ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

ঘুরে আসুন গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ’র সমাধি

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৮
ঘুরে আসুন গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ’র সমাধি গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ’র সমাধি

মধ্যযুগে বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজবংশ ইলিয়াস শাহী রাজবংশ। এই রাজবংশ চৌদ্দ ও পনের শতকে বাংলা শাসন করেছে। এর আগে বাংলা দিল্লির শাসনাধীন ছিল। এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ। তিনি বাংলাকে দিল্লির অধীন থেকে মুক্ত করে বাংলায় সুলতানী শাসন কায়েম করেন। ইলিয়াস শাহী রাজবংশের প্রথম রাজধানী ছিল পান্ডুয়ায়। পান্ডুয়া একশ বছর সুলতানী রাজধানী ছিল। এর পর ১৪৫৩ সালে ইলিয়াস শাহী বংশের অষ্টম সুলতান নাসির উদ্দিন লখনৌতে রাজধানী স্থাপন করেন।

ইলিয়াস শাহী রাজবংশ প্রায় দেড়শ বছর রাজত্ব করেছে। এই রাজবংশের মোট ১২ জন শাসক বিভিন্ন সময়ে বাংলা শাসন করেছেন।

এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় সুলতানরা হলেন ইলিয়াস শাহ, সিকান্দার শাহ, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ, আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ।

এই ইলিয়াস শাহী রাজবংশেরই তৃতীয় সুলতান ছিলেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ। তিনি ১৩৮৯ সাল থেকে ১৪১০ সালে বাংলা শাসন করেন।
গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ’র সমাধিসুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ রাজ্য বিস্তৃতির চেয়ে সুশাসনের প্রতিই বেশি মনোযোগী ছিলেন। রাজ্যকে সমৃদ্ধ করতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। তাই প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর সঙ্গে তিনি মিত্রতার নীতি মেনে চলতেন। রাজ্য বিস্তৃতি ও যুদ্ধের চেয়ে কূটনীতির প্রতিই বেশি আস্থা রাখতেন। তার সমসাময়িক অন্য রাজা ও সম্রাটদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বজায় রেখে চলতেন।

গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ পণ্ডিত ও জ্ঞানী-গুণীদের সমাদর করতেন। সেই সময়ে পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফিজের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ কবি হাফিজকে তার রাজ্যে আমন্ত্রণ করেছিলেন। কবি হাফিজও আযম শাহের দরবারে আসার ইচ্ছা পোষণ করতেন। আযম শাহের আমন্ত্রণের জবাবে কবি হাফিজ তাকে একটি গজল রচনা করে পাঠান, যেখানে তিনি আযম শাহের দরবারে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত প্রকাশ করেন।  
গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ’র সমাধিস্থলগিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সময়েই কবি শাহ মুহম্মদ সগীর তার বিখ্যাত রচনা ‘ইউসুফ-জুলেখা’ রচনা করেন। কৃত্তিবাসের ‘রামায়ন’ ও তার সময়েই বাংলায় অনুবাদ করা হয়। আলাউল হক ও নূর কুতুব আলমও তার সময়ের বিখ্যাত কবি। ১৪১১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার শাহচিল্লাপুর গ্রামেই রয়েছে গিয়াস উদ্দিন আযম শাহর সমাধি। একথা হয়তো আমাদের অনেকেরই কাছে অজানা। কষ্টিপাথরে নির্মিত এ সমাধিটিতে রয়েছে সূক্ষ্ম কারুকাজ খচিত অলংকার। মধ্যযুগে বাংলার অন্যতম শাসক এই সুলতানের সমাধি আমাদের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন। সমাধিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরে অনেকেই যান, কিন্তু আযম শাহের সমাধির কথা অনেকেই জানেন না। তাই খুব কম দর্শনার্থীই তার সমাধি দেখতে যান। এক্ষেত্রে পর্যটন করপোরেশন ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।