাসব্যাপী বিশেষ আয়োজন। মালয়েশিয়ান সরকারও রমজানের পবিত্রতা রক্ষা ও ধর্মীয় অনুপ্রেরণা দানে যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দেন। রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমগুলো রমজানে বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। যেমন, নবীচরিত, ইসলামের ইতিহাস, সাহাবায়ে কেরামের আত্মত্যাগ, ধর্মীয় বিধি-বিধান ইত্যাদি।

মালয় মুসলিমরা রমজানের পূর্ব থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে প্রতিটি পরিবারই রমজানের পূর্বেই প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র কিনে রাখেন। তাছাড়া প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় উদ্যোগে রাস্তা-ঘাট-সড়কগুলো পরিষ্কার করা হয়, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো আলোকসজ্জা করা হয়। সাজ-সজ্জা ও পরিচর্যায় মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত করা হয় প্রতিটি মসজিদ। রমজানে মুসল্লিদের আগমনে মসজিদগুলো নতুন জীবন লাভ করে। বিশেষত এশা ও ফজরের নামাজের পর বিপুল সমাগম হয় সেখানে। ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং এশার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ধর্মীয় বিষয়ে পাঠদান করা হয় সেখানে। মসজিদে মসজিদে থাকে কোরআন শিক্ষা ও ধর্মীয় পাঠদানের আয়োজন। রমজানে দিন-রাত সর্বক্ষণ মসজিদ খোলা থাকে এবং সবসময় কম-বেশি মুসল্লি মসজিদে থাকে।

রোজার চাঁদ দেখার সাথে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে মালয় মুসলিমদের মাঝে। নানাভাবে তারা আনন্দ প্রকাশ করেন এবং রমজানকে স্বাগত জানান। যেমন, পরস্পরকে অভিনন্দন জানানো। দফ (একমুখো ঢোল) বাজিয়ে রমজানকে বরণ করা ইত্যাদি। শহরের ব্যবসায়ীরা রমজানের চাঁদ ওঠার পর গ্রাহকদের মাঝে অভিনন্দন কার্ড বিতরণ করেন। সেখানে দোয়া, অভিনন্দন বাণী ও কোরআনের আয়াত লেখা থাকে। আর গ্রামের অধিবাসীরা মসজিদে আনন্দ সমাবেশ করে। পরস্পরকে অভিনন্দন জানায়। রমজান মাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশব্যাপী হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার প্রতিটি স্তরে থাকে বিশেষ পুরস্কার এবং চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরকে প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।

রমজানে নামাজ আদায়ের জন্য নারী, পুরুষ ও শিশু সবাই মসজিদে আগমন করে। সবাই জামাতের সঙ্গে তারাবি আদায় করে। তারাবি নামাজের পর তারা তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য পুনরায় মসজিদে একত্র হয়। তাহাজ্জুদের নামাজ জামাতের সঙ্গে এবং একাকী উভয়ভাবে আদায় করা হয়। তাহাজ্জুদের সময় তারা বিভিন্ন ধরনের ফল ও পানীয় গ্রহণ করে। নামাজের সময় মসজিদে সুগন্ধি স্প্রে করা হয়।

মালয়েশিয়ান মুসলিমরা ইফতারের সময় হলে সামান্য পানীয় দ্বারা ইফতার করে মাগরিবের জামাতে অংশ নেন। মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর মূল ইফতার গ্রহণ করে। মালয়েশিয়ান মুসলিমরা সাধারণত ঘরে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করে থাকেন। তবে কেউ কেউ সওয়াবের আশায় মসজিদেও ইফতার করেন।

রমজানে সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি পরিবার একদিন করে মসজিদের ইফতার প্রদান করে এবং অন্য সবাইকে ইফতারের দাওয়াত দেয়। ধনী ও সচ্ছ্বল ব্যক্তির খাদ্যসামগ্রী ও পানীয় নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হন। উন্মুক্ত দস্তরখানে সবার সঙ্গে ইফতার করেন। ইফতারের আয়োজনে খেজুর, আপেল, আখরোট, গোশত, রুটিসহ আরো থাকে, ‘গুতরা মুন্ডি’ ও ‘বাদেক’ নামক বিশেষ খাবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘন্টা, জুন ২৬, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।