তবে আফসোস তাদের জন্য যারা রমজানের মোবারক পেয়েও অলসতা আর উদাসীনতায় কাটিয়ে দেয়। উদাহরণ দেওয়া যায়, বৃষ্টির পানি অনুর্বর ভূমিতে পড়লে ভূমি তা থেকে উপকৃত হতে পারে না, কিন্তু সেই পানি উর্বর ভূমিতে পড়লেই ফসল লক লক করে ওঠে।
আল্লাহ্ তায়ালা এ মাসে পবিত্র কোরআনুল কারিমের বিশেষ নিয়ামতে মানবতাকে ধন্য করেছেন, লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে সম্পূর্ণ কোরআন একবারে এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। তাছাড়া ইবরাহিম (আ.) এর ওপর সহিফাসমূহ, দাউদ (আ.) এর ওপর যাবুর ও মুসা (আ.) এর ওপর তাওরাত এবং ঈসা (আ.) এর ওপর ইনজিল এ মাসেই অবতীর্ণ হয়।
শুধুই সিয়াম সাধনাই এ মাসের শ্রেষ্ঠত্ব নয়; বরং পবিত্র কোরআন নাজিল হওয়ার কারণেই এ মাসের মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই শুধু তেলাওয়াত নয় বরং কোরআনকে অর্থসহ বুঝে বুঝে অধ্যয়ন করা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। কোরআনের বিধি-বিধান জীবন ও সমাজে বাস্তবায়নই হবে রমজানের সবচেয় বড় শিক্ষা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, রমজান সে মাস, যে মাসে মানব জাতির পথ প্রদর্শনের নিদর্শনসমূহ ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী কোরআন নাজিল হয়েছে। অতএব, যে এই মাস পেল সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে (সূরা বাকারা: ১৮৫)।
মুুমিন বান্দাদের উচিত, এ মাসে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি নেক কাজ বাড়িয়ে দেওয়া। জানা সকল পাপ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। অজানা পাপ থেকেও আল্লাহর কাছে কায়মনে আশ্রয় চাওয়া। হালাল রুজি ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। রমজান যেহেতু মানুষকে হারাম থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে, তাই এ মাসেই হালাল রুজিতে অভ্যস্থ হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সিয়াম অনর্থক কাজ থেকে বিরত রাখে, জিহ্বায় লাগাম টানে, হৃদয় পরিচ্ছন্ন রাখে, ব্যবহারকে সুন্দর করে, হিংসা-রেষারেষি থেকে মুক্তি লাভের শিক্ষা দেয়। তাই বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত মানবতাকে অভিন্ন সুতোয় বেঁধে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে এ মাসে। অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্যও সোচ্চার হতে হবে সায়েমকে। আল্লাহর দুনিয়ায় মহান রবের রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার দীপ্ত শপথ নিতে হবে এ মাসেই।
রমজানে পুণ্যের বদলে পাপ ও বক্রতা কোনও ব্যক্তির মধ্যে বেড়ে গেলে তা অবশ্যই আত্মিক পরাজয়, যার প্রভাব সমাজে পড়তে বাধ্য। রমজান শাসক-শাসিতে, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচুদের মাঝে সেতুবন্ধনের একটি বড় মাধ্যম। অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বারণ করার এক বিরাট সুযোগ। রমজান সামাজিক, চিন্তাগত অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকার একটি উপলক্ষ। মুসলমানদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের সুবর্ণ সময় রমজান। তাই আমাদের উচিত রমজানে বেশি বেশি আত্মসমালোচনায় মনযোগী হওয়া। তাকওয়া অর্জিত হলেই কেবল রোজা আমাদের পাপকে জ্বালিয়ে দেবে। শুধু তেলাওয়াত নয়, বরং কুরআনকে অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ পড়ে আমল করা জরুরি। এর মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারব আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী, আমরা কতটা মুত্তাকী হতে পেরেছি। বুঝতে পারবো- রোজা আসে রোজা যায়, তবুও সমাজ থেকে পাপাচার, অন্যায়, পশুত্ব, রাহাজানি কেন দূর হয় না। তাই এই রমজান হোক নিজেকে বদলে দেয়ার, পাপ-কালিমাকে মুছে দেয়ার, আর আল্লাহর রহমত পাওয়ার উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তোলার বিশেষ নিয়ামত।
লেখক
বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
এইচএ/