ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

সহপাঠিদের মাঝে রোজা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত: বদর উদ্দিন আহমদ কামরান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
সহপাঠিদের মাঝে রোজা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত: বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছবি: আবু বকর সিদ্দিকী

সিলেট: রমজান স্মৃতি নিয়ে আজকের অায়োজনে থাকছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানতিনি সিলেটবাসীর অভিভাবক হিসেবে বেশি পরিচিত ও স্বীকৃত।

তিনি শৈশবে রোজা পালনের স্মৃতিময় দিনগুলো নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট নাসির উদ্দিন-এর সঙ্গে। সেই আলাপের চুম্বকাংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

বাবা-মা চাইতেন না সেহেরির সময় ঘুম থেকে উঠি
ছোটবেলায় যৌথ পরিবারে বড় হই। চাচাতো ভাই-বোনেরাসহ একই বাসায় থাকতাম। বাবা-মা চাইতেন না ছোটরা রোজা রাখি। আমরা ভাই-বোনেরা যুক্তি করতাম, সেহেরির সময় যে আগে ঘুম থেকে জাগবে, সে যেনো অন্যদের ডেকে তুলে। এভাবে সেহেরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠতাম। বুঝ হওয়ার পর তৃতীয় শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় প্রথম রোজা রেখেছিলাম।

সে সময়ে মসজিদে মাইক এবং সাইরেন ছিল না। টিনের তৈরি চোঙ্গা দিয়ে (টিনের তৈরি হাত মাইক) ইফতার ও সেহেরির সময় জানানো হতো। পাড়ার আহসান উল্লাহ ভাই ডেকে বলতে ‘পতা খাইলাও’ (সেহেরি খেয়ে নাও)। তার ডাক শুনে সেহেরির সময় ঘুম থেকে জেগে উঠতাম।
 
কলসিতে রোজা রেখে খেতে বলতেন বাবা-মা
রোজা রাখলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মা বলতেন, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ হয়নি খেয়ে নাও। তখন রোজা ভাঙতে না চাইলে, কলসিতে হাঁ করে শ্বাস (রোজা) রেখে খাওয়া-দাওয়া করে পরে আবার শ্বাস টান দিয়ে রোজা রেখে নিতে বলতেন। তবে ছোটবেলা থেকে নামাজ-রোজা অভ্যাস ছিল, আমাদের পারিবারিক শিক্ষা। আর বুঝ হওয়ার পর থেকে নিজেরাই রোজা রাখতাম। তখন মা বাবা রোজা ভাঙতে দিতেন না। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে নফল রোজা রাখতাম।

৯ বছরে প্রথম রোজা
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ৯ বছর বয়সে প্রথম রোজা রাখি। সেই সময়ে সেহেরি-ইফতার খাওয়ার লোভে রোজা রাখতাম।   আগেকার সময়ে ইফতার হিসেবে অন্যতম ছিল জাউ (নরম খিঁচুড়ি), বাকরখানি আর পেঁয়াজু ছিল। তবে হালিম কি জানতাম না।
 
ইফতারে ভালো আয়োজন হতো
সব রোজা রাখা তখন সম্ভব হতো না। তবে যেদিন রোজা থাকতাম, সেদিন বাড়িতে ইফতারে ভালো কিছুর আয়োজন হতো। তখন ভাঁজাপোড়া খাওয়া হতো না। ইফতারে সব ছিল বাড়ির তৈরি। খাওয়া সেটা ছিল পরিবার থেকে এক ধরণের উৎসাহ। বাচ্চারা রোজা, সে হিসেবে ভালো আয়োজন হতো।

সেহেরি-ইফতারের সঙ্কেত ছিল সাইরেন
তখন টেলিভিশন ছিল না। ছিল না মসজিদে মাইক। তাই রোজার চাঁদ দেখা ও সেহেরি-ইফতারের সময় সাইরেন বাজানো হতো। আমাদের সহপাঠিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতো, কে-কয়টা রোজা রাখছি। তখন দলবেঁধে তারাবি পড়তাম কালিঘাট নবাবী মসজিদে। আর মসজিদে তখন সুরে তারাবি বেশি হতো।

রোজার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম
ছোটবেলা থেকে আমি রোজার প্রতি ছিলাম খুবই শ্রদ্ধাশীল। এখনও আছি। কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে, রোজা রাখা। আল্লাহ তাকে নিজ হাতে পুরস্কৃত করেন। শুধু রোজা রাখলে হবে না। এ মাসের হক ঠিকভাবে আদায় ও ভালো দিকগুলো গ্রহণ করতে পারি আমরা। এতে করে আত্মশুদ্ধি হবে। তাছাড়া সেহেরি খেয়ে আপনি ফজরের জন্য অপেক্ষা করবেন, সেটাও একটা এবাদত। ইফতারের সময় ইফতার সামনে রেখে বসাও ইবাদত।

ঈদের কাপড় লুকিয়ে রাখতাম
রোজায় ঈদের জামা-কাপড়ের মাপ দিতে দর্জিবাড়িতে যেতে হতো। সবচেয়ে মজা হতো নতুন জামা-কাপড় আমরা একে অপরকে দেখাতাম না পুরনো হয়ে যাবে- এই ভয়ে। সেই কাপড় ঈদের দিন পর্যন্ত লুকিয়ে রাখতাম, কারণ কেউ দেখলে পুরনো হয়ে যাবে। এখনতো রেডিমেট দোকান হয়েছে। আব্বা কাপড় দেওয়ার পাশাপাশি নানা-নানি, মামারা কাপড় দিতেন। বাবা-মা ছাড়াও নানা-নানী, মামাদের দেওয়া ৪/৫টি পোষাক হয়ে যেতো। তখন একদিনে সবগুলো পোষাক পরতে না পেরে আফসোস করতাম। সময়ের আবর্তে বয়স বেড়েছে। ছোটবেলার সেই আনন্দ-অনুভূতি এখন নাতি-নাতনি ও পাড়া প্রতিবেশির মধ্যে খুঁজে পাই, সেটাই এখন খুশির বিষয়।

আহবান
সিলেট আধ্যাত্বিক ও সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতির নগরী। এই আধ্যাত্বিক নগরীর সবার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, অহেতুক ঝগড়া, হিংসা পরিহার করে বিনয়ী হওয়ার। রমজানের মূল শিক্ষা অন্তরে ধারণ করার। এবার রমজানে আমি নিজে কোরআন শরিফ খতম করার ইচ্ছা করেছি। আপনাদের যাদের সামর্থ্য আছে আপনারাও কোরঅান খতম করবেন। সবাই মিলে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকলে- রমজানের শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রতিফলন ঘটবে। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
এনইউ/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।