ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

বুনো প্রকৃতির মুগ্ধ করা ঝরনা ‘ধুপপানি’

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮
বুনো প্রকৃতির মুগ্ধ করা ঝরনা ‘ধুপপানি’ .

রাঙামাটির বিলাইছড়ি থেকে ফিরে: কখনো ঝিরি পথ, কখনো ধানক্ষেত, কখনোবা একের পর এক জুম পাহাড়ের পথ ধরে ছুটে চলা। গভীর খাদের উপর বৃষ্টিতে পিচ্ছিল গাছের গুঁড়ি কিংবা বাঁশের উপর সাবধানে পা ফেলা। প্রকৃতির বুনো রুপ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সহজ ও সংগ্রামী জীবনযাত্রা দেখতে দেখতে কেটে যাবে প্রায় দুই ঘণ্টার হাঁটা পথ। ততক্ষণে আপনি ভীষণ ক্লান্ত। ঠিক ওই মুহূর্তে সবুজের ভেতর থেকে কানে বাজবে ঝিরঝির শব্দ। সর্বশেষ পাহাড়ের উপর থেকে দেখা যাবে সবুজের ভেতর থেকে দুধসাদা পানির ঝরে পড়া। নাম তার 'ধুপপানি' ঝরনা।

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নো ওরাছড়ি নামক এলাকায় অবস্থিত 'ধুপপানি' ঝরনা। তঞ্চঙ্গা শব্দে ‘ধুপ’ অর্থ সাদা।

হয়তো ঝরনার পানি সাদা বলেই ধুপপানি ঝরনা নাম দেওয়া হয়েছে। এতোদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা ঝরনাটিতে 'ধুপপানি' সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষুরা ধ্যান করেন। ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় এক ভিক্ষু সেখানে টানা রাতদিন ধ্যান করেন। পরে স্থানীয়রা নির্দিষ্ট কিছু সময়ে ওই ভিক্ষুকে সেবা করতে গেলে আস্তে আস্তে ঝরনাটি পরিচিতি লাভ করে।

.
এই ঝরনা বর্তমান সময়ে পর্যটকের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। আর 'ধুপপানি' ঝরনার সঙ্গে দেখতে পাবেন আরও দু'টি ঝরনা। একটি মপ্পোছড়া অন্যটি নকাটাছড়া ঝরনা। তবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নকাটা ছড়া ঝরনাটি ন-কাবাছড়া ঝরনা নামে পরিচিত। তবে যারা ট্রেকিং করতে ভালোবাসেন তাদের জন্যই মূলত 'ধুপপানি' ঝরনা।
 
১৯ জনের একটি টিম নিয়ে আমাদের 'ধুপপানি' মিশন। সকাল সাড়ে ৭টায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার জেটিঘাটস্থ লঞ্চঘাট থেকে রিজার্ভ বোটে করে বিলাইছড়ির উদ্দেশে যাত্রা। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্তিম কাপ্তাই লেকের উপর ভাসতে ভাসতে দুই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম বিলাইছড়িতে। সেখানে আগে থেকে বুকিং করা রুমে আধাঘণ্টা বিরতি দিয়েই আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম।

.
প্রথমদিনের টার্গেট মপ্পোছড়া ঝরনা ও নকাটাছড়া ঝরনা। বিলাইছড়ি লঞ্চঘাট থেকে আধা ঘণ্টার বোট জার্নি শেষে প্রথমে পৌঁছালাম বাঙ্গালকাটা এলাকায়। সেখান থেকে আমাদের হাঁটা শুরু। এক ঘণ্টা উঁচু নিচু পাহাড়, ঝিরিপথ পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম মুপ্পোছড়া ঝরনায়। নিমিষেই ক্লান্তি দূর। ঝরনায় গোসল করে আমরা কিছুক্ষণ পর ফিরতি পথে রওনা দিলাম। বলে রাখি নকাটা ছড়া ঝরনা আর মপ্পোছড়া ঝরনায় যাওয়ার পথ একই ও কাছাকাছি। নকাটাছড়া ঝরনার মাথার উপর দিয়েই মপ্পোছড়া ঝরনায় যেতে হয়।

.
মপ্পোছড়া ঝরনা থেকে কিছুক্ষণ হাঁটার পর আমর পৌঁছে গেলাম নকাটা ছড়া ঝরনা। পাথুরে পাহাড়ের গা বেয়ে আয়েশ করে স্বচ্ছ হিমশীতল পানি গড়িয়ে পড়ছে। শীতল ঝরনার পানি সবাইকে নিশ্চিত মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেবে। নকাটাছড়া ঝরনার নিচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার আবার বাঙ্গালকাটা হয়ে বোটে করে বিলাইছড়িতে।  

সেদিন দুপুরের খাবার বিকেলে খেয়েছি বলে রাতে সবাই মিলে বারবিকিউ পার্টি করেছি। বোটে করে লেকের মাঝখানে সেই পার্টি অন্যরকম এক তৃপ্তি দিয়েছে।
 
পরের দিন সকাল ৫টা বাজে আমরা ধুপপানির উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। কারণ ধুপপানি ঝরনায় আসা যাওয়ার বোট জার্নি, হাঁটা সবমিলে বিকেল গড়িয়ে যায় বলে আমরা চেষ্টা করেছি সময় বাঁচাতে। রাতেই স্থানীয় দোকানে সকালের খাবার অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। সময় স্বল্পতার কারণে আমরা বোটে সকালের খাবার নিয়ে নিলাম। .
বিলাইছড়ি থেকে যাওয়ার পথে আমরা তিনটি সেনা ক্যাম্প পাড় করেছি। প্রথমে গাছকাটা ছড়া, তারপর দীঘলছড়ি, সর্বশেষ আলিয়াখং ক্যাম্প। সেখানে নিরাপত্তার স্বার্থে সবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হয়। সবমিলে দু'ঘণ্টার বোট জার্নি শেষে প্রথমে পৌঁছে গেলাম উলুছড়িতে।  

ধুপপানি যেতে হলে অবশ্যই গাইড নিতে হবে। আমরা একজন গাইড নিয়েছিলাম। উলুছড়ি থেকে চার থেকে পাঁচজনের ছোট ছোট ডিঙি নৌকা ভাড়া করে ১৫ মিনিটের যাত্রা শেষে হাঁটাপথ শুরু। অপেক্ষার তর যেন সইছে না। বড় দু'টি পাহাড়, ঝিরিপথ, আঁকাবাঁকা রাস্তা পাড়ি দিতে দিতে পৌঁছে গেলাম কাঙ্খিত ধুপপানি ঝরনায়।  

বড় বড় পাথরের আড়ালে, বিশাল বুনো প্রকৃতির মাঝখান আপন রুপে মুগ্ধ করছে সবাইকে। চোখজুড়িয়ে যাবে। ক্লান্তি হারিয়ে যাবে নিমিষেই...।

.
 
কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে শ্যামলী, এস আলমসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাসে করে প্রথমে কাপ্তাই জেটিঘাট নামবেন। সেখান থেকে একটু হেঁটে লঞ্চঘাট থেকে বিলাইছড়ির উদ্দেশে লোকাল কিংবা রিজার্ভ ইঞ্জিনচালিত বোট পাওয়া যাবে।  

না হয় ঘোরার সময় মিলাতে পারবেন না। বিলাইছড়ি থেকে ঝরনায় যাওয়ার জন্য বোট রয়েছে (বোটচালক সোহেল, ০১৮১৪৭৭৫১২৫)। দরদাম করে উঠে পড়ুন। তবে যারা লোকাল বোটে ঘুরতে যাবেন তাদের মনে রাখতে হবে কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ির উদ্দেশে বোট ছাড়ে সকাল সাড়ে ৮টায় এবং সবশেষ বিকেল সাড়ে ৪টায়।
 
কোথায় থাকবেন-খাবেন কোথায়

লঞ্চঘাটের পাশেই স্মৃতিময় বোর্ডিং (০১৮৭১৭৭৩৩৬৪), নিরিবিলি বোর্ডিং (০১৫৫৩১২৮৬৭৩), জেলা পরিষদ রেস্ট হাউস (০১৫৫২৮৬০৭৬২) এ থাকতে পারেন। যদি রিজার্ভ বোট থাকে সেক্ষেত্রে বোটে রাত কাটানো মন্দ হবে না। আর বিলাইছড়িতে ঘাটের পাশেই দারুচিনি হোটেল (০১৮২৮৮০০৮১২)। খাবারের মানও ভালো। এছাড়া আরও কয়েকটি হোটেল রয়েছে। তবে আগেভাগে অর্ডার দেওয়ায় ভালো।
 
এবার ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে সময় সুযোগ করে বেরিয়ে পড়ুন প্রকৃতির রুপ দেখতে..
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮
এডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।