মানুষকে কল্যাণের পথে আহ্বান করার প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কতইনা সুন্দর ভাষায় উদ্বুদ্ধ করেছেন আলোচ্য আয়াতে। তবে অন্ধ ব্যক্তি যেমন কাউকে পথ দেখাতে পারে না তেমনি আল্লাহর সঙ্গে যার সম্পর্ক নেই সে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেও পারে না।
আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকার জন্য প্রয়োজন হয় ব্যাপক প্রস্তুতি, একনিষ্ঠ প্রশিক্ষণ। যে প্রশিক্ষণ আল্লাহর রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.) দের শিখিয়ে দিলেন। নবীজীর প্রশিক্ষণে আরবের নিথর ও ইতর শ্রেণীর মানুষগুলো হয়ে উঠেছিলেন সোনার মানুষে।
অশান্তি আর অরাজকতায় ভরা জাহিলিয়াতের সমাজ পরিণত হয়েছিল আলোর সমাজে। আরব থেকেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল আলোর মিছিল, আল্লাহর পথের ডাক। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর পথে ডাকাকে বলা হয় দাওয়াত আর যিনি দাওয়াত দেন তাকে বলা হয় দায়ী।
দায়ীর প্রথম ও প্রধান গুণ হল তাকওয়া। আর তাকওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে আসে রমজান। রমজান মাসব্যাপী আমরা তো কল্যাণকর কত কিছুই ভাবি কিন্তু মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার সুযোগ কি আমাদের হয়? দায়ীর গুণাবলী অর্জনের প্রশিক্ষণ কি আমরা রোজা থেকে নিতে পারি?
আল্লাহতায়ালা বলেন, সাধারণ লোকের অধিকাংশ শলা-পরামর্শের মধ্যে কল্যাণ নেই। হ্যাঁ, যারা দান-সদকা করে, পূণ্যের কাজ অথবা মানুষের মধ্যে পরস্পর ভালো সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য উৎসাহ প্রদান করবে এবং যারা লোভ-লালসা ত্যাগ করে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই এ রকম শলা-পরামর্শ করে, তাকে আমি অতি শিগগির মহাপুরস্কারে পুরস্কৃত করবো। (আল কোরআন)
এই আয়াতে আল্লাহপাক দায়ীর জন্য মহাপুরস্কার ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ যে পুরস্কারকে মহাপুরস্কার বলেছেন, তা কত বড় হতে পারে তা একমাত্র তিনিই জানেন। আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত এ মহাপুরস্কারের অধিকারী হতে হলে আমাদের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রকৃত দায়ীর গুণাবলী অর্জন করতে হবে।
মুফাসসিরিনদের মতে, দায়ী দুই প্রকার। প্রথমত, ওই দায়ী যে যা বলে তাই করে। আর দ্বিতীয়ত, যে দায়ী মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দেয় ঠিকই কিন্তু নিজে ভালো কাজ করে না।
আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা কি অন্য লোকদের সৎ কাজের আদেশ দিচ্ছ এবং নিজেকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করছো। তোমরা কি বুঝো না? (আল কোরআন)
সিয়াম সাধনা মানুষকে এটাই প্রশিক্ষণ দিয়ে যায় যে, নিজেকেই আগে সাফ হতে হবে। তারপর আশপাশের মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে। যেন তাদেরও দিল সাফ হয়। তবেই সায়েম হয়ে উঠবে ধর্মের রাহবার বা ইল্লাল্লাহর প্রচারক।
ইল্লাল্লাহর পথে জনতাকে ডাকতে পারার প্রশান্তিময় জীবন প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির অর্জন হোক। আমরা যেন হয়ে উঠি জীবনব্যাপী সায়েম। আল্লাহতায়ালা আমাদের রমজানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত দায়ী ধর্মপ্রচারক হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন…!
লেখক: মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৮
এমএ/