ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো সিলেটের পর্যটন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো সিলেটের পর্যটন ...

সিলেট: উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলা মুড়ানো চা বাগানের সবুজ গালিচা। নারীর হাতের কোমল স্পর্শে ওঠছে চা গাছের কুঁড়ি। সবুজের বুকে নারী চা শ্রমিকের হাতের এমন শৈল্পিকতার ছোঁয়াও পখর করেন সিলেটে আসা পর্যটকরা।

এমন নৈসর্গিক সুন্দর্যে ভরপুর সিলেটের পর্যটন। সিলেটের বৃহৎ লাক্কাতুড়া ও মালনীছড়া চা বাগানই নয়।

এ অঞ্চলে আসা পর্যটকদের মন জুড়ায় সৌন্দর্যের রানী খ্যাত জাফলং, নীলনদ খ্যাত স্বচ্ছ জলরাশির লালাখাল, পাথর জলের মিতালীতে বয়ে যাওয়া বিছনাকান্দির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, পাহাড় ভেদ করে নেমে আসা পাংথুমাই ঝর্ণা, কোম্পানিগঞ্জের সাদা পাথর ও স্বচ্ছ জলের উৎমাছড়া, সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল, ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি এবং কানাইঘাটের লোভাছড়ার সৌন্দর্য এ ঈদে ঘুরে যেতে পারেন আপনিও।  
 
এছাড়াও সিলেটের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান হযরত শাহজালাল (রা.) ও হযরত শাহ পরাণ (রা.) এর মাজার শরীফ, গৌড় গোবিন্দ টিলা, পেঁচাগড় হারুং হুরুং গুহা, ঐতিহাসিক কীন ব্রিজ ও আলী আমজদের ঘড়ি, মনিপুরী রাজবাড়ী, মনিপুরী মিউজিয়াম, জৈন্তাপূর (পুরানো রাজবাড়ী), মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি, কৈলাশটিলা, হাসন রাজা জাদুঘর (রাজার্স অব মিউজিয়াম), খান বাহাদুর জিতু মিয়ার বাড়ি, সেলফি ব্রিজ কাজিরবাজার, ওসমানী শিশু পার্ক ও জাদুঘর, ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ, তামাবিল শুল্ক বন্দর। ন্যাচারাল পার্ক ড্রিমল্যান্ড, পর্যটন মোটেল-যেখান থেকে ওসমানী বিমান বন্দর ও সিলেট ক্যাডেট কলেজের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করা হয়।

সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রীমঙ্গল (চা বাগান, লাউয়াছড়া বন, মাধবপুর লেক), হামহাম জলপ্রপাত, মির্জাপুর ইস্পাহানী চা বাগান, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, নীলকন্ঠ (সাত রংঙের চা)। হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা উদ্যান, এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। সুনামগঞ্জের জাদুকাটা, শিমুলতলা, টাঙ্গুয়ার হাওর, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের বাড়ি, হাসন রাজার জাদুঘর।
 
চা বাগান: লাক্কাতুড়া ও মালনীছড়া চা বাগান দু’টি নগরের উপকন্ঠে মাত্র ১৫ মিনিট লাগে। নগরের আম্বরখানা থেকে অটোরিকশায় ১০ মিনিটের পথ। ভাড়া নেবে ১০/১৫ টাকা।
লালাখাল।  ছবি: বাংলানিউজরাতারগুল: গাছের সঙ্গে জলের মিতালী। এ যেন আরেক ম্যানগ্রোভ বন। সিলেটের সুন্দরবন খ্যাত দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (জলার বন) রাতারগুল। সবুজ বনের ভেতর নৌকায় ঘুরে বেড়ানো সে এক দারুণ অ্যাডভেঞ্চার। পুরো সোয়াম্প ফরেস্ট এক নজরে দেখতে উঠতে পারেন বনের ভেতর ওয়াচটাওয়ারে।
 
জলমগ্ন রাতারগুলে আছে সাপ, সাদা ও কানা বক, মাছরাঙা, টিয়া, পানকৌড়, ঘুঘু, চিল, বুলবুলি। এছাড়া বানরের দেখা মিললেও সংখ্যায় খুবই কম। নগরের আম্বরখানা থেকে অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া নেবে ৮০ টাকা। এছাড়া অন্য গাড়ি রিজার্ভ নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে একটু বেশি ভাড়া গুণতে হবে। ২৬ কিলোমিটারের সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগবে প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা। রাতারগুল ৪/৫ জন যাত্রী মিলে একটি নৌকা ভাড়া নিলে খরচ নেবে ৬০০ টাকা।
রাতারগুল।  ছবি: বাংলানিউজলালাখাল: সিলেটে নীল নদ খ্যাত স্বচ্ছ নীল জলের লালাখাল। সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে লালাখাল যেতে শহর থেকে পাড়ি দিতে হবে ৩৫ কিলোমিটার। বাস, মাইক্রো, লেগুনা বা অন্য গাড়িতে যেতে পারেন সহজেই।
 
জাফলং: সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত। ওপারে ভারতের ডাউকি। সিলেট থেকে মাত্র ৫৬ কিলোমিটার দূরে। বাস/মাইক্রোবাস/সিএনজিচালিত অটোরিকশায় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা, মাইক্রোবাসে নেবে ৩/৪ হাজার টাকা। আর অটোরিকশায় হাজার টাকা।
তামাবিল।  ছবি: বাংলানিউজবিছনাকান্দি: সবুজ পাহাড় বেয়ে নেমে আসা স্বচ্ছ জল পাথরের বিছানা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। এ যেন প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্যায়ন। দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা পাথর ঝর্ণার মিতালী জলে গা এলিয়ে দেন। মায়া জলে গড়াগড়ি করে কেটে যায় দিন। নগরের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি অটোরিকশায় হাদারপার পর্যন্ত ভাড়া নেবে জনপ্রতি ১০০ টাকা। হিউম্যান হলারে রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ২ হাজার ৫০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মতো। হাদারপার বাজারে নেমে খানিকটা পথ হেঁটে খেয়াঘাট থেকে নৌকায় পৌঁছতে হবে বিছনাকান্দি। প্রায় আধাঘণ্টার যাত্রায় ট্রলারে নেবে ১ হাজার ৫শ’ টাকা।
 
পাংথুমাই: পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রাম 'পাংথুমাই'। পেছনে মেঘালয় পাহাড়। পিয়াইন নদীর পাড়ে এই গ্রামটি সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি। এই গ্রামের পাশেই বিশাল ঝর্ণা 'বড়হিল'। বিছনাকান্দি থেকে আরও ঘণ্টাখানেক নৌকায় গেলে পাবেন পাংথুমাই। আর ফেরার পথে দেখে আসতে পারেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত হাট।
জাফলং।  ছবি: বাংলানিউজলোভাছড়া: অপরূপ লোভা নদী, চা বাগানের ঘেষা ঝুলন্ত সেতু কাছে টানে পর্যটকদের। লোভাছড়ার অবস্থান কানাইঘাটের লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নে। সিলেট থেকে বাসে ৪০ টাকায় কানাইঘাট উপজেলা সদর নৌকা ঘাটে। এরপর ২৫ টাকার ইঞ্জিন নৌকায় লোভা চা-বাগানে পৌঁছাতে পারবেন। আর ২৫ টাকার ভাড়ায় পৌঁছতে পারবেন লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে।
 
ভোলাগঞ্জ: এই পাথর রাজ্যের দূরত্ব সিলেট থেকে ৩৩ কিলোমিটার। ওপারে ভারত থেকে নেমে আসা পাথর দলাই নদী থেকে তোলার দৃশ্য দেখা যায় ভোলাগঞ্জে। পাশেই উৎমা ছড়ায় স্বচ্ছ জলরাশিতে মুগ্ধ পর্যটকরা গা ভাসিয়ে দিন কাটিয়ে দেন। শহর থেকে কোম্পানিগঞ্চের টুকেরবাজার এরপর অটোরিকশায় করে ভোলাগঞ্জ পৌঁছতে পারেন যে কেউ। তবে সাবধান, দিনেই ফিরতে হবে, নতুবা সন্ধ্যার পর পথিমধ্যে কাঁটাগাং নামক স্থানে দস্যুদের কবলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। রাত হলে পুলিশের সাহায্য নিয়ে আসাই ভালো।
 
হাকালুকি হাওর: মিনি কক্সবাজার খ্যাত হাকালুকির সৌন্দর্য অবলোকনে আপনাকে যেতে হবে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ জিরো পয়েন্টে। সিলেট কোর্ট পয়েন্ট থেকে ফেঞ্চুগঞ্জের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। সেখান থেকে আরও ১১ কিলোমিটার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার জিরো পয়েন্ট। সিলেট থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ নেবে ৫/৬শ’ টাকা। মাইক্রোবাসে দেড় হাজার টাকা। অথবা সিলেট হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে বাস/সিএনজি/লেগুনা করে ফেঞ্চুগঞ্জ ৩০ টাকা ভাড়া জনপ্রতি। সেখান থেকে অটোরিকশায় ১০ টাকা নেবে মাইজগাঁও বাজারে। পুনরায় অটোরিকশা রিজার্ভ নেবে ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে মাত্র ১০০ টাকা।
 
গৌড় গোবিন্দ টিলা: শহরের অভ্যন্তরে চৌহাট্টা সংলগ্ন গৌড় গোবিন্দ টিলা দেখতে পারেন খুব সহজেই। যেখানে ছিল গৌড় রাজা গোবিন্দের আবাস। বর্তমানে স্থানটিতে জেলা ও দায়রা জজের বাস ভবন।
 
পেঁচাগড় (হারুং হুরুং গুহা): শাহজালাল (র.) এর সঙ্গে যুদ্ধে হেরে মালনিছড়া বাগানের ভেতরে যে গুহায় লুকিয়েছিলেন গৌড় গোবিন্দ, ওই স্থানটিই হারুং হুরুং গুহা। শহরতলীর মালনিছড়া বাগানে পথ প্রদর্শক নিয়ে যেতে হবে গুহায়। তবে দল বেঁধে কয়েকজন গেলে ভালো।
 
থাকবেন কোথায়: সিলেট নগরে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল, মোটেল, কটেজ। পর্যটকরা তাদের পছন্দের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করতে পারেন বিভিন্ন মানের হোটেলে। হোটেলের মান ভেদে রয়েছে দামের পার্থক্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
এনইউ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।