ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

বাংলানিউজকে টোয়‍াস সভাপতি

পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় খুলনা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
 পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় খুলনা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনার কোল ঘেষেই সুন্দরবনের অবস্থান। আর সে জন্য সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে খুলনা শহরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভ‍াবনা রয়েছে। পদ্মাসেতু চালু হলে খুলনার পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ ঘটবে।

খুলনা: খুলনার কোল ঘেষেই সুন্দরবনের অবস্থান। আর সে জন্য সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে খুলনা শহরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভ‍াবনা রয়েছে।

পদ্মাসেতু চালু হলে খুলনার পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ ঘটবে।

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সভাপতি ও খুলনার প্রাচীন ও বিলাসবহুল হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.  ফারুক।

একই সঙ্গে তিনি দ্য রয়েল ট্যুরের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রায় ১১৮ বিঘা জমির উপর নিশি কুড়ি নামের একটি ইকোভিলা রিসোর্ট রয়েছে তার। যার তিন দিকে সুন্দরবন।
 
ফারুক আমেরিকা থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্টের উপর উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। পড়াশুনা এবং ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত কারণে ফারুক এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা এবং দুরপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যসহ এ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় অর্ধশত দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফরেন্স ও সেমিনারে যোগদান করেছেন।
 
দীর্ঘ বছর সুন্দরবনে ভ্রমণ পরিচালনা করার কারণে তাকে দেশ-বিদেশে রয়েল ফারুক হিসেবে অনেকে চেনেন।
 
বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে দীর্ঘ ভ্রমণ ও ট্যুর অপারেট করার অভিজ্ঞতা এবং পর্যটন শিল্পের নানা দিক নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

বাংলানিউজ: কবে থেকে সুন্দরবনে যাওয়া-আসা?

ফারুক: ১৯৮৪ সাল থেকে সুন্দরবনে যাওয়া আসা করি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ করে এক ধরণের নেশায় ১৯৮৮ সাল থেকে গাইড হিসেবে ট্যুর পরিচালনা করছি।

বাংলানিউজ: কবে থেকে ব্যবসা শুরু করেন?

ফারুক: আমার জন্ম ১৯৬১ সালের ১৬ আগষ্ট খুলনা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবারে।   বাবা হাজী মো. নূরআলী সাহেব একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। আমি বড় ছেলে। শখের বসে মাত্র ১৭ বছর ৪ মাস বয়স থেকে ব্যবসা শুরু করি।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

ফারুক: পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত। পৃথিবীর অনেক দেশ এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে নেপাল, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ পর্যটন শিল্প থেকে আয় করে থাকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ সমুদ্র সৈকত (কক্সবাজার), এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বন (সুন্দরবন), কুয়াকাটার মত মনোরম পরিবেশ এবং মহাস্থানগড় ও সোনামসজিদের মত রয়েছে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে বিদেশি পর্যটকদের প্রতি সহজেই বাংলাদেশ ভ্রমনে আকৃষ্ট করা এবং পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিরাট অবদান রাখা সম্ভব।

বাংলানিউজ: আপনার দ্য রয়েল ট্যুর কেন প্রতিষ্ঠা করলেন?

ফারুক: হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের একটি স্বতন্ত্র ব্যাজ রয়েছে এবং এই ব্যাজকে কেন্দ্র করে দেশের পর্যটন খাতে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা নিয়ে দ্য রয়েল ট্যুর সুদীর্ঘ বছর ধরে অনেক কম খরচে অথচ অতিরিক্ত কিছু আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে পর্যটকদের নিয়মিত সুন্দরবন ভ্রমনের সকল প্রকার ব্যবস্থা করে আসছে। এই সংস্থার নিজস্ব লঞ্চ ও স্পিড বোর্ডসহ আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা আছে।

বাংলানিউজ: পর্যটক বৃদ্ধিতে কি করণীয় বলে মনে করেন?

ফারুক: পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক সম্পদই রয়েছে আমাদের এই দেশে। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে পর্যটকরা বিব্রত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে এয়ারপোর্টে নামার পরই তাদের ফুল দিয়ে বরণের পরিবর্তে চেকিংয়ের নামে হয়রানি ও সময় নষ্ট করা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যটন খাতে অন্যতম বিষয়। সরকারি উদ্যোগে উন্নতর যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করন, ট্যুরিষ্ট স্টাফগুলোকে উন্নয়ন, সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণ করে মনোরম করে গড়ে তোলা এবং সাইড সিকেলশনসহ পর্যটন সংক্রান্ত সকল প্রকার আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধার বিবরণসহ পর্যটন সংক্রান্ত তথ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা গেলে পর্যটকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

বাংলানিউজ: সম্ভাবনাময় সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পে সেবার মান বাড়াতে কি করা যেতে পারে?

ফারুক:  নানা প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে সুন্দরবনের পর্যটন খাতের বিকাশ। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনা পোহাতেই হয়। এখানে নেই উন্নত যাতায়াত, চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। এছাড়া সুন্দরবনে গেলে ডাকাতে ভয়, বাঘে খেয়ে ফেলবে এমন অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। পর্যটন খাত থেকে বন বিভাগ রাজস্ব আয় করলেও পর্যটকদের জন্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা করাও সম্ভব হয় না। কোনো নীতিমালা না থাকায় ইচ্ছামতো সুযোগ নেন কিছু  ট্যুর অপারেটররা। তারা পর্যটকদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করেন। এটা কোনভাবেই ঠিক নয়। শুধু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সুন্দরবনের পর্যটন খাত বিকশিত হতে পারছে না। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা যেতো। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তরুণ, স্মার্ট শিক্ষার্থীদের স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা দিয়ে ট্যুর গাইড হিসেবে তৈরি করতে হবে।

বাংলানিউজ: ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) লক্ষ্য কি?

ফারুক: ভ্রমণের সময় পর্যটকের জন্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।   ভ্রমণের সময় পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী যুক্তিসঙ্গত সেবা দেওয়া। সর্বোপরি সুন্দরবনকে পর্যটকদের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা ‍ও সুন্দরবনের সুরক্ষা করা এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য। ১১ সদস্য বিশিষ্ট টোয়াসের একটি কমিটি রয়েছে। টোয়াসের আওতাধীন ২৩টি ট্যুরিষ্ট সংস্থা রয়েছে। ৬১ জন ট্যুর অপারেটর রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
এমআরএম/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।