ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

আমের সঙ্গে তার অদৃশ্য বাঁধন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৮
আমের সঙ্গে তার অদৃশ্য বাঁধন বানেশ্বর হাটের এক কোণেই খাঁচির পসরা নিয়ে বসেন সাইদুর। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী থেকে: সাইদুর রহমান আমচাষি নন, নন ফড়িয়া কিংবা ব্যবসায়ীও। তবুও আমের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। আমের মৌসুমে বাড়তি রোজগার করেন। তাই নিয়ে টেনেটুনে চলে যায় সংসার। 

তার চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। প্রকৃত ভূমিহীন বলা যায় সাইদুরকে।

পৈত্রিকসূত্রে মাত্র এক কাঠা বসতজমি পেয়েছেন। সেখানে অন্য দুই ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনিও পরিবার নিয়ে থাকেন। সে কারণে আমের বাগান তো দূরের কথা একটি গাছ লাগানোর মতো উপায়ও নেই তার।
 
আবার তেমন মূলধনও নেই যে বাগান লিজ নেবেন। রাজশাহী অঞ্চলে আম বাগানগুলো এতো বড় যে একেকটি বাগান লিজ নিতে হলে লাখ টাকা থেকে কোটি টাকার মতো মূলধন প্রয়োজন হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা সদরের সবচেয়ে কাছের যে বাগানটি রয়েছে সেটির পাঁচ বছরের লিজিং মানি নির্ধারিত হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। লিজ গ্রহীতাকে প্রতি বছর আরও ৮ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয় পরিচর্যায়। তাহলে সহজেই বুঝতে পারছেন লিজ নেওয়া সাইদুরের পক্ষে আকাশ কুসুম কল্পনার মতোই। বানেশ্বর হাটের এক কোণেই খাঁচির পসরা নিয়ে বসেন সাইদুর।  ছবি: বাংলানিউজ
 আপাতদৃষ্টিতে আমের সঙ্গে যুক্ত না হলেও আমের উপর নির্ভরশীল তার সংসার। তবে আম নয়, আম পরিবহনের খাঁচি বিক্রি করেন তিনি রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বর কাচারী মাঠে(রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পাশে)।
 
শুক্রবার (১ জুন) সকালে বানেশ্বর হাটে কথা হয় তার সঙ্গে। সকাল ৮টায় হালকা বৃষ্টির মধ্যেই তখন এক-দু’জন করে আমচাষি ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে আম নিয়ে হাজির হচ্ছিলেন। টুকটাক বেচাকেনা তখন শুরু হয়েছে। ভরা মৌসুমে বাজার ছাপিয়ে মহাসড়কে পৌঁছে যায় আমের পসরা।
 
বর্তমানে বাজারে আসা আমের মধ্যে আধিক্য লক্ষণভোগের (স্থানীয় নাম লকনা)। এর পরে রয়েছে সিদুরি (স্থানীয় নাম বউ সুন্দরী) গুটি এবং অল্প পরিমাণে হিমসাগর। আমচাষিদের মধ্যে হিমসাগরের চাষিদের খাতির-যত্ন চোখে পড়ার মতো। হিমসাগর নিয়ে কেউ এলেই তাকে ঘিরে ধরছে ক্রেতারা। অন্যদের ততটা কদর লক্ষ্য করা গেলো না। লকনা মাত্র ৯শ’ টাকা (প্রতি মণ) দরে বিক্রি হচ্ছে।
 
বানেশ্বর হাটের এক কোণেই খাঁচির পসরা নিয়ে বসেন সাইদুর। দীর্ঘ আট বছর ধরে আমের মৌসুমে খাঁচি বিক্রি করেন তিনি। অন্য সময়ে বস্তা বিক্রি করে চলে সংসার। আগে ভ্যান চালাতেন। শরীরিক দুর্বলতার কারণে ভ্যান চালানো ছেড়ে দিয়েছেন। সেই থেকে বস্তা বিক্রি করে সংসার চালান। কিন্তু এই আয় দিয়ে তার চারজনের সংসার চলে না।
 
খাঁচির ব্যবসা শুরু করে কিছুটা ভালো আছেন বলে জানান সাইদুর। মোটামুটি ভালোই আয় হয় তার। সংসার চালিয়ে কিছুটা জমা করতে পারেন। সেটা দিয়ে টেনেটুনে বছর পার করেন। বড় ছেলে শারিরীক প্রতিবন্ধী। সে প্রাইমারি পাস করেছে। ছোট মেয়েটা এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বানেশ্বর হাটের এক কোণেই খাঁচির পসরা নিয়ে বসেন সাইদুর।  ছবি: বাংলানিউজ
 তার খাঁচির যোগান আসে রাজশাহীর বাঘা ও সিরাজগঞ্জ থেকে। বড় সাইজের একটি খাঁচি সাড়ে তিন থেকে ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব খাঁচিতে প্রায় তিন মণ আম ভরানো যায়। এরচেয়ে সাইজে ছোট ১ মণ আম বহন করা যায় এমন খাঁচি ৩৫ টাকা, ২৫ কেজির খাঁচি ২০ টাকা ও ১৫ কেজির খাঁচি ১০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এর সঙ্গে রেখেছেন নানা সাইজের কাগজের কার্টনও।
 
এ বছর কেমন বেচাকেনা হচ্ছে জানতে চাইলে মুচকি হাসি দিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমত এবার আম ভালোই হয়েছে রাজশাহীতে। সবে তো মৌসুম শুরু, আশা করছি ভালোই হবে। বৃহস্পতিবার (৩১ মে) প্রায় ১০ হাজার টাকার খাঁচি বিক্রি হয়েছে।  
 
সাইদুরের মতো হাজারও লোক রয়েছে যাদের আমের সঙ্গে অদৃশ্য সুতার বাঁধন। আম ভালো হলে তাদের মুখে হাসি ফোটে। আর কোনো কারণে আমের ফলন কমে গেলে তাদেরও সংসারে মন্দা দেখা দেয়। আবার আম নিয়ে যখন নানা রকম অপপ্রচার চলে তখন তাদের মধ্যে হতাশা ভর করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৮
এসআই/আরআর.

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।