ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

ঘুরে আসুন চিনামাটির পাহাড়ে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
ঘুরে আসুন চিনামাটির পাহাড়ে

প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে বিরিশিরি অপেক্ষা করছে আপনাকে মুগ্ধ করার জন্য। পর্যটক আকর্ষণের জন্য যেসব উপাদান থাকা দরকার তার সবটুকুই রয়েছে বিরিশিরিতে।

এখানে এলে আপনি দেখতে পাবেন চিনামাটির পাহাড় যা এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। এখান থেকে পাহাড় কেটে চিনা মাটি তোলা হয় যা দিয়েই তৈরি হয় চিনামাটির বাসনকোসন। মাটি কাটা এই গর্তে পানি জমে থাকে যা এতটাই নীল যে আপনি এখানে এলেই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইবেন। এখানে রয়েছে ৫-৭টা মাঝারি ধরনের পাহাড়। এসব পাহাড়ের গায়ে রয়েছে রং- বেরঙের ফুল।  

এছাড়াও রয়েছে সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য যা আপনাকে অনেকটাই মুগ্ধ করবে। এ নদী থেকে পাথর এবং কয়লা তোলার দৃশ্য আপনি কখনোই ভুলতে পারবেন না। নদীর পানি এতোটাই স্বচ্ছ যে এখানে আসলে আপনি নদীতে পা না ডুবিয়ে পারবেনই না। তবে হ্যা, আপনি সাঁতার না জানলেও সমস্যা নেই, কারণ নদীতে খুব বেশি পানি  থাকে না। সারা বছর এই নদীতে পানি কম থাকলেও বর্ষাকালে ভারত থেকে নেমে আসে পানির ঢল। আর এই পানির সাথেই ভেসে আসে অনেক কয়লা। আর বর্ষাকালে নদীও থাকে পানিতে টুইটুম্বুর।

সারাদিন স্থানীয় দিন-মজুররা এই নদীতে কয়লা ও পাথর তোলে । এই নদী থেকে প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাক বালু উত্তোলন করা হয়। সোমেশ্বরী নদীর ব্রিজের ওপর সন্ধ্যা বা রাতে না আসলে আপনি এখানকার সৌন্দর্য অনেকটাই মিস করবেন।

এখানে রয়েছে গারো পাহাড়, যেখানে আপনি আদিবাসীদের জীবনযাত্রা খুব কাছ  থেকে দেখতে পাবেন। তবে এখানে আসলে আপনি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার জন্য যেন আদিবাসীদের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত না হয়। বিরিশিরিতে রয়েছে আদিবাসী কালচারাল একাডেমি, বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত রেখা (জিরো পয়েন্ট), পাহাড় ও নদীর মিলন মেলা, সবুজের সমারোহ, বিজিবি ক্যাম্প, রানিখং গির্জা। এ গির্জাটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। এখানে দাঁড়িয়ে আপনি ভারতের বর্ডারের কাঁটাতারের বেড়া দেখতে পাবেন, এছাড়াও আসামের মেঘালয় রাজ্য স্পস্ট দেখা যায় এখানে দাঁড়িয়ে। এখানেই নাকি কিছুদিন আগে ভারত থেকে একটা হাতি এসেছিল যেটা মেরে ফেলা হয়েছিল। তবে রানিখং গির্জায় গেলে অবশ্যই কুকুর থেকে সাবধান থাকবেন নয়তো আমাদের মতো আপনাকেও কুকুরের তাড়া খেতে হবে!

যদিও কমলা রানির দিঘি এখানকার অনেক ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান, তবে এই দিঘিতে এখন আর পানি নেই। এখানে এখন ধান চাষ করা হয়।

বিরিশিরিতে রয়েছে শতবর্ষী কিছু রেইনট্রি, যা আপনি দুর্গাপুর যাওয়া পথে দেখতে পাবেন।
যদিও এখানটা তেমন একটা উন্নত না তবুও আপনি এখানে আসলে প্রকৃতির সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবেন এটা নিশ্চিত।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার মহাখালী থেকে সরাসরি বাস আছে বিরিশিরি যাওয়ার, তবে ১৭০ কিলোমিটার যেতে আপনাকে এই সরাসরি বাস এ ৭-৮ ঘণ্টা কাটাতে হবে। কেননা এই বাস কিছুটা ৬ নম্বর বাস এর মতো। এ বাসে অনেক লোকাল যাত্রী তোলা হয়। তাই আপনি চাইলে ময়মনসিংহ পর্যন্ত যেকোনো পরিবহনে গিয়ে, ময়মনসিংহ থেকে বিরিশিরির বাস এ যেতে পারেন।

বিরিশিরি পর্যন্ত যেতে আপনার ২৫০ টাকার মত খরচ হবে। এছাড়াও আপনি চাইলে ট্রেনে  ময়মনসিংহ গিয়ে ওখান থেকে বাস বা ট্রেনে করেও বিরিশিরি যেতে পারেন। তবে এখানে এখন অনেক উন্নয়ন কাজ চলতেছে তাই আপনাকে একটু কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে হয়তো অনেক পর্যটক আসবে এখানে।

যেখানে থাকবেন
বিরিশিরিতে তেমন ভালো মানের হোটেল নেই বললেই চলে । তবে YWCA YMCA , স্বর্ণা হোটেল, নদীবাংলা রেস্ট হাউস এ আপনি কম টাকায় খুব ভালোভাবেই থাকতে পারবেন। এক রাত থাকার জন্য আপনাকে ৫০০-৭০০ টাকা গুনতে হবে। তবে YWCA এবং YMCA মেইন  রোড থেকে কিছুটা ভিতরে, স্বর্ণা এবং নদীবাংলা হোটেল মেইন  রোডের পাশেই অবস্থিত। তবে বিরিশিরি যেতে হলে আপনাকে আগে থেকেই হোটেল বুক করে যেতে হবে, তা না হলে হোটেল না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ।

স্বর্ণা হোটেল –০১৭৪৮৯৬৪৩২২, YWCA – ০১৭১২০৪২৯১৬ , YMCA – 01714418039

যা যা খাবেন
এখানে মোটামুটি মানের ২টা খাবার হোটেল আছে  যা  স্বর্ণা হোটেরের পাশেই অবস্থিত। মোটামুটি মানের খাবার পাবেন এখানে আপনি। তবে রাতের খাবার খেতে খুব বেশি রাত করবেন না। তাহলে খাবার নাও পেতে পারেন।

বিরিশিরিতে এলে আপনি এখানকার বিখ্যাত দেউরি মাছ এবং দুর্গাপুরের শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বালিশ মিষ্টি এবং দুধের সরের চা (গারো পাহাড়ে যেতে এই চায়ের দোকান ) খেতে ভুলবেন না একদমই। দেউরি মাছ এবং বালিশ মিষ্টি এক কথায় অসাধারণ।

কীভাবে ঘুরবেন
আগেই বলেছি বিরিশিরিতে এখন অবকাঠামগত উন্নয়ন চলছে। তাই আপনাকে রিকশা বা মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে হবে। এটা আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন। তবে রিকশা নিয়ে ঘুরলে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্যটা আপনার মতো করেই উপভোগ করতে পারবেন। ৫০০-৬০০ টাকায় আপনি সারাদিনের জন্য একটা রিকশা পেয়ে যাবেন। তবে আপনাকে মাঝে মধ্যে দুই একবার রিকশা ধাক্কানো লাগতে পারে। এখানে জুয়েল নামের একজন রিকশা চালক আছেন, যিনি আপনাকে খুব সুন্দরভাবেই সব স্পট ঘুরিয়ে দেখাবে। আপনারা চাইলে যে কেউ বিরিশিরিতে গিয়ে ওর রিকশায় ঘুরতে পারেন। যে কাউকে জিগ্যেস করলেই আপনি জুয়েলকে পেয়ে যাবেন অথবা ওর সাথে মোবাইলে (০১৮২৮৫৯৪৪৬১) কথা বলে নিতে পারেন।

তবে হ্যা, রিকশায় ওঠার আগে কিছু হালকা খাবার আর পানি নিয়ে নিবেন। কারণ ঘোরার পথে ক্ষুধা লাগলে হাতেল নাগালে খাবার পাবেন না।

অনেক সমস্যা  থাকা সত্ত্বেও আপনি বিরিশিরিতে আসলে যে অনেকটাই রিফ্রেশ হবেন এটা নিশ্চিত। তাই ২-১ দিন সময় করে চলে আসতে পারেন প্রকৃতির সৌন্দর্য দর্শনে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ 
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।