ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

সিয়াম সাধনায় ফুল ফুটবে মনের জমিনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
সিয়াম সাধনায় ফুল ফুটবে মনের জমিনে সিয়াম সাধনায় ফুল ফুটবে মনের জমিনে

রমজানুল মোবারকের আজ তৃতীয় দিন। সিয়াম পালনের বিনিময়ে লোভনীয় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন মহান আল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর (সা.) এই পবিত্র মাসের অনন্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন বিভিন্নভাবে।  

যেমন বুখারি শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) এর বরাতে বর্ণিত আছে, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, আদম সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানে। তবে সিয়াম বা রোজা এ থেকে ব্যতিক্রম।

 

কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সিয়াম আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেবো। সে আমারই উদ্দেশ্যে প্রবৃত্তি ও আহারের চাহিদা থেকে নিবৃত্ত থাকে।

যেকোনো ইবাদত ও নেক আমল কবুল হওয়া এবং সওয়াবের উপযোগী হওয়ার জন্য ঈমানদার হওয়া শর্ত। কুরআন মজিদ ও হাদিস শরিফে বিভিন্ন নেক আমলের প্রতিদান প্রসঙ্গে ঈমানের শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।  

যেমন সূরা নাহলের ৯৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, যে কেউ নেক আমল করবে, সে নর হোক কিংবা নারী হোক, যখন সে ঈমানদার, তখন তাকে আমরা দান করবো সুখময় জীবন এবং তাদের দান করবো তাদের কাজের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। ঈমানের আভিধানিক অর্থ যদিও বিশ্বাস, কিন্তু প্রকৃত ঈমানের মর্ম অনেক ব্যাপক ও গভীর।  

আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আরব মরুর এক জীর্ণ কুটিরে জন্ম নিয়ে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ নামের এক মহাপুরুষ জগতবাসীকে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের পথে আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে একটি অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বিশ্বকে সভ্যতা ও সংস্কৃতির নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিল।  

এটুকু জানা এবং এজন্য তার প্রতি শ্রদ্ধাভাব পোষণ করাই যথেষ্ট নয়। কেননা এ ধরনের বিশ্বাস সমকালীন আরবের অনেকেরই ছিল। হিজরতের পর মদিনায় শেষ নবীর প্রতি সবচেয়ে বিদ্বেষ পোষণ করতো ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়।  

অথচ তারাও শেষ নবীকে নিশ্চিতভাবে জানতো। তাওরাত ও ইঞ্জিলে শেষ নবীর যে বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে, তা তাদের নখদর্পণে ছিল। প্রথম দর্শনেই তারা বুঝতে পেরেছিল ইনিই সেই নবী, যার সুসংবাদ দিয়ে গিয়েছেন আগের সব নবী ও রাসুল।  

এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদেও বলা হয়েছে যে, তারা তাকে (শেষ নবীকে) চেনে যেমন চেনে নিজেদের সন্তানকে। এভাবে চিনতে পারার পরেও তারা মুমিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। কারণ ঈমানের গভীর মর্মের মধ্যে নিহিত রয়েছে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের অঙ্গীকার।  

ইহুদি, খ্রিস্টান ও মক্কার কুরাইশদের অভাব ছিল এই বিষয়টির বিষয়ে। তারা  জেনে বুঝেও আল্লাহর বিধান ও রাসুলের আদর্শের কাছে নিজের সত্ত্বাকে সমর্পণে প্রস্তুত ছিল না। কোনো ব্যক্তি যখন জগৎস্রষ্টা ও নিয়ন্তা একক সত্ত্বার প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দেয় এবং তার বিধান ও নির্দেশের কাছে নিজের সব কিছু বিলীন করে দেওয়ার অঙ্গীকার করে, তেমনি তার প্রেরিত পুরুষ বা রাসুলের প্রদর্শিত পথে জীবন পরিচালনার শপথ করে, তখনই সে প্রকৃত মুমিন বলে সাব্যস্ত হয়।

মোটকথা রমজানের সিয়াম সাধনা থেকে পূর্ণ মাত্রায় লাভবান হতে হলে প্রয়োজন মহামহিম রাব্বুল আলামিনের প্রতি আনুগত্য ও আত্মনিবেদনের অঙ্গীকার করা। নিজের চিন্তা, মনোভাব ও আচরণকে সাজাতে হয় মহান স্রষ্টার নির্দেশ ও কামনা অনুযায়ী।

আর সে জন্য সহজ উপায় রাসুলে পাক (সা.) প্রদর্শিত রূপরেখা অনুসরণ। মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি শ্রদ্ধা ও সমীহবোধ থাকার পাশাপাশি তার আদর্শ ও পথ অনুসরণের দৃঢ়প্রতীজ্ঞাও ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। আল্লাহর রাসুলকে যেমন জগতবাসীর জন্য কল্যাণ ও মুক্তির দিশারী হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হয়, তেমনই আল্লাহর নির্দেশাবলী ও ব্যবস্থা সম্পর্কে তার বক্তব্যের প্রতিও আস্থা রাখতে হয়।  

পরকাল ও অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে তিনি যা কিছু বলে গেছেন, সেগুলোর সত্যতা সম্পর্কেও কোনো সন্দেহ পোষণ করা যায় না।

ঈমানের গভীরতা ও দৃঢ়তা যার যত বেশি, যেকোনো নেক কাজে তার সওয়াবের পরিমাণও বেশি হবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবা তাবেয়ীন,আধ্যাত্মিক বুজুর্গানে দীনের সঙ্গে সাধারণ মুমিনদের পার্থক্য এখানেই। আর এ কারণেই সবার মর্যাদা সমান নয়।

তাই ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ মাহে রমজানের সিয়াম পালনের সার্থকতা ও সুফল প্রাপ্তির জন্য ঈমানের পরিপক্বতা ও দৃঢ়তা প্রয়োজন। এজন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রোজা পালনের নির্দেশ দানের সময় প্রথমেই বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।

লেখক: বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
চেয়ারম্যান: বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।