চলতি রমজান মাসের চতুর্থ তারাবি আজ অনুষ্ঠিত হবে। আজকের তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু হচ্ছে, সাক্ষ্য ও বিচার কাজে নিরপেক্ষতা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা বিষয়ে।
সাক্ষ্য প্রদান ও বিচার কাজে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ব্যাপারে কোরআনে কারিমের আরও অনেক আয়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায় সাক্ষ্য প্রদানে অবিচল থাকবে। কারও শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করবে না। সুবিচার কর। এটাই তাকওয়া ও পরহেজগারির অধিক নিকটবর্তী আমল। আল্লাহকে ভয় কর। তোমর যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ ভালোভাবেই অবগত। ’ –সূরা মায়িদা: ৮
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রাগান্বিত অবস্থায় কোনো বিচারক যেন রায় প্রদান না করে। ’ –সহিহ বোখারি: ৭১৫৮
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন, ‘বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতে যাবে, দু’প্রকার বিচারক জাহান্নামে যাবে। যে বিচারক সঠিক বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে এবং সঠিক রায় দিয়েছে সে জান্নাতে যাবে। আর যে বিচারক সঠিক বিষয় অনুধাবন করেছে কিন্তু ভুল রায় দিয়েছে সে জাহান্নামে যাবে। যে বিচারক সঠিক বিষয় অনুধাবন না করেই রায় দিয়েছে সেও জাহান্নামে যাবে। ’ –সুনানে আবু দাউদ: ৩৫৭৩
সমাজ ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ সাক্ষ্য ও বিচারের গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আদালত হলো রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ। সমাজে বিচারক ও আইনজীবীদের অবদান অনেক। মানবাধিকার ঠিক রাখতে নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। তবে কথা হলো, বিচার ব্যবস্থা তখনই কেবল সমাজের জন্য, দেশের সাধারণ সাধারণ নাগরিকদের জন্য সুফল বয়ে আনবে; যখন বিচার সংশ্লিষ্ট সবাই নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, সবাই হবে আপোষহীন। আবার বিপরীতে বিচার ব্যবস্থা যদি পক্ষপাতের দোষে দুষ্ট হয়, অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে তখন নাগরিকদের দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না।
বিচার ব্যবস্থা ভঙ্গুর হলে, সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। জনগণের জান, মাল, ইজ্জত হয়ে যায় অনিরাপদ। বিচার কাজের প্রধান অংশ দু’টি। সাক্ষ্য প্রদান ও রায় প্রদান। সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সাক্ষ্য ও রায় উভয় কাজই হতে হয় নিরপেক্ষ ও ন্যায়সঙ্গত। মিথ্যা সাক্ষ্য অবশ্যই সুবিচারকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। আবার সাক্ষ্য সঠিক হওয়ার পরেও বিচার হতে পারে অবিচার। ইসলাম যেহেতু বিশ্বের সকল মানুষের কল্যাণ, নিরাপত্তা ও শান্তি চায় তাই সত্য সাক্ষ্য ও নিরপেক্ষ বিচার ইসলামের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষ সাক্ষ্য ও রায় দিতে যেয়ে পক্ষপাতে জড়িয়ে পড়ে সাধারাণতঃ তিন কারণে। যথা: সম্পর্ক, সহানুভূতি ও শত্রুতা।
সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতে প্রথম দু’টি কারণের ব্যাপারে এবং সূরা মায়িদার ৮ নম্বর আয়াতে তৃতীয় কারণের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। নিজের ক্ষতি হলে, পিতা-মাতার ক্ষতি হলে, নিকটাত্মীয়ের ক্ষতি হলে, নিজের দলের ক্ষতি হলে, নিজের সম্প্রদায়ের ক্ষতি হলে, নিজের বন্ধুর ক্ষতি হলেও কোনো আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না, সুবিচারের পরিপন্থী কোনো রায় দেওয়া যাবে না। আবার সমাজের অসহায় কোনো মানুষের শুভাকাঙ্খী হয়ে অথবা সম্মানিত বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার প্রতি শুভাকাঙ্খী হয়েও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না। নিয়ম বহির্ভূত কোনো রায় দেওয়া যাবে না। আবার কোনো ব্যক্তি, সম্প্রদায় বা দলের প্রতি চরম বিদ্বেষের থেকেও বাদী-বিবাদী কারোর পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। জেনে-শুনে সাক্ষ্য ভুল দেওয়া যাবে না, মনমতো রায় দেওয়া যাবে না। মিথ্যা সাক্ষ্য ও অবিচার সবসময়ের জন্য, সর্বাবস্থার জন্য হারাম।
মনে রাখতে হবে, এ বিচার শেষ নয়। পরকালে আল্লাহর আদালতে আবার বিচার হবে। সকল সাক্ষী ও বিচারককে সে দিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, চূড়ান্ত বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
সত্য সাক্ষ্য দিলে বা সঠিক বিচার করলে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে বা কোনো আপনজন ক্ষতিগ্রস্থ হবে- এ কথা জানার পরেও যদি সাক্ষী বা বিচারক একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করে সত্য সাক্ষ্য দেয় বা সঠিক বিচার করে তবে আল্লাহ অতি সত্বর সে ক্ষতি পুষিয়ে দিবেন। সঙ্কট থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দিবেন। সমস্যা সহজ করে দিবেন।
সূরা মায়েদার ৮ নম্বর আয়াতে সত্য সাক্ষ্য আর সুবিচারকে তাকওয়া ও পরহেজগারির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৬
এমএ/