ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

করোনা উপেক্ষা করে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে জনস্রোত  

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২০
করোনা উপেক্ষা করে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে জনস্রোত  

রাজশাহী: রৌদ্রের প্রখরতায় কেটেছে তপ্ত সকাল। দুপুর কেটেছে শ্রাবণের বারিধারায়।

কোলাহলে ভরা নগরটাও আজ বড্ড শান্ত। তাতে কী, এখন দখিণে কলকলিয়ে বইছে পদ্মা। নির্মল বিনোদনের খোঁজে তাই সেখানেই নেমেছে জনস্রোত। কারো মুখে মাস্ক আছে কারও নেই। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন আবার কেউ মানছেন না। কিন্তু সদ্য যৌবন ফিরে পাওয়া পদ্মার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই এই করোনাকালেও।

কারণ এই পদ্মা নদী ঘিরেই রাজশাহীর মানুষ আবেগ, অনুরাগ, বিনোদন আর ভালোবাসার টান। যেন বিনোদনের সব সুর মিলেছে পদ্মা নদীর মোহনাতেই। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পদ্মার কূলে থাকছে বিনোদন পিপাসুদের ভিড়। উজান থেকে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণে এবারের বর্ষায় টইটম্বুর হয়ে উঠেছে ক’দিন আগের মরা পদ্মা। নদীর উত্তাল স্রোত আছড়ে পড়ছে পদ্মার পাড়ে। তাই ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির টানে সবাই ছুটে যাচ্ছেন পদ্মার পাড়ে। মুখের মাস্ক খুলে নির্মল বাতাসে প্রাণভরে নিশ্বাস নিচ্ছেন। ভরা পদ্মার প্রতি মানুষের যেমন টান থাকে, তেমনই আছে এখন। করোনার ভয়ে এতটুকুও হেরফের হয়নি। ঈদের তৃতীয় দিন বিকেলেই তাই জনসমাহারে ভরে উঠেছে স্রোতস্বিনী পদ্মা নদীর পাড়।

কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠেছে তীরবর্তী গোটা এলাকা। শহরের পঞ্চবটি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ ছুঁয়ে পদ্মার পাড় সবার জন্য হয়ে উঠেছে সেরা বিনোদনের ঠিকানা।

..বৃষ্টি হওয়ার ভ্যাপসা গরম কেটেছে। নেমেছে তাপমাত্রা। এমন ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় তাই সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন পদ্মার পাড়ে। ছোটরা ঈদের খুশিতে হৈ চৈ করছে। তরণ-তরুণীরা ঈদ আনন্দে মেতে উঠতে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় উঠে ভরা পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদিও সারা বছর মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে রাজশাহীর পদ্মার তীর। এর ওপর এখন যোগ হয়েছে ঈদের বাড়তি আনন্দ। ঈদের ছুটি শেষ হলেও জনসমাগম বেড়েছে দ্বিগুণ। ঘরবন্দি মানুষগুলো অখণ্ড অবসর উদযাপনে চলে গেছেন পদ্মায়। নদীর বয়ে চলার মাঝেই আটপৌরে জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলছেন। আর নদীর স্রোতের শব্দে খুঁজছেন মানসিক প্রশান্তি।

মহানগরীর পঞ্চবটি আই বাঁধ থেকে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সব জায়গাতেই এখন মানুষের জটলা। রাজশাহীতে হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন স্পট থাকায় মানুষের পছন্দের তালিকায় এখনও সবার ওপরেই রয়েছে পদ্মাপাড়। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই সমান পছন্দ পদ্মা। তাই করোনা আতঙ্কের মধ্যেও বিনোদনপিপাসুরা ভিড় করছেন সেখানে। এতে পদ্মাপাড়ে বাদাম, চটপটি থেকে শুরু করে ফুটপাতের সব দোকানগুলোর ব্যবসাও আবার চলছে। কর্মস্থল শুরু হলেও বিকেলে ছুটির আমেজ বিরাজ করছে সেখানে।

...মহানগরের সুলতানাবাদ এলাকা থেকে বন্ধুদের নিয়ে আসা রিফাত, উজ্জ্বল ও মুশফিক বলেন, করোনার কারণে বর্তমানে সব বিনোদন কেন্দ্রই বন্ধ। ঈদের দিন থেকে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে দর্শনার্থীরা যাচ্ছেনও। কিন্তু উন্মুক্ত পরিবেশ, মুক্ত বাতাস আর নির্মল বিনোদনের জন্য পদ্মার জুড়ি নেই।  

পদ্মা ঘেঁষে থাকা মহানগরের লালন শাহ পার্কের পাশেই ভিড়ছে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা। সেখানকার এক মাঝি রাকিবুল। তিনি জানান, করোনার কারণে মানুষ অনেক কম। অন্য সময় হলে ঈদের মৌসুমে আরো বেশি ভিড় হতো। এরপরও নদী ভরা থাকায় তাদের ভালো ব্যবসা হচ্ছে। একেকজন ২০ থেকে ৫০ টাকা দিয়ে নদীতে এক চক্কর ঘুরে আসতে পারছেন। কেউ কেউ ৩শ থেকে ৫শ টাকায় নৌকা রিজার্ভ নিয়ে নদীবক্ষে ঘুরে বেড়াতে পারছেন। দিনশেষে কম করে হলেও তাদের এক থেকে দেড় হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে।  

পদ্মার তীরে থাকা চটপটি বিক্রেতা হাসান বলেন, করোনার কারণে এতদিন বিক্রি প্রায় বন্ধই ছিল। কিন্তু ঈদের ছুটিতে মানুষ আবারো নদীর ধারে বেড়াতে আসছেন। এই সুবাদে টুকটাক করে বিক্রিও শুরু হয়েছে।  

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তার মত অনেক ব্যবসায়ীই এখন পেয়ারা, আমসহ বিভিন্ন পদের আচার, ফুচকা-চটপটি ইত্যাদি মুখোরোচক খাবার পরিবেশন করছেন। অনেকে তা কিনেও খাচ্ছেন। এতে তাদের কিছুটা নগদ আয়ও হচ্ছে বলে জানান হাসান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২০
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।