ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

এথেন্স থেকে জাহিদুর রহমান

প্রবাসীদের মুখেই গ্রিসের চেহারা

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
প্রবাসীদের মুখেই গ্রিসের চেহারা ছবি: বাংলানিউজটোেয়েন্টিফোর.কম

এথেন্স (গ্রিস) থেকে: তীব্র আর্থিক মন্দার মাঝেই টিকে থাকার সংগ্রামে নিয়োজিত ভাগ্য অন্বেষণে গ্রিসে আসা বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে অন্য দেশের শ্রমিকদের সঙ্গে মজুরি বৈষম্য আরও সংকটে ঠেলে দিচ্ছে তাদের।

একই কাজ করছেন তারা, পরিশ্রমও বেশি। অথচ প্রতিবেশি ভারত, পাকিস্তান বা নেপালের শ্রমিকদের তুলনায় বাংলাদেশিদের মজুরি কম। কোথাও এক থেকে দেড়শ’ বা দুশ’ ইউরো বেশি পাচ্ছেন অন্য দেশের শ্রমিকরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ আট হাজার টাকা বা তার চেয়েও বেশি।

রাজধানী এথেন্সের প্রাণকেন্দ্র ওমানিয়ার আত্তিনাস মার্কেটে এ মজুরি বৈষম্য চোখে পড়েছে প্রকট ভাবেই।

এখানকার কাঁচাবাজার বেশ সাজানো-গোছানো। তবে মাছ-মাংসের বাজারে বাংলাদেশের মতোই শোরগোল। সরবরাহকারীরাই মাংসগুলোকে স্টেক বা প্রক্রিয়াজাত করে এখানে পাঠান। কি নেই এখানে! গরুর ভূড়ি থেকে শুরু করে খাসি বা ভেড়ার নাড়ি, পায়া- সবই মিলবে এখানে। তবে এখানকার বিক্রির ধরন, পণ্যের প্রর্দশনের সৌন্দর্যই অন্য রকম।

সেখানে একটি একটি দোকানে কথা হয় পাকিস্তানের নাগরিক ইব্রাহিম আহমেদের সঙ্গে।

ইব্রাহিম আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন এখানে। বেতন কমে এখন হয়েছে ৮শ’ ইউরো।

পাশের দোকানেই কাজ করেন বাংলাদেশের কুমিল্লার মুরাদনগরের কবির হোসেন (৩২)। তিনিও ইব্রাহিমের মতোই কাজ করেন ১০ ঘণ্টা। একই সময়ে কাজে যোগ দিয়েও তার বেতন ৭শ’ ইউরো।

রাজধানী এথেন্স থেকে ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর নিয়া মানোলাদা থেকে এখানে আসে মুরগির প্রক্রিয়াজাত মাংস।

আমাদের দেশের সুপার চেনই শপগুলোর মতোই এখানে মুরগির বিভিন্ন অংশ বিক্রি হয় ভিন্ন ভিন্ন দামে। তবে দাম বাংলাদেশের মতোই। কেবল রান কিনতে চাইলে গুণতে হবে ২ ইউরো। আর পাখনা বা গিলা কলিজা মিলবে ১ ইউরোতেই।

কবির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আগে বেতন পেতেন ৯শ’ ইউরো। অর্থনৈতিক মন্দার এক ধাক্বায় বেতন কমে গেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। যে কারণে ব্যয় সংকোচন করেও দেশে অর্থ পাঠাতে বেশ হিমশিম খেতে হয় তাকে।

কবির জানান, আগে দেশে যে পরিমাণ টাকা পাঠাতেন, এখন সেটাও কমিয়ে দিতে হয়েছে।

তার মতে, অনেকে দেশে থাকা প্রিয়জনদের চাহিদা মেটাতে এখন নিজেরাই কষ্ট করছেন। কেউ কম ভাড়ায় বাসা নিয়েছেন। কেউ বা বাসা ছেড়ে উঠেছেন মেসে।

আসলে গ্রিসের অর্থনীতির হাল-হকিকত জানতে এখন আর সূচক, প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভের দিকে তাকাতে হয় না। প্রবাসে খেটে খাওয়া মানুষদের চেহারাই যেন দেশটির অর্থনীতির ইনডেক্স।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
জেডআর/এএসআর

**টিকে থাকার সংগ্রামে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

** গ্রিসে প্রবাসীদের স্বজন প্রকৌশলী জয়নুল আবেদীন
**মন্দার বিপরীতে স্বপ্নে বিভোর জহিরুল
**রোদ চশমায় ভাগ্যবদল আনোয়ারের
** গ্রিক নারীর বাংলাদেশ প্রেম
** উত্তরগুলো কেবল অসহায় চাহনিতেই!
** বিদেশি সতীনেও কষ্ট নেই, আছে সুখ!
** ডিশ ওয়াশার থেকে ২ রেস্টুরেন্টের মালিক আকুল মিয়া
**জার্মানিতে বিয়ে বা দত্তক- এতে যায় কষ্টের বহু অর্থ
**পেট্রোলপাম্পেও নিজের কাজ নিজে করো নীতি
**সততা-একাগ্রতাই এগিয়ে নিয়েছে কাজী সুরুজকে
**‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’
** আস্থার সংকটে বাংলাদেশ–জার্মানি সম্পর্ক!
** বিমানবন্দরে বাংলাদেশের হাসি

** নিজেই মুমূর্ষু জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।