মাহে রমজানের ১০ম তারাবি আজ অনুষ্ঠিত হবে। আজকের খতমে তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ১৩নং পারা অর্থাৎ সূরা ইউসুফের ৫৩নং আয়াত থেকে শুরু করে এ সূরা বাকী অংশ এবং সূরা রাদ ও সূরা ইবরাহিম।
সূরা ইউসুফের আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ হলো-
৫৩নং আয়াতে হজরত ইউসুফ (আ.) বলছেন, আমি নিজেকে ভালো মনে করি না। মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ। কিন্তু সে নয়; যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন।
হজরত ইউসুফ (আ.)-এর এ উক্তিতে সত্যিকার মানবীয় বৈশিষ্ট্য উচ্চারিত হয়েছে। যারা এ কথাকে মনে রাখতে পারে তারা সাধারণতঃ নৈতিক স্খলনের শিকার হয় না। কিন্তু যারা নিজেকে বা অপরকে ভালো মানুষ মনে করে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় তারা সাধারণতঃ স্খলনের শিকার হয়। মানুষের মন মাত্রই মন্দকর্ম প্রবণ। তাই এ মনকে মন্দ কর্ম থেকে বিরত রাখতে হলে প্রয়োজন শরিয়তের বিধি-বিধানের মজবুত প্রাচীর। নিজেকে ভালো রাখতে হলে এ প্রাচীরের ভিতর নিজেকে বেঁধে রাখার কোনো বিকল্প নেই। আর এ প্রাচীরের ভিতর থাকলেই পাওয়া যাবে প্রতিপালকের দয়া।
৬৭নং আয়াতে হজরত ইয়াকুব (আ.) নিজের ছেলেদের বলছেন, তোমরা (শহরে প্রবেশকালে) এক ফটক দিয়ে প্রবেশ করবে না। বরং বিভিন্ন ফটক দিয়ে প্রবেশ করবে।
হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর এ কথাটি ছিল বিশেষ সতর্কতামূলক। কারণ ভিনদেশী এতগুলো যুবক একত্রে একপথ দিয়ে শহরে প্রবেশ করলে মানুষ ভিন্ন কিছু সন্দেহ করতে পারে। দুষ্কৃতিকারী ভাবতে পারে।
মানুষের অমূলক সন্দেহ এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকা এবং কৌশল গ্রহণ করা নবীর সুন্নত।
৮৭নং আয়াতে হজরত ইয়াকুব (আ.) সন্তানদের বলছেন, যাও। ইউসুফ ও তার ভাইকে খোঁজ কর। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবে না। কেননা, কাফের ব্যতীত কেউ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না।
সূরা রাদ
সূরা রাদ কোরআন শরিফের ১৩নং সূরা। এটা মাদানি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪৩টি। সূরা রাদের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১-১৮নং আয়াতে বিশ্ব প্রকৃতির বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়ে আল্লাহর কুদরত দেখানো হয়েছে। আল্লাহর জ্ঞানের পরিধির অসীমতা দেখানো হয়েছে। উদাহরণ দেয়া হয়েছে বিস্তৃত মাটির, সুউচ্চ আকাশের, তরু-লতা থেকে নিয়ে বিভিন্ন বৃক্ষের, নদীর, মেঘের, বজ্রের, চাঁদ-সূর্যের, ফুল-ফলের ও মাতৃগর্ভের। বৈচিত্র্যময় এ সৃষ্টির বিচিত্র উদাহরণ দিয়ে আল্লাহর নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দিয়েছেন।
২০-২২নং আয়াতে জান্নাতীদের কিছু গুণের উল্লেখ করা হয়েছে। জান্নাতীরা আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে, ব্যক্তি জীবনে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখে, প্রতিপালককে ভয় করে, আখেরাতের কঠিন হিসাবকে ভয় করে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধৈর্য ধরে, যথাযথ নিয়মে সুন্দরভাবে নামাজ কায়েম করে, গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে এবং মন্দের প্রতিকার করে ভালো ব্যবহার দ্বারা।
২৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই মন প্রশান্তি লাভ করে।
৩৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা নিশ্চিহ্ন করেন আর যা ইচ্ছা করেন তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন।
সূরা ইবরাহিম
সূরা ইবরাহিম পবিত্র কোরআনের ১৪নং সূরা। এটা একটি মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫২টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৩নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা আখেরাতের চেয়ে দুনিয়াকে বেশি ভালোবাসে, মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখতে চায়, আল্লাহর পথ বিকৃত করতে চায় তারা ঘোর বিভ্রান্তিতে আছে।
৪নং আয়াতে জানানো হয়েছে, প্রত্যেক রাসূল তার স্বজাতির ভাষায় প্রেরিত হয়েছিলেন।
এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দাওয়াতের কাজে ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। যাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করা হবে দাওয়াতকারীকে তাদের ভাষা বুঝতে হবে, তাদের মনের কথা বুঝতে হবে। দ্বীনের দাওয়াতকে তাদের কাছে সহজ বোধগম্য ভাষায় মানসম্পন্নভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এটা নবীর সুন্নত ও ইসলোমের বিধান।
৫নং আয়াতে বলা হয়েছে, আমি (নবী) মুসাকে আমার নিদর্শনাবলী দিয়ে প্রেরণ করলাম। তাকে বললাম, তোমার জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে নিয়ে আস। ইতিহাস দিয়ে তাদের উপদেশ দাও।
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, শিক্ষা আলোরই নামান্তর। যে শিক্ষা অর্জন করবে, সে হবে আলোকিত মানুষ। অন্যদিকে শিক্ষা অনুপস্থিত থাকলে তা হবে অন্ধকার। এ আয়াত থেকে আরো বুঝা যায়, মানুষকে দ্বীনের পথে উৎসাহিত করার জন্য ইতিহাস অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। অতএব, নবীদের ইতিহাস, সাহাবাদের ইতিহাস, ওলি-আউলিয়াদের ইতিহাস, আল্লাহর গজবের ইতিহাস, জিহাদের ইতিহাস, মুসলিম সভ্যতার বিপর্যয়ের ইতিহাস, আল্লাহর প্রেরিত রহমত ও নিয়ামতের ইতিহাস দিয়ে মানুষের সামনে দ্বীনের কথা উপস্থাপন করতে, মানুষকে ওয়াজ করতে হবে।
যে সব নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, তাদের কথা মেনে সাধারণ মানুষ দুনিয়ায় দ্বীন থেকে সরে যাচ্ছে, আল্লাহর হুকুম-আহকাম থেকে সরে যাচ্ছে- জাহান্নামে প্রবেশের পর সে সব নেতাদের সঙ্গে তাদের অনুসারী জনতার একটা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সে সভাতে অনুসারী জনতা নেতাদের ওপর সব দোষ চাপাবে। কিন্তু ধূর্ত নেতারা সেদিন জাহান্নামের ভিতরেও একটি ভাষণ দিয়ে নিজেদের দোষ আড়াল করবে। সাধারণ জনতাকে দোষী সাব্যস্ত করবে। ২১-২২নং আয়াতে নেতৃবৃন্দের সে ভাষণটি বর্ণনা করা হয়েছে।
৩৫-৪১নং আয়াতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বিভিন্ন দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি নিজের জন্য নিজের সন্তানদের জন্য দোয়া করেছেন। নিজের ও সন্তানদের দ্বীন ও দুনিয়ার উন্নতির জন্য দোয়া করেছেন। তিনি নিজে ও তার সন্তানরা যেন নামাজ ধরে রাখতে পারেন- সে জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘন্টা, জুন ২৭, ২০১৫
এমএ/