মাহে রমজানের রয়েছে অগণিত সওয়াব, মর্যাদা ও বহুমুখী কল্যাণ। রমজান মানুষের আধ্যাত্মিক শক্তি, তাকওয়ার শক্তি ও আমলের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি তা মানুষের কিছু ব্যবহারিক শক্তিকেও শানিত করে তোলে।
যা তাকে মহান রবের কাছে তাকওয়াবান হিসেবে পৌঁছে দেয় আর বাস্তব জীবনে সে হয়ে ওঠে ব্যক্তিত্বশীল, চারিত্রিক মাধুর্যপূর্ণ, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন একজন নাগরিক। এর মাধ্যমে সে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মুসলিম হিসেবে অন্যের কাছে উপস্থাপন করার সৎ ও নৈতিক সাহস খুঁজে পায়। যা একজন মোমিন মুসলিমের চলার পথকে করে সহজ থেকে সহজতর এবং ইসলামী পরিবেশে সে নিজেকে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সে-ই প্রকৃত মুসলিম যার হাত ও জিব থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ আর প্রকৃত মুহাজির সে যে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করে। ’ বুখারি, মুসলিম।
এ হাদিসে প্রকৃত মুসলিমের দুটি পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে- ১. তার হাত, শক্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে অন্য ভাই নিরাপদ থাকবে ২. তার জিব, ভাষা ও বাকশক্তির আক্রমণ ও অপব্যবহার থেকে অন্য ভাই নিরাপদ থাকবে। এ দুটো শিক্ষাই রমজান আমাদের দিয়ে থাকে। কারণ রমজান শুধু সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার বিরত থাকার নাম নয়; যাবতীয় অন্যায়, অশালীন, অশ্লীল, অহেতুক কথাবার্তা, মন্দ ধারণা, গিবত ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নামই রমজান।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি তার খাবার ও পানীয় পরিত্যাগ আল্লাহর কাছে কোনো উপকারে আসবে না। ’ বুখারি, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ।
আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক অন্য হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘সিয়াম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয় তবে সে যেন দুবার বলে আমি সাওম পালন করছি। ’ বুখারি, মুসলিম।
একজন সিয়াম পালনকারী কীভাবে নিজেকে পাপাচার ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে মুক্ত রাখবে তা রসুল (সা.) হাদিসে সুস্পষ্টভাবে তাগিদ করেছেন।
মহান রব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে মারিয়াম (আ.)-এর পবিত্রতা রক্ষা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন, ‘যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ তবে বলে দিও আমি আল্লাহর উদ্দেশে রোজা মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলব না। ’ সুরা মারিয়াম আয়াত ২৬।
এখানে মারিয়াম (আ.)-কে সাধারণ কথাবার্তা ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি বরং পিতাবিহীন সন্তান ধারণ করা প্রসঙ্গে লোকেরা যদি তোমাকে অহেতুক প্রশ্ন করে, যাতে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; তবে তুমি তাদের বলে দেবে আমি আল্লাহর উদ্দেশে সাওম পালন করছি মা’রেফুল কোরআন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
এসআই