কক্সবাজার: দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র ও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্দা উঠলো সাতদিনের পর্যটনমেলা ও বিচ কার্নিভালের। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের যাত্রা শুরু হয়।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) সাইমুম সরওয়ার কমল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনসংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জাফর আলম, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, ট্যুরিস্ট পুলিশের এস পি মো. জিল্লুর রহমান, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম, পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু হেনা প্রমুখ।
মূলত বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে ও এখানকার পর্যটন শিল্পের প্রসারে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা। বুধবার থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল চলবে।
পর্যটনমেলা ও বিচ কার্নিভালকে ঘিরে কক্সবাজার শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যটক বরণে নিয়েছে নানা প্রস্তুতি। পর্যটনমেলা ও বিচ কার্নিভালের জন্য মেলার মঞ্চ ও দুই শতাধিক স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে খাবারের রেস্তোরাঁ, কিটকটসহ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানে ‘বিশেষ ছাড়’ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পর্যটনমেলার আহ্বায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন জানিয়েছেন, পর্যটন মৌসুমকে বরণে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। একই সঙ্গে খাবারের রেস্তোরাঁয় ১৫ শতাংশ, সব বাস ভাড়ায় ২০ শতাংশ, হেলিকপ্টার জয় রাইডে ১০ শতাংশ, টায়ার টিউব ভাড়ায় ৩০ শতাংশ, কিটকট (ছাতা-চেয়ার) ভাড়ায় ৩৩ শতাংশ, ফটোগ্রাফারদের মাধ্যমে ছবি তোলা প্রতি কপি দুই টাকা, প্যারাসেইলিং রাইডে ৩০ শতাংশ, জেটস্কি ও বিচ বাইক রাইডে ৩৩ শতাংশ, লকার ভাড়ায় ৫০ শতাংশ, গাড়ি পার্কিংয়ে ৫০ শতাংশ, ফান গেমে ৫০ শতাংশসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৫টি খাতে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও বিনামূল্যে সার্কাস শোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আজ পর্যটনমেলা ও বিচ কার্নিভালের প্রথম দিনের কর্মসূচিতে বর্ণাঢ্য র্যালি, বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভা, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ-র্যালি।
এছাড়াও প্রতিদিন সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট থাকবে। এ মেলায় পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনে স্থানীয় শিল্পীর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা আসছেন। তাদের মধ্যে কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা। এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে আসা শিল্পীরা পরিবেশন করবেন হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়াপালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওইয়া গানের শিল্পীরাও আসবেন। বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দল। চট্টগ্রাম থেকে আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী প্রেম সুন্দর ছাড়াও আসবেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। একেক দিন মঞ্চে গাইবেন লিজা, ঐশী, তানজির তুহিন, রবি চৌধুরী, নিশিতা বড়ুয়াসহ আরও অনেক জাতীয় শিল্পী।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পড়েছে ঈদে মিলাদুন্নবী। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটনমেলা ও বিচ কার্নিভাল এবং তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এ মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, নানা বৈচিত্র্যে ভরা সাত দিনের এ উৎসবের রং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
এসবি/আরআইএস