ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

সেই ময়লার ভাগাড় এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডাস্থল

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২০
সেই ময়লার ভাগাড় এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডাস্থল ওয়াকওয়ে এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডাস্থল। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: ময়লার ভাগাড় প্রকৃতি দর্শনের দৃষ্টিনন্দন স্থান হবে, তা অনুমান ছিল না স্থানীয় কারোরই। সেই ময়লার ভাগাড় এখন প্রকৃতি বিলায়।

ইটপাথরের যান্ত্রিক জীবনে থাকা নগরবাসী এখন প্রকৃতির নির্মল নিশ্বাস নিতে ছুটে যান ছড়ার ওপর সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্মিত দৃষ্টিনন্দন হাঁটারপথ (ওয়াকওয়ে) ।   
 
একপাশে সবুজ প্রকৃতি। উঁচু-নিচু টিলার ভাঁজে চায়ের সবুজ সমারোহ। অন্যপাশে অবস্থিত বাজার। মাঝখানে বহমান ছড়ায় করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন হাঁটাচলার পথ। সিলেট নগরের সীমানা রেখা এলাকায় তারাপুর চা-বাগান সংলগ্ন গোয়াবাড়ি এলাকার কালীবাড়িছড়ায় নির্মিত ওয়াকওয়ে এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডাস্থল। .স্থানীয়দের ভাবনায় ছিল, বাগান ও ব্যক্তি মালিকদের দখলে একসময় হয়তো ছড়াটি হারিয়ে যাবে। কিন্তু সেখানে এমন সুন্দর পরিকল্পনা করবে সিলেট সিটি করপোরেশন! ময়লার ভাগাড়কে দৃষ্টিনন্দন স্থানে রূপ দেবে, তা অনুমানে ছিল না কারোরই।  হাঁটাচলার স্থানটিতে গিয়ে প্রকৃতিকে সঙ্গী করে সেলফি তোলেন হাজারো লোক। এই স্থানটিকে ঘিরে আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের জীবনমান। এমনটি জানিয়েছেন এলাকার লোকজনও।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মাণাধীন হাঁটাচলার পথটি সিসিকের আট নম্বর ওয়ার্ডের তারাপুর চা-বাগান সংলগ্ন গোয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। বাগান এলাকা থেকে নগরের বুক চিড়ে যাওয়া ‘কালীবাড়িছড়া’ নামক ছড়াটি নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মিলিত হয়েছে সুরমা নদীতে। আর উৎসমুখে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটাচলার জন্য দৃশ্যমান করা হয়েছে। আরও প্রায় আধা কিলোমিটার এখনো নির্মাণাধীন।
 
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, প্রাকৃতিকভাবে চা-বাগানের টিলাভূমি থেকে আসা নয়টি ছড়া এবং তিনটি খাল নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে সুরমা নদীতে মিশেছে। এই ১১টি ছড়া-খালই নগরকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। .সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক সৃষ্ট ছড়াগুলোকে সংরক্ষণ করে পানিপ্রবাহ সচল রাখতে রিটেইনিং ওয়াল, ওয়াকওয়ে নির্মাণে সিসিকের দুইশ ৩৬ কোটি টাকার কাজ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান রয়েছে। আর এই প্রকল্পের অন্যতম একটি হচ্ছে দখলমুক্ত ছড়া ও খালের তীর সংরক্ষণ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ।
 
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনে ভেতর দিয়ে প্রবাহমান ১১টি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। ২০১৬ সাল থেকে সবক’টি ছড়া উদ্ধার করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দুইশ ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ চলমান রয়েছে।  
 
তিনি বলেন, নগরের গোয়াবাড়ি-করেরপাড়া ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কালীবাড়িছড়ায় এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। শাহী ঈদগাহ, বালুচর টিবি গেইট ও এমসি কলেজ ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গোয়ালীছড়ায় ৭০০ মিটার, টিলাগড় এলাকার হাতিম আলী উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন সাড়ে ৪ কিলোমিটারের হলদী ছড়ায় দেড় কিলোমিটার এবং দাড়িয়াপাড়া ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মুগলীছড়ায় দেড় কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আর ছড়া উদ্ধারে ১১টি ধাপে জবরদখলের তালিকা তৈরি করে ছড়া-খালের আয়তন নির্ধারণ করতে ১৯৫৬ সালের রেকর্ড অনুসরণ করা হয়েছে। দখলমুক্ত অভিযানও অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থানে ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওয়াকওয়ের সঙ্গে ছড়া-খালের রিটেইনিং ওয়াল (প্রতিরক্ষা দেওয়াল) নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। .সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের পাঠানটুলা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার গোয়াবাড়ির দূরত্ব। সেখান থেকে সড়কটি চা-বাগানের ভেতর দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে যুক্ত হয়েছে। আর গোয়াবাড়ি উৎসমুখ দখল ও দূষণে বিলীন হতে যাচ্ছিল। বাজারের ময়লার স্তুপ ফেলা হতো যে স্থানে, পোষা প্রাণী ও গৃহপালিত পশু মারা গেলে যে স্থানে ফেলা হতো। সেই স্থানটি এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের নির্মল নিশ্বাস নেওয়ার স্থানে পরিণত হয়েছে। ইটপাথরের যান্ত্রিক জীবনে থাকা লোকজন এখন সময় পেলেই সেখানে সপরিবারে ছুটে যাচ্ছেন।
 
স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত আলী ও রায়হান উদ্দিন জানান, যে ছড়াতে বাজারের ময়লা ফেলা হতো। দখল-দূষণে অস্বাস্থ্যকর জায়গাটিতে এখন দৃষ্টিনন্দন হাঁটাচলার স্থান হবে তা কখনো ভাবিনি। এখন প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজন প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে বুকভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। এই স্থানটিকে কেন্দ্র করে এখন নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠছে।
 
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ছড়া-খাল দখলমুক্ত করে নাগরিকদের হাঁটাচলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করার চিন্তা ভাবনা করছি। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তারপরও দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা রয়েছে সিসিকের। ওয়াকওয়েতে রাতে চলাচল করতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২০
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।