ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

কেওক্রাডংয়ের দুর্গম পথে প্রশান্তির চিংড়ি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
কেওক্রাডংয়ের দুর্গম পথে প্রশান্তির চিংড়ি ছবি: আসিফ আজিজ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেওক্রাডং, রুমা, বান্দরবান থেকে: তপ্ত মরুভূমিতে বটবৃক্ষ যেমন, ৩১শ' ৭২ ফুট উঁচু কেওক্রাডং পর্বতের চূড়া আরোহণের পথে ১৬শ' ফুট বেয়ে ওঠার পর ঝরনাটিকে ঠিক তেমন মনে হলো। এক পর্যটকেরই মূল্যায়ন 'স্বর্গীয় প্রশান্তির ঝরনা'।

ঝরনার নাম চিংড়ি। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭৩ ফুট উঁচু বগালেক, সেই বগালেক থেকে কেওক্রাডং বেয়ে ওঠার সোয়া ঘণ্টা দূরত্বে এই প্রশান্তির চিংড়ি।

একঘণ্টা পাহাড় বাইতে বাইতে পা যখন জোর করে এগোনো লাগছিল, ঘামে শরীর যখন তুমুল বৃষ্টিতে ভেজার মতো থকথকে হয়ে পড়ছিল। তখন মন কেবল ছোটো-মোটো হলেও একটা ঝিরি খুঁজছিলো, চোখেমুখে যদি একটু পানি ছিটানো যায়।

মনের এই প্রার্থনা আগেই যেন প্রকৃতিদেবের কাছে ছিলো। তিনি ব্যবস্থা করে রাখলেন শান্ত-শীতল চিংড়ি ঝরনার। দূর থেকে যখন শাঁ শাঁ সুর বাজছিলো, মনে হলো যেন উড়ে ঝরনার নিচে বসে পড়ি।

ধৈর্য নিয়ে হেঁটে পাথুরে চিংড়িতে নেমে সাক্ষাৎ ফল ফেলাম। দু'পাহাড়কে পৃথক করা ঝরনায় নামতেই এর জল ছুঁয়ে আসা বাতাসে শরীর যেন শীতল হয়ে গেল, মন যেন ফুরফুরে হয়ে গেল, প্রাণশক্তি যেন চাঙ্গা হয়ে গেল। যেন সহস্র মাইল মরুপথ হেঁটে আসার পর বটবৃক্ষের নিচে বসে বিকেলের বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে নিচ্ছি।

ঝরনার পানি হাতে নিয়ে মুখে ছিটাতেই যেন মনে হলো, দিনের সব ক্লান্তি উবে গেছে। এই শীতল পানির প্রশান্তি নিয়ে হাঁটতে পারবো আরো সহস্র মাইল। বাইতে পারবো আরো কয়েক হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ি পথ।

এমন শরীর শীতল, মন ফুরফুরে, প্রাণশক্তি চাঙ্গা করতেই কিনা কেওক্রাডং আরোহণের পথে বা আরোহণ শেষে ফেরার পথে অভিযাত্রীরা একটু সময় জিরিয়ে নেন চিংড়ি ঝরনায়।
যেমন বগালেক থেকে বেয়ে ওঠার পথে চিংড়িতে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন ঢাকা থেকে আসা ৯ শিক্ষার্থী-অভিযাত্রী। ইভান রেজভী সনি, জুমান খান, মেহেদী হাসান মিলু, আপন দাস, তৌহিদ, সাইদুর, আরেফিন নামে এ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

এদের কয়েকজন গোসলও সেরে নিচ্ছিলেন চিংড়িতে।

গোসল করতে করতেই সনি বলেন, যেই ক্লান্তি ছিলো, সব উধাও হয়ে গেছে। ঝরনাটা দেখে আমি আমার মাকে ডেকেছি, 'মা, এই শান্তির আর সুন্দর ঝরনা দেখার জন্য তুমি আমারে জন্ম দিছো, তোমারে ধন্যবাদ মা। '

এমনি উচ্ছ্বাস দেখা গেল মিলুর কণ্ঠে। তিনি বলেন, রাতের পর থেকেই ক্লান্তি ভর করছিলো, এখন সব উধাও।

চিংড়ি দর্শন শেষে যখন কেওক্রাডংয়ের পথে পা এগোলো, তখন দেখা গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মনির হোসেন তার সঙ্গীদের নিয়্র ফিরছেন বগালেকের দিকে। কেওক্রাডং জয়ের পর ফেরার পথে যে ক্লান্তি জমা হয়েছে, তা ঝরনার পানিতে মুছে ফেলতে চিংড়িতে নামলেন তারাও।

হারমোন পাড়া নামে একটি পাহাড়ি গ্রাম থেকে সৃষ্ট এ ঝরনা ছন্দমায়ায় পড়ছে প্রায় ৬৫ ফুট উঁচু থেকে বড় বড় পাথরখণ্ডে। ঝরনাটির ধারা পড়েছে গিয়ে চেমাখালে, যে খাল মিলেছে একেবারে শঙ্খ বা সাঙ্গু নদীতে গিয়ে।

আরও পড়ুন-

** মুরংদের তুলার কম্বল, টেকে ২শ’ বছর
** আত্মশু‌দ্ধির আহ্বানে আকাশে শতো ফানুস
** মেঘ ফুঁড়ে পাহাড়ের গায়ে রোদ বাতি!
** জলের ওপর বসতভিটে
** হ্রদের জলে কার ছায়া গো! 
** সড়ক যেন আকাশছোঁয়ার খেলায় (ভিডিও)
** সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির সাজ
** মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ
** নট ইউজিং ‘ইউজ মি’

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
এইচএ/এএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।