সহমর্মিতা প্রকাশের অনন্য উদাহরণ হলো- অভাবী লোকের কাছে তার প্রয়োজনীয় বস্তুটুকু পৌঁছে দেওয়া। এর অন্যতম মাধ্যম হলো- আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত পন্থায় জাকাত আদায় করা।
রমজান মাসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অত্যধিক দান করতেন। নবীজির ঘোষণা অনুযায়ী, রমজানে একটি নফল ইবাদতে একটি ফরজের সমান পুরস্কার মেলে। আর একটি ফরজ ইবাদতে মেলে সত্তরগুণ সওয়াব। জাকাত যেহেতু ফরজ ইবাদত, তাই ১ হাজার টাকা জাকাত হিসেবে আদায় করা হলে ৭০ হাজার টাকা জাকাত আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায় রমজানে।
এ কারণে অনেকেই জাকাত আদায়ের জন্য, জাকাত হিসাব করার জন্য বেছে নেন পবিত্র রমজান মাস। তাই জাকাত ও রমজান যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জাকাত মূলতঃ সম্পদ ও মনের পরিশুদ্ধির জন্য। কোনো ব্যক্তি তার কাছে জমে থাকা সম্পদ একান্ত তারই যেন মনে না করে। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ জমানোর লোভ ত্যাগ করা হয়, আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পায়। সেই সঙ্গে সম্পদ বৃদ্ধির ওয়াদার সুযোগ নেওয়া হয়। কারণ জাকাত দিলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
জাকাত প্রাপ্যদের তালিকা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনে। গরিব, নিঃস্ব ব্যক্তি, জাকাত আদায় ও বণ্টন ব্যবস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথের পথিক এবং অভাবী মুসাফির জাকাতের অর্থ ও সম্পদ গ্রহণ করতে পারে।
নিকট আত্মীয়দের জাকাত দেওয়া উত্তম। তবে নিজের সন্তান বা তার অধস্তনকে কিংবা মা-বাবা বা তাদের ঊর্ধ্বতনকে, স্বামী স্ত্রীকে জাকাত দেওয়া যায় না। এভাবে রাসূলের বংশের কেউ জাকাত নিতে পারেন না। জাকাত দেওয়ার সময় মনে মনে জাকাত দেওয়ার নিয়ত বা ইচ্ছা করলেই জাকাত আদায় হয়ে যাবে। জাকাত গ্রহীতাকে ‘এটা জাকাতের সম্পদ’ জানানোর প্রয়োজন নেই।
জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে টাকা বা সম্পদের পূর্ণ মালিকানা জাকাত গ্রহীতাকে দিতে হবে। তাই যেসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিমালিকানা হয় না যেমন- মসজিদ, রাস্তাঘাট, মাদরাসার স্থাপনা, কবরস্থান, এতিমখানার বিল্ডিং এসব তৈরির কাজে জাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে না।
মাদরাসার গরিব-এতিম ছাত্রদের জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জাকাতের টাকা উঠিয়ে থাকেন। এসব টাকা সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের মালিকানায় দিতে হবে। পরে ছাত্ররা তাদের থাকা-খাওয়া বাবদ মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে দিতে পারবে।
জাকাতের টাকায় ব্যক্তিবিশেষকে স্বাবলম্বী করার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার পুঁজিও দেওয়া যায়। ব্যক্তি মালিকানায় নলকূপ, কৃষি সরঞ্জামাদি দেওয়া যায়। গৃহনির্মাণ করে অভাবী ব্যক্তিকে মালিকও বানিয়ে দেওয়া যায় জাকাতের টাকায়। বিধবা, এতিমের যত্ন, তাদের চিকিৎসা, গরিব ছেলেমেয়ের বিয়ে, গরিবদের লেখাপড়া এমন যে কোনো জনকল্যাণমূলক কাজ করা যাবে জাকাতের টাকায়, শর্ত একটাই- অভাবীকে মালিক করে দিতে হবে জাকাতের টাকার।
এসব জাকাত কারা দেবেন, এ ব্যাপারে শরিয়তের নির্দেশনা হলো- স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন সম্পদশালী মুসলিম নর-নারী চন্দ্র বছরান্তে তার জাকাতযোগ্য সম্পদের ৪০ ভাগের একভাগ তথা ২.৫ শতাংশ টাকা বা সম্পদ গরিব বা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করবেন। এটিই জাকাত।
রমজানে জাকাত আদায়ের সুফল
জাকাত বছরের যে কোনো সময় আদায় করা যায়। প্রয়োজনীয় সময়ে সহযোগিতা বরং উত্তম। তবে জাকাত আদায়ের জন্য আমরা সাধারণত রমজান মাসকেই বেছে নিয়ে থাকি। এ সময়ে হাতে নগদ টাকাও বেশি আসে- তাই জাকাত দেওয়া সহজ হয়। অন্যদিকে সামনে ঈদ থাকে, গরিবরাও যেন তাদের প্রাপ্য জাকাতের টাকায় সুন্দরভাবে ঈদ করতে পারে- এসব বিষয় আমাদের মাথায় থাকে। এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে জাকাত আদায়ে যেন মানুষের কষ্ট না হয়।
জাকাত প্রদানের প্রদর্শনীর কারণে স্থানে স্থানে দুর্ঘটনা, হতাহতের কথা শোনা যায়। এসব এড়িয়ে চলতে হবে। শুধু ঈদের কয়েকটা দিন তারা আনন্দে থাকুক, এতটুকুতেই সন্তুষ্ট হলে চলবে না, তারা যেন সারা বছর নিজেদের আয়ে চলতে পারে এ জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার কিছু ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হয়। যদি জাকাতের একটা অংশ থেকে প্রতি বছর দু-একজনকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করা যায়, তাহলেই এক সময় জাকাতের পূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে।
লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
grabbanidu@gmail.com
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
এমএইউ/