ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ নেতাজী থেকে উত্তম-সুচিত্রা

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ নেতাজী থেকে উত্তম-সুচিত্রা প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ-ছবি: আসিফ আজিজ

কলকাতা: গল্পটা ভারি অদ্ভুত। শিরোনাম হতে পারে ‘বিপ্লবী থেকে শরবত ব্যবসায়ী’। না, মজা নয়। গল্পটা সত্যি এরকম। বরিশাল অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন বিপ্লবী নীহাররঞ্জন মজুমদার। তাঁর কাছে শরবতের আরেক অর্থ ছিলো আতিথেয়তা। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন নীহাররঞ্জনের অত্যন্ত কাছের। একদিন তিনিই বলেন, নীহার এমন একটি শরবত বানাও যেটায় তৃষ্ণাও মিটবে, পেটও ভরবে।

শরবতরসিক নীহার প্রাকৃতিক উৎস কাজে লাগিয়ে দারুণ এক পরিকল্পনা করে উদ্ভাবন করলেন ডাবের শরবত। ডাবের পানির সঙ্গে সিরাপ,শাঁস মিশিয়ে তৈরি সে শরবত সত্যি তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি পেট ভরালো।

এভাবে ১৯১৮ সালে ৯৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘প্যারামাউন্ট শরবতঘর’।

নামি দামি ব্র্যান্ড খাবারের ভিড়েও শরবত যে মানুষকে এখনও দারুণভাবে বুঁদ করে রেখেছে, তা প্রাকসন্ধ্যায় ৪০ জন বসার উপযোগী লম্বা চিকন ঘরটিতে পা দিয়েই বুঝতে বাকি রইলো না। তখন রীতিমতো লাইন পড়ে গেছে। বাইরে পাতা বেঞ্চে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন খালি হবে ভেতরটা। কেউ কেউ অপেক্ষা না করে বাইরে বসেই সারছেন খাইদাই।
প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ-ছবি: আসিফ আজিজ
সাজানো ছিমছাম ঘরটিতে কাজ করছেন সব মেয়েরা। কথা বলার ফুরসৎ নেই তাদের। শুধু মুহুর্মুহু গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তিনটে কেশর, দুটো ডাব, একটা ট্যামারিন্ড। আর ভেতর থেকে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে গ্লাস সেজে আসছে মোহনীয় শরবত।

প্রায় বিশ পদের শরবত থাকলে বেশি চাহিদা দেখা গেলো ১০০ টাকা দামের কেশর আর ৫০ টাকা দামের ডাবের শরবতের।
প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ-ছবি: আসিফ আজিজ
বঙ্কিমচন্দ্র স্ট্রিটে নিতান্ত শখের বশে গড়ে তোলা নীহারবাবুর এ শরবতঘরে পা রেখেছেন তদানীন্তন ও বর্তমানের প্রায় সব লিজেন্ডরা। ঘরটিতে নীহারবাবুর একখানা ছবি ছাড়াও বিশাল এক তালিকা টাঙানো রয়েছে প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ হওয়া বিখ্যাতদের।

এর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে বাংলার কিংবদন্তি ক্রিকেটার, বাংলার মহারাজ, দাদা সৌরভ গাঙ্গুলীর নাম। এছাড়া নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, জগদীশ চন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, পুলিন বিহারী দাস, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র দাস, শচীনদেব বর্মণ, বিকাশ দত্ত, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বনফুল, সমরেশ বসু, অমর্ত্য সেন, শঙ্খ ঘোষ, তসলিমা নাসরিন, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, রবি ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ নামের বহর বিশাল।
প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ-ছবি: আসিফ আজিজ
কলেজ স্ট্রিটের বিখ্যাত বইপাড়া, কফি হাউস, প্রেসিডেন্সি কলেজ, সংস্কৃত কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্টের একেবারে কাছেই। বিকেল থেকে পা ফেলার জায়গা থাকে না। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, বাংলাদেশসহ নানান দেশের পর্যটকরা এখনও ছুটে যান এ শরবতের টানে।
শত বছর আগে শুধু শরবত তৈরি করে ব্যবসার কথা সত্যি ভাবা যায় না। তা-ও আবার এতো বিখ্যাত। এখানকার শরবতের সেই আদি পন্থা এখনও ধরে রাখা হয়েছে। প্লেন পানি দিয়ে কোনো শরবত এখানে তৈরি করা হয় না। তাই গ্লাসের সঙ্গে সব সময় দেওয়া হয় চামচ। স্ট্র দিলেও তাকে টান দিলে আটকে যায় নিচের ঘন উপাদানে। সব শরবতই ঠান্ডা। ডাবের শরবতে পানি ও অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে সঙ্গে থাকে ডাবের শাঁস, জনপ্রিয় কেশর শরবতেও থাকে বড় বড় সব উপাদেয় উপাদান। স্বাদেও অতুলনীয়।
প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ-ছবি: আসিফ আজিজ
শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও সব বয়সী মানুষকেই দেখা গেল লাইন ধরে শরবত চেখে দেখতে। প্যাশন ফ্রুটস, কোকোনাট, ম্যাঙ্গো ম্যানিয়া, কেশর মালাই, পাইনাপল মালাই, রোজ, স্ট্রবেরি, ব্যানানা, ভ্যানিলা মালাইসহ ডাব, তেঁতুল, লিচু, কমলা প্রভৃতির শরবত পাওয়া যায় প্যারামাউন্টে। দাম সর্বনিম্ন ৫০, সর্বোচ্চ ১২০ রুপি।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
এএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।