অনেক দ্বীনি ভাই-বোনেরা আছেন যারা সহিহ নিয়মে লাইলাতুল কদরে ইবাদত-বন্দেগি করতে ইচ্ছুক। তাই তারা প্রশ্ন করে থাকেন যে, লাইলাতুল কদরে আমরা কি কি ইবাদত করতে পারি? সব মুসলিমের জ্ঞাতার্থে সংক্ষিপ্তাকারে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হলো।
প্রথমত: আল্লাহতায়ালা আমাদের বলে দিয়েছেন, এ রাত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। অর্থাৎ এই এক রাতের ইবাদত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। তাই এই রাতটি ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করাই হবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয়ত: জানা দরকার যে ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত হচ্ছে, প্রত্যেক এমন আন্তরিক ও বাহ্যিক কথা ও কাজ- যা আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকেন।
এই সংজ্ঞার আলোকে বলা যেতে পারে, ইবাদত বিশেষ এক-দু’টি কাজে সীমাবদ্ধ নয়। তাই আমরা একাধিক ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতটি অতিবাহিত করতে পারি। এখানে তেমন কিছু ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হলো-
এক.
ফরজ নামাজসমূহ ঠিক সময়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা। যেমন মাগরিব, ইশা এবং ফজরের নামাজ। তার সঙ্গে সঙ্গে সুন্নতে মোয়াক্কাদা, তাহিয়্যাতুল মসজিদসহ অন্যান্য সুন্নত নামাজ আগে আদায় করা।
দুই.
কিয়ামে লাইলাতুল কদর করা। অর্থাৎ রাতে তারাবির নামাজ ও নফল নামাজ আদায় করা। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকির আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম করবে (নামাজ পড়বে) তার বিগত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। এই নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা উত্তম। অন্যান্য রাতের তুলনায় এই রাতে ইমাম দীর্ঘ কেরাতের মাধ্যমে নামাজ সম্পাদন করতে পারেন। ইশার পর প্রথম রাতে কিছু নামাজ পড়ে বাকী নামাজ শেষ রাতে পড়াতে পারেন। একা একা নামাজ আদায়কারী হলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী দীর্ঘক্ষণ ধরে নামাজ পড়তে পারে।
তিন.
বেশি বেশি দোয়া করা। তন্মধ্যে সেই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা যা নবী করিম (সা.) মা আয়েশা (রা.) কে শিখিয়েছিলেন। মা আয়েশা নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল কদর লাভ করি, তাহলে কি দোয়া করবো? তিনি (সা.) বলেন, বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন- তুহিব্বুল্ আফওয়া ফা-ফু আন্নী। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমা পছন্দ কর, তাই আমাকে ক্ষমা কর।
এছাড়া বান্দা পছন্দমতো দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যাবতীয় দোয়া করবে। সেগুলো প্রমাণিত আরবি ভাষায় দোয়া হোক কিংবা নিজ ভাষায় হোক। ইসলামি স্কলাররা এই রাতে অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে দোয়া করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ এতে বান্দার মুক্ষাপেক্ষীতা, প্রয়োজনীয়তা ও বিনম্রতা প্রকাশ পায়, যা আল্লাহ পছন্দ করেন।
চার.
জিকির-আজকার ও তাসবিহ-তাহলিল করা। অবশ্য এগুলো দোয়ারই অংশবিশেষ। কিন্তু বিশেষ করে সেই শব্দ ও বাক্যসমূহকে জিকির বলে, যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করা হয়। যেমন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ,’ ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার,’ ‘আসতাগফিরুল্লাহ,’ স্তাগফিরুল্লাহ’ ও ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউআতা ইল্লাবিল্লাহ’- ইত্যাদি।
পাঁচ.
কোরআন তেলাওয়াত করা। কোরআন পাঠ একটি বাচনিক ইবাদত, যা দীর্ঘ সময় ধরে করা যেতে পারে। যার এক একটি অক্ষর পাঠে রয়েছে এক একটি নেকি। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষর পড়বে, সে তার বিনিময়ে একটি নেকি পাবে… আমি একথা বলছি না যে, আলিফ,লাম ও মীম একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর। ’
এ ছাড়া কোরআন যদি কিয়ামত দিবসে আপনার সুপারিশকারী হয়, তাহলে কতই না সৌভাগ্যের বিষয়! নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোরআন পড়; কারণ সে কিয়ামত দিবসে পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে। ’
ছয়.
সাধ্যমতো আল্লাহর রাস্তায় কিছু দান-সদকা করা। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সদকা পাপকে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। ’
শবেকদরের একটি রাতে এমন আরও কিছু ইবাদতের মাধ্যমে আপনি ৮৩ বছর ৪ মাসের সমান সওয়াব অর্জন করতে পারেন। ইবাদতের এই সুবর্ণ সুযোগ যেন হাত ছাড়া না হয়।
উল্লেখ যে ইবাদতের উদ্দেশ্যে বৈষয়িক কাজ-কর্মও ইবাদতে পরিণত হয়। যেমন রোজার উদ্দেশ্যে সেহরি খাওয়া, রাত জাগার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম সেরে নেয়া। তাই লাইলাতুল কদরে ইবাদতের উদ্দেশ্যে বান্দা যেসব দুনিয়াবী কাজ করে সেগুলোও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তবে শর্ত হলো তাতে কোনো ধরনের বাহুল্যতা থাকতে পারবে না। ওই সব কাজ হতে হবে ইবাদতের পরিপূরক কিংবা সহায়ক। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে শবেকদরের পূর্ণ বরকত লাভের তওফিক দান করুন। আমীন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২২
এসআই