ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

চাঁপাইয়ে ক্ষিরসাপাত, ঢাকায় নাম হিমসাগর!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
চাঁপাইয়ে ক্ষিরসাপাত, ঢাকায় নাম হিমসাগর! চাঁপাইয়ে ক্ষিরসাপাত আম। ছবি: আসিফ আজিজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ​: আমের দেশ যদি রাজশাহী হয়, তবে রাজধানী নিঃসন্দেহে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মুর্শিদাবাদ, মালদাহ যেমন সেরা আমের জন্য ভারতবিখ্যাত, তেমন এই দুই জেলাঘেঁষা চাঁপাইও বাংলাদেশের আমের প্রাণ। আর জাত আম হিমসাগরকে আবার আমের রাজা মানে দুই দেশের এই দুই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু ল্যাংড়া। সম্প্রতি জিআই (ভৌগলিক পরিচয়) পাওয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকায় হিমসাগরের গুরুত্ব বেড়েছে আরও।

কিন্তু মজার বিষয়, ঢাকাসহ সারাদেশে হিমসাগর নামে পরিচিত হলেও চাঁপাইয়ের মানুষ একে ক্ষিরসাপাত বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বড় বড় আম ব্যবসায়ী ও চাষিরাও ক্ষিরসাপাতই বলেন।

চাঁপাই সদরের মহানন্দা নদীপাড়ের চামা গ্রামের প্রায় ১০০ বিঘা আম বাগানের ইজারাদার মো. আবদুল বারী। বুধবার (৩০ মে) রাতের আম বাগান দেখতে তার বাগানে ঢুঁ মারা। বাগানের কর্মীরা তখন রাতের খাবার খেতে ব্যস্ত। সঙ্গে চলছে আগামী দিনের কাজ ভাগাভাগি। গাছে ঝুলে আছে চাঁপাইয়ে ক্ষিরসাপাত আম।  ছবি: আসিফ আজিজডেরায় ঢুকে প্রথমেই বাগানের আম সংরক্ষণ ঘরের চৌকিতে রাখা আমটি নজর কাড়লো। কি আম জানতে চাইলে বলেন, এটা ক্ষিরসাপাত। তবে আপনাদের ঢাকায় এটা হিমাসাগর নামেই বিক্রি হয়।

তার এই একটি বাক্য আগ্রহ বাড়িয়ে দিলো কয়েকগুণ। ক্ষিরসাপাতকে হিমসাগর বলে বিক্রি করা হয় ঢাকায়! মনে মনে তখন বলছি, এতো বড় প্রতারণা! আবার দেখে হিমসাগর বলেই মনে হচ্ছিলো। তবে আদতে হিমসাগরই ভুল চিনে এসেছি! এমন নানান প্রশ্ন মনে। এক পর্যায়ে গাছে আম দেখতে চাইলে তিনি টর্চ নিয়ে গেলেন বাগানে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ এমন একটি জেলা যেখানে যেদিকেই তাকানো যায় শুধু আম আর আম। কখনও মনে হতে পারে এখানে কি অন্য গাছ জন্মে না! সে যাইহোক রাতেও এই বড় বড় বাগানগুলোতে চলে কর্মযজ্ঞ। চাঁপাইয়ে ক্ষিরসাপাত আম।  ছবি: আসিফ আজিজরাতের বাগানও কম মোহনীয় নয়। যারা শুধু আম দেখতে চাঁপাই বেড়াতে আসেন তাদের রাতের বাগানও একবার দেখা উচিত। টর্চ কিংবা মোবাইলের আলো জ্বেলে দারুণ কোনো স্বপ্নের মতো দুলতে থাকা পছন্দের চকচকে তাজা আম দেখার অনুভূতিই অন্যরকম।

কখনও সুনসান নীরবতা ভাঙে ঢপ করে পড়া একটি পাকা আম কিংবা বাদুড় বা পাখির ডানার ঝাপটা।

বারীর সঙ্গে যেতে যেতে বাগানে ঝুলতে থাকা আমগুলোর সঙ্গে যেন ঠোকাঠুকি লাগছিল প্রতি মুহূর্তে। গাছগুলোর ডালপালাও অদ্ভুতভাবে সাজানো গোছানো। মানুষের যত্নের যেন প্রতিদান দিয়েছে প্রকৃতি। একটু এগিয়ে অসংখ্য আম ঝুলতে থাকা একটি গাছ দেখিয়ে বললেন, এটি ল্যাংড়া। আর পাশের ওইটি ক্ষিরসাপাত। আসলে ক্ষিরসাপাতকেই ঢাকায় হিমসাগর বলে বিক্রি করা হয়। কিন্তু চাঁপাইয়ের মানুষ একে ক্ষিরসাপাতই বলে। গাছে ঝুলে আছে চাঁপাইয়ে ক্ষিরসাপাত আম।  ছবি: আসিফ আজিজকথা শুনে যেন ধড়ে কিছুটা প্রাণ এলো।

এই ব্যবসায়ীসহ আশপাশে থাকা কর্মীরাও কথা টেনে বললেন একই কথা। তাদের বক্তব্য, আমাদের অঞ্চলে প্রায় সবাই একে ক্ষিরসাপাতই বলে। কিন্তু যখন ঢাকায় নিয়ে একে ক্ষিরসাপাত নামে বিক্রি করা হয় তখন দাম মেলে না। কারণ ঢাকার মানুষ হিমসাগরকে ভালো আম নামে জানে। আদতে দুটি আম যে একই সেটা তারা মানতে নারাজ। তাই আমরাও এখন ঢাকার পার্টির কাছে ক্ষিরসাপাত বলি না। আর যাদের বলি তাদের কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দেই। অনেকে এখন জেনে গেছে।

হিমসাগর আর ল্যাংড়া আম বিক্রি করেই মূলত ইজারার টাকা ওঠে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। তাই বলে গোপালভোগ, ফজলির গুরুত্বও কম নয়। চাঁদকে শতনামে ডাকলেও চাঁদের সৌন্দর্যে তাতে যেমন ভাটা পড়ে না, তেমন হিমসাগরকে যে নামেই ডাকা হোক তার স্বাদের কোনো তুলনা চলে না। এটাই সত্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
এএ..

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।