ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

নিভৃত পল্লীর চমকিত বিস্ময়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
নিভৃত পল্লীর চমকিত বিস্ময়! ‌এসকেএস ইন। ছবি: আসাদ জামান

এসকেএস ইন (গাইবান্ধা) থেকে: মাটি থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ফুট উঁচু বেলকনির পাশে কামরাঙ্গার সবুজ পাতার আড়ালে কিচিরমিচির শব্দ। স্বর্ণালী, কঞ্চি ও ঘটি বাঁশের ঝোঁপে ফুরুৎ ফুরুৎ ডানা ঝাঁপটানি! অধিকন্তু আপনার বেলকনিটি বিশ্বের যে কোনো উন্নত দেশের ফাইভ স্টার হোটেল মানের!

বেলকুনির রেলিং ধরে আপনি দাঁড়িযে আছেন অথবা টবে রাখা পাম ট্রি’র পাশে ব্রাউন কালারের প্লাস্টিক ফিতায় বোনা ইজি চেয়ারে বসে আসেন। হঠাৎ আপনার নাকের ডগা ছুঁয়ে উড়ে গেলো ছোট্ট চড়ুই পাখি।



কাঁঠাল চাপার আড়ালে নড়ে-চড়ে উঠছে ফিঙ্গে-বুলবুলি! পানির নিচে ডুবে থাকা মাঠে শাপলা-শালুক, জলকচু, কলমিলতা, শ্যাওলা ও কচুরিপানা! জলের সংসার তছনছ করা মিঠা পানির হরেক রকম মাছের জলকেলি! কাঁঠাল ও আমগাছের কোঠরে ঝিঁঝি পোকার ডাক! সন্ধ্যায় থোকায় থোকায় জোনাক মিছিল!

এর কোনো কিছুই কৃত্রিম নয়। সব কিছুই প্রাকৃতিক। সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ভুবনখ্যাত পাঁচ তারকা হোটেলের সেবা! বিছানা, আসবাবপত্র এবং আধুনিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধার সমাহার!
 
মনে হতে পারে, আপনাকে কল্পনার জগতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আসলে তা নয়, পুরোটাই বাস্তব। আর এই কল্পনার জগতকে বাস্তবে নিয়ে এসেছে এসকেএস ইন রিসোর্ট!
 
‌এসকেএস ইন।  ছবি: আসাদ জামানগাইবান্ধা জেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রাধাকৃঞ্চপুর কলেজ রোডে এর অবস্থান। মূলত, এটি একটি রিসোর্ট কাম ট্রেনিং সেন্টার। বিভিন্ন করপোরেট মিটিং, ট্রেনিং এবং পরিবার ও বন্ধুবান্ধবসহ অবকাশ যাপনের জন্য এসকেএস ইন একটি আদর্শ স্থাপনা।
 
শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এ রিসোর্ট দেশি-বিদেশি পযর্টকদের জন্যও অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান। বাংলার নির্ভেজাল প্রাকৃতিক রূপ দেখে যারা তৃপ্ত হতে চান, তাদের জন্য এসকেএস ইন রিসোর্ট হতে পারে প্রথম পছন্দ।
 
বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকা প্রত্যন্ত পল্লীর সমতল ভূমিতে নির্মিত উন্নত সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এ রিসোর্ট আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে।
 
‌এসকেএস ইন।  ছবি: আসাদ জামানবিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি রিসোর্টের সবুজ ক্যাম্পাসে নীকুঞ্জ, কামিনী, ছায়ানীড় নামে ৩টি কটেজ রয়েছে। এর যে কোনো একটিতে রাত্রিযাপন করলে আপনার জন্য স্বর্ণালী, কঞ্চি ও ঘাটি বাঁশের ঝোঁপ থেকে ভেসে আসা চড়ুই পাখির কিচিরমিচির ফ্রি।
 
যে মৌসুমেই আপনি এসকেএস ইন রিসোর্টে অতিথি হোন না কেন, কটেজের চারপাশ থেকে বকুল, স্বর্ণচাঁপা, কামিনী, কাঠ গোলাপ, কাঠ মালতী, শঙ্কর কামিনী, সাদা গোলাচি, শেফালি-শিউলী আপনাকে মধুর সম্ভাষণ জানাবে।
 
পুকুর পাড়ে নির্মিত কাশফুল ও নীলপদ্ম কটেজ দু’টির যে কোনো একটিতে অতিথি হলে রাতভর শুনতে পাবেন মাছের ঘাঁই এর মোলায়েম শব্দ। চার দিক ঘিরে রাখা বৃক্ষরাজী থেকে হরেক রকম পাখির ডাক আপনাকে নিয়ে যাবে নৈসর্গিক আনন্দলোকে!
 
এছাড়া চারতলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ভবন ‘সারাবেলা’, ‘রাধাকুঞ্জ’ ও ‘ভবানীগঞ্জ’-এ অতিথি হতে পারেন আপনি। ফাইভ স্টার মানের এসব বিল্ডিংয়ের যে রুমেই আপনি রাতযাপন করেন না কেন, দিগন্ত জোড়া প্রকৃতিক সৌন্দয্য আপনাকে সাদর সম্ভাষণ জানাবে।
 
‌এসকেএস ইন।  ছবি: আসাদ জামানএসকেএস ইন রিসোর্টের অতিথিদের জন্য রয়েছে উন্নত মানের সুইমিংপুল, সুইমিং পুলের পাড়ে ছোট পরিসরে জিম, শিশুদের জন্য বড় পরিসরে প্লে-জোন, পাশেই সুদৃশ্য ফোয়ারা।
 
অতিথিদের জন্য পুকুরে রয়েছে তিনটি রাইড। রিসোর্টে রুম ভাড়া করলেই সুইমিংপুল, জিম, পুকুরের রাইড, বাচ্চাদের প্লে-গ্রাউন্ড একেবারে ফ্রি। ছোট্ট পরিসরে কোনো কালচারাল অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পুকুর পাড়েই রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ। আর অনূন্য ৩ শ’ লোকের কালচারাল প্রোগ্রাম আয়োজনে রয়েছে আরেকটি উন্মুক্ত মঞ্চ। ফোয়ারার পাশে এই উন্মুক্ত মঞ্চে যে কোনো আয়োজন মুগ্ধতা ছড়াবে।
 
বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার ও ট্রেনিং সেশনের জন্য রয়েছে সুবিস্তৃত ব্যানকুয়েট হল। উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেম, আধুনিক আসবাবপত্র, বিশ্ব মানের সেবা আপনার আয়োজনকে করবে মহিমান্বিত।
 
এসকেএস ইন নিসর্গ প্রেমিদের কাছে হতে পারে তীর্থস্থান। যারা গাছ-গাছালি, বৃক্ষ-গুল্ম-লতাদি, ফুল-ফল-ওষুধি নিয়ে কাজ করেন অথবা এগুলো দেখে চমৎকৃত হন, তাদের জন্য এসকেএস ইন আনন্দের ডালা সাজিয়ে বসে আছে। পুরো ক্যাম্পাস ‍জুড়ে রয়েছে হাজার প্রকৃতির গাছ।
 
জীবনে যেসব গাছ আপনি বার বার দেখেছেন, সেসব গাছের পাশে স্পষ্ট বাংলায় নাম, বৈজ্ঞানিক পরিচিতি এবং কোন দেশ থেকে আনা হয়েছে তা পরিষ্কার ভাষায় লেখা।
 
আবার অনেক গাছের নাম শুনেছেন, কিন্তু চোখে দেখেন নি, সে সব গাছ দু’চোখে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এসকেএস ইন। অনেক ফল আপনি খেয়েছেন, কিন্তু ফলের গাছটি চোখে দেখেননি, সেটিও দেখার অবারিত সুযোগ পাবেন এসকেএস ইন-এ।

‌এসকেএস ইন।  ছবি: আসাদ জামানযেমন-কাঠ বাদাম, ড্রাগন, নাশপাতি, ত্রি-রঙাগোলাচি, কেরালা নারিকেল, আঁশফল, লটকন, পেস্তাবাদাম, লোকাট, চেরি ফল, চালতা, বাউ জামরুলসহ নানা প্রজাতির ফল গাছ।
 
এসকেএস ইন-এর পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানেই বসবেন, সেখান থেকেই আন্ডারগ্রাউন্ড সাউন্ড সিস্টেমে শুনতে পাবেন রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি অথবা পুরনো দিনের গান।
 
গাছের লতা-পাতা, ফুল-ফলের ক্ষতি সাধন না করে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৬ টা পযর্ন্ত-এই আড়াই ঘণ্টা যে কেউ এসকেএস ইন-এ ঘোরাঘুরির সুযোগ পাবেন।
 
আর রুম ভাড়া করে চব্বিশ ঘণ্টাই অবস্থানের সুযোগ রয়েছে এখানে। রুমের রকমফের অনুযায়ী ভাড়া ১,৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। মাঝে মধ্যে ৩০% পযর্ন্ত ছাড় পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।