ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার নামে সাগর চুরি! 

জহিরুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার নামে সাগর চুরি! 

পটুয়াখালী: বালি ভর্তি জিও টিউব ও জিও ব্যাগ দিয়ে সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়নের নামে পুকুর চুরির পরিবর্তে চলছে সাগর চুরি। এ প্রকল্পে জিও টিউব এবং জিও ব্যাগ ভর্তি করার জন্য বাইরে থেকে বালি এনে কাজ করার কথা থাকলেও সৈকতের বালি ব্যবহার করে চলছে নামমাত্র লোক দেখানো উন্নয়ন কাজ।

এদিকে, এ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কে কে এন্টারপ্রাইজ কোনো ‘তৃতীয় পক্ষ’ বা ‘জৈনক কোনো সাংবাদিকের’ মাধ্যমে কাজ করাচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করছেন অনেক সচেতন নাগরিকরা। অনেকে বলছেন— ‘ঠিকাদার সাংবাদিক বলে কথা, যা তা কাজ করে মহা হরিলুট করা হচ্ছে, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। ’ 

তবে এমন অভিযোগ প্রত্যাখান করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী মো. কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যতদূর সম্ভব কাজ করছি। অনেকেই একপেশার সঙ্গে অন্য কাজ বা চাকরি করে থাকেন, সেজন্য আমার সঙ্গে অনেকেই কাজ করছেন। এতে আমি খারাপের কিছু দেখি না।

দফায় দফায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায় সারা এমন উন্নয়নে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বড় বড় গর্ত হয়ে দিন দিন শ্রীহীন সৈকতে পরিণত হচ্ছে কুয়াকাটা। এমন পরিস্থিতি দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আগত পর্যটকরা।  



বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে সাগর পাড়ে। এ কারণে বিগত কয়েক বছর থেকে সৈকতে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব বসাচ্ছে পাউবো। তবে বাস্তবে এর সুফল মিলছে না। উল্টো দিন দিন সৈকতের সৌন্দর্য্য নস্ট হচ্ছে।  

এমন পরিস্থিতিতে এ বছরও পাউবোর কলাপাড়া ডিভিশন প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২ কিলোমিটার এলাকায় আবারও জিও টিউব এবং জিও ব্যাগ স্থাপন করছে।

তবে এসব টিউবে নির্দিষ্ট মানের বালি ভরার কথা থাকলেও বাস্তবে সৈকতের বালি দিয়েই টিউব এবং জিও ব্যাগ ভরাট করা হচ্ছে। লোক দেখানো প্রতিদিন দুই-চার ট্রলি বালি বাইরে থেকে নিয়ে এলেও বাস্তবে সৈকতের বালি দিয়েই ভরাট হচ্ছে জিও টিউব। এতে করে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে কুয়াকাটা সৈকতে আগত পর্যটকরাও এ বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।  

পাউবোর একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রতি সিএফটি বালি বাবদ ২৩ টাকা হিসেবে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হবে। আর আড়াই কোটি টাকার বেশি এ প্রকল্পে বালি বাবদ প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।  

কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কলাপাড়া উপবিভাগ-৩ শওকত ইকাবাল মেহেরাজ বলেন, নির্ধারিত মানের বালু দিয়ে কাজ করার কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির। এ ক্ষেত্রে সৈকতের বালু ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। তবে অভিযোগের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।



এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়রের পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোথায় কী হচ্ছে আমি জানি না। এ বিষয়ে আমি কথাও বলতে চাই না।  

এছাড়া পাউবোর দায় সারা ও লুটের প্রকল্পের কাজের মান ও শুভঙ্করের ফাঁকি নিয়ে নিউজ প্রচার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে উপস্থাপন করায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের নামে কাজের ঠিকাদারে রেফারেন্সে এক শ্রেণীর অসাধু ও অতি উৎসাহীরা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কুৎসা রটাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

তবে ঠিকাদার বলছেন, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করেছি, সেখানে কোনো ব্যক্তির নামে অভিযোগ বা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় আলোচনা করিনি।  

তবে প্রতিবেদনে এমন তথ্য কীভাবে এলো এ প্রশ্নের জবাবে ওই এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. কবির বলেন, সেটা হয়তো তাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে মনগড়া প্রতিবেদন করছেন। আমি এ রকম কিছু বলিনি।

কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন রোধের অজুহাতে এ ধরনের অপরিকল্পিত উন্নয়নে প্রতি বছর সরকারের যেমন কোটি কোটি টাকা অর্থ অপচয় হচ্ছে, তেমনি সৈকতটি দিন দিন জরাজীর্ণে পরিণত হচ্ছে— এমনটাই মনে করছেন পর্যটকরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।