ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

নগরবাসী যেন বুক ভরে নিশ্বাস নিলো!

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০
নগরবাসী যেন বুক ভরে নিশ্বাস নিলো! লালবাগ কেল্লা, ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকার পর বাবা-মার সঙ্গে বাসার বাইরে ঘুরতে বের হয়েছিল রাজধানীর একটি প্রাইভেট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সুলতানা মারিয়া। লালবাগ কেল্লার ভেতর তার সঙ্গে কথা হলে উচ্ছ্বাস ভরে সে বাংলানিউজকে বলে, আমি অনেকদিন পর খোলা বাতাসের অক্সিজেন পেলাম, আমার খুব ভালো লাগছে!

শুধু মারিয়া নয়, তার মতো রাজধানীর অনেকেই লালবাগ কেল্লায় এসে আপ্লুত হয়েছে, বুক ভরে শ্বাস নিয়েছে, ছুটে বেড়িয়েছে মনের আনন্দে প্রজাপতির মতো।

বিশেষত দীর্ঘদিন লকডাউনে ঘর বন্দি থাকার পর বিনোদন কেন্দ্রগুলো একটু একটু করে খোলায় নগরবাসী যেমন ভিড় জমাচ্ছে সেগুলোতে, ঠিক তেমনি পুষিয়ে নিতে চাইছে গত প্রায় ছয় মাসের বন্দিত্বের বিরক্তিও। আবার ছুটির দিন থাকায় মানুষের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
লালবাগ কেল্লা, ছবি: ডিএইচ বাদলশুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর লালবাগ কেল্লা ঘুরে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। এরচেয়েও লম্বা লাইন কেল্লার প্রবেশমুখে। ছোট-বড় সবাই ভিড় জমিয়েছে সেখানে। এমনকি নিতান্তই তিন মাসের ছোট্ট সোনামনিসহ এসেছেন ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ ব্যক্তিরাও।

লালবাগ কেল্লার ভেতরে ঢুকে সবুজ দেখে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া মিমের। তাইতো নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন সেই ঘাসের ওপরে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে নিশ্বাস নিয়ে। কথা হলে এই শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন বাসায় বন্দি থেকে মাথার মধ্যে যেন জং ধরে গেছে। তাইতো লালবাগ কেল্লা খোলার খবর পেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে এসেছি এখানে। আর ভেতরে যে এত সুন্দর পরিবেশ রয়েছে, তা সত্যি ভাবতে পারিনি। যেন অনেক দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো।
লালবাগ কেল্লা, ছবি: ডিএইচ বাদলতিন মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন তার বাবা-মা আলম হোসেন ও নুসরাত জাহান। কথা হলে তারা জানান, আবিদের জন্মের আগে থেকেই করোনার কারণে সবকিছুই লকডাউন। এরপর জন্মের পরেও বেশ কিছুটা দিন তাকে থাকতে হয়েছে ঘরের মধ্যেই। তাইতো সন্তানকে নিয়ে তারা চলে এসেছেন একটু ঘুরতে। বলা যায় এটাই আবিদের প্রথম শহর ভ্রমণ।

এ দিন বিকেলে যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বিনোদন কেন্দ্রটি খুলে দেওয়ায় জানিয়েছেন উচ্ছ্বাস। সবাই পেয়েছেন স্বস্তি। অন্তত চার দেয়ালে ঘর আর কংক্রিটের শহরের মাঝে এক টুকরো সবুজে নিজের পায়ের চিহ্ন রাখতে পেরে সবাই বেশ আনন্দিত। তাইতো এ দিন শিশুসহ সবার কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে এত দিনের সুনসান জায়গাটি। পরিবার-পরিজন নিয়ে নগরবাসী পেলো বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জায়গা।

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় গত ১৯ মার্চ থেকে প্রত্নজাদুঘর ও প্রত্নস্থানগুলো দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। টানা ১৮০ দিন বন্ধ থাকার পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত বুধবার থেকে এগুলো আবার খুলেছে। প্রথম দিন দর্শনার্থী কম থাকলেও শুক্রবার দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
লালবাগ কেল্লা, ছবি: ডিএইচ বাদলপ্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দেশের প্রত্নজাদুঘর এবং প্রতিষ্ঠানগুলো দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত করা হলেও তাতে দর্শনার্থীদের মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। বিশেষত মাস্ক ব্যবহার এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই তাদের এই স্থানগুলো পরিদর্শনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এই বিষয়গুলো তদারকি করবেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।