ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

সন্তান পালক নেওয়া বিষয়ে আজ তারাবির পাঠ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৬
সন্তান পালক নেওয়া বিষয়ে আজ তারাবির পাঠ

চলতি রমজানের আজ ১৮তম তারাবি অনুষ্ঠিত হবে। আজকের খতমে তারাবিতে কোরআনের কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে, সন্তান দত্তক নেওয়া প্রসঙ্গে।

এ বিষয়ে সূরা আহজাবের ৪-৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের পালকপুত্র, যাদের তোমরা ছেলে বল, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা। আল্লাহই সত্য কথা বলেন। তিনি সরল পথ নির্দেশ করেন। তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয়ে তাদের ডাকবে। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই অধিক ন্যায়সংগত। যদি তাদের পিতৃ-পরিচয় না জানো; তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধু মাত্র। ’

কোরআনে আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘(মা বলে ডাকার কারণেই) তারা তাদের মা হয়ে যায় না। তাদের মা তো কেবল মাত্র ওই মহিলারাই যারা তাদের প্রসব করেছে। (গর্ভধারিণী ব্যতীত অন্য নারীকে মা ডেকে তারা) অসঙ্গত ও ভিত্তিহীন কথা বলছে। ’ –সূরা মুজাদালা: ২

এ প্রসঙ্গে কয়েকজন সাহাবি বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.)-এর নবুওয়েতের পূর্বে কৃতদাস শিশু যায়েদ ইবনে হারেছাকে মুক্ত করে দত্তক পুত্র করে রেখেছিলেন। সে রাসূল (সা.)-এর ঘরে, তারই পিতৃস্নেহে লালিত-পালিত হয়ে বড় হয়। আমরা তাকে যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ (মুহাম্মদের পুত্র যায়েদ) বলেই সম্বোধন করতাম। যখন আহজাবের ৫ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন, ‘তাদের (পালক সন্তানদের) পিতৃ-পরিচয়ে তোমরা তাদের ডাকবে’- তখন আমরা আমাদের পূর্বের ডাক পরিবর্তন করি। -সহিহ মুসলিম: ৬৪১৫

এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জানা সত্ত্বেও অন্য কাউকে পিতা বলে ডাকবে সে কুফরি করবে। যে ব্যক্তি অন্য বংশের পরিচয় দিবে সে জাহন্নামকে তার ঠিকানা বানাবে। ’ –সহিহ বোখারি: ৩৫০৮

প্রাক ইসলাম যুগে আরবে পালক সন্তানকে ঔরসজাত সন্তানের মতোই মনে করা হতো। বিয়ে, উত্তরাধিকারসহ সম্পর্কের সব ইস্যুতে ঔরস সন্তান ও পালক সন্তানের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হতো না। এখনও অনেক ধর্মাবলম্বীদের মাঝে পোষ্য সন্তানকে ঔরসজাত সন্তান মনে করা হয়। অনেক দেশও আইনের মাধ্যমে দত্তক সন্তানকে ঔরসজাত সন্তানের মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু ইসলামে তা বৈধ নয়।
 
ইসলাম মনে করে, পিতা-মাতা ও সন্তানের পরিচয়ের বাস্তব ভিত্তি হলো- ঔরস ও গর্ভধারণ। যেখানে ঔরস নেই সেখানে যদি পিতা-সন্তান পরিচয় দেওয়া হয় অথবা যেখানে গর্ভধারণ নেই সেখানে যদি মা-সন্তান পরিচয় দেওয়া হয় তবে সে পরিচয় দাঁড়িয়ে থাকে একটি মিথ্যার উপর, বানোয়াটের উপর, প্রতারণার ওপর। তাই যুক্তিসঙ্গত কারণে এবং বাস্তবতার নিরিখে ইসলাম সন্তান দত্তক নেওয়ার প্রথাকে স্বীকৃতি দেয়নি।

যেহেতু কোরআন ও হাদিস সন্তান পালক নেওয়ার প্রথাকে স্বীকৃতি দেয়নি; সেহেতু কোনো নিঃসন্তান দম্পতি যদি সন্তান দত্তক নেয়- তবে কয়েকটি আবশ্যকীয় বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। এগুলোর কোনোটা লংঘন করলে হারামে লিপ্ত হওয়ার গোনাহ হবে। যথা-

১. পালক সন্তানের পরিচয়ের জন্য তার জন্মদাতা পিতা-মাতার পরিচয় ঠিক রাখতে হবে।
২. পালক সন্তানের পিতা-মাতার নাম লেখা ও বলার সময় তার জন্মদাতা পিতা-মাতার নাম লেখতে ও বলতে হবে।
৩. পালক সন্তানের জন্মগত বংশ পরিচয় ঠিক রাখতে হবে। পালক পিতার বংশীয় পদবী তার জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
৪. পালক ছেলেসন্তান সাবালক হওয়ার পর পালক মায়ের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। পালক মেয়ে সন্তান সাবালিকা হওয়ার পর পালক পিতার সঙ্গে পর্দা করতে হবে। অনুরূপভাবে পালক পিতা-মাতার ঔরসের সন্তানদের সঙ্গেও পর্দা করতে হবে।
৫. জন্মের কারণে যে সব সম্পর্কের বিয়ে বন্ধন নিষিদ্ধ, পালক নেওয়ার কারণে সে সব সম্পর্কের বিয়ে বন্ধনকে নিষিদ্ধ মনে করা যাবে না।
৬. পালক সম্পর্কের কারণে সম্পদের ওয়ারিশ হবে না। তবে জীবিতাবস্থায় দান করতে পারবে, ওসিয়ত করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।