ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

প্যারিস থেকে জাহিদুর রহমান

নেদি আলুন্সু তাইমিলের বাংলাদেশ প্রেম

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
নেদি আলুন্সু তাইমিলের বাংলাদেশ প্রেম ছবি: বাংলানিউজটোেয়েন্টিফোর.কম

প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে: নেদি আলুন্সু তাইমিল (৫৫)। স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত ফরাসি।

তবে বাঙালি নারীদের মতোই আটপৌড়ে তার জীবনযাপন। প্যারিস প্রবাসী বাংলাদেশি কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনুর স্ত্রী হওয়ার সুবাদে জীবনযাত্রায় এ আমূল পরিবর্তন ঘছে এই নারীর।

তবে বাংলাদেশের চেয়ে জীবনের গতিটা এখানে অনেক বেশি। ইউরোপের দেশ ফ্রান্সের প্যারিস বলে কথা।

নেদি আলুন্সু তাইমিল তাই স্বামী-সংসার সামলে সাত সকালেই চলে আসেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা, ব্যবসা অার প্রবৃদ্ধির হিসেব নিকেশ- সবই করেন সমান তালে।

ইউরোপে কেমন আছেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিনদেশি স্ত্রীরা? ভিনদেশি আচার, ধর্ম বা সংস্কৃতিতে বোঝাপড়াটাই ঠিক কতোটুকু? কিভাবেই বা দিনের পর দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক?

কৌতুহল থেকে উঠে আসা এসব প্রশ্ন নিয়েই রাজধানী প্যারিসের ফেলেক্স ফো এলাকায় বাংলানিউজ মুখোমুখি হয় নেদি আলুন্সু তাইমিলের।

বাংলা বেশ ভালো বোঝেন তাইমিল। বলতে কিছুটা জড়তা থাকলেও আন্তরিকতার সার্বজনীন ভাষাই হয়ে ওঠে কথাবার্তা বিনিময়ের মাধ্যম।
সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় তাইমুলের পরিচয় বাংলাদেশের কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনুর সঙ্গে, যিনি আজ ফ্রান্সের সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা।

ইউরোপের ৩০টি দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) সেক্রেটারি জেনারেল, ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকনোমিক চেম্বার্স এর প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের বনানী গ্রুপের চেয়ারম্যান।

সম্পর্কের সূচনা ১৯৮০ সালে। ঢাকার বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান পরিবারের সন্তান ইনু ১৯৭৮ সালে পাড়ি দেন ফ্রান্সে। তিনিও উচ্চশিক্ষার জন্যে ভর্তি হন প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সেই পরিচয় থেকে প্রণয়। দীর্ঘ ১৪ বছরের বোঝাপড়া। শেষে বিয়ের মাধ্যমে পরিণতি পায় প্রেম আর ভালোবাসার এই সম্পর্ক।
নেদি আলুন্সু তাইমিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘পড়াশোনা শেষে চমৎকার বন্ধু হিসেবে ইনুর সঙ্গে পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করি। ওর ব্যক্তিত্ব, দূরদর্শিতা আর উচ্চাভিলাস ওর প্রতি আমাকে দুর্বল করে’।

‘বাংলাদেশে গিয়েই ১৯৯৪ সালের ১ জুলাই ধর্মীয় রীতিতে আমরা বিয়ে করি। ওর ভালোবাসার জন্য আমি ত্যাগ করি আমার খ্রিস্ট ধর্ম। ওর পরিবারের সবাই আমাকে আন্তরিকভাবে বরণ করে নেন। আদর করে আমার শ্বাশুড়ি আমাকে ডাকেন ‘শাহিনা’ নামে। খুবই ভালোবাসেন আমাকে, ভালোবাসেন ননদরাও’।

এই দম্পতির সংসার আলো করে রয়েছে তিনটি সন্তান।

বড় ছেলে কাজী রায়হান উল্লাহ (২০) চিকি‍সা শাস্ত্রে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন এখানকার বিখ্যাত ডেকার্ড মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে। মেঝ ছেলে কাজী রিমান উল্লাহ (১৮) ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন আর সবার ছোট ছেলে কাজী রুমান উল্লাহ (১৫) স্কুলের শেষ পর্যায়ে।

যেখানে ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানিতে নাগরিকত্বের জন্য প্রবাসীদের অনেকেই  মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিয়ে করেন কাগজে কলমে, চুক্তিতে। সংসার না করেও বছরের পর বছর কথিত স্ত্রীর ভরণ-পোষনের জন্যে ব্যয় করেন উপার্জনের বড় একটি অংশ। সেখানে ভিনদেশি বধূ নিয়ে সংসার আর জীবনে সাফল্যের অংশীদার করাটাও কম সাফল্যের নয় এই বাংলাদেশির। এ কৃতিত্বের সমান অংশীদার সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির কাউকে বিয়ে করেও একাত্মা হয়ে ওঠা নারীরও।

বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করতেই নেদি আলুন্সু তাইমিল ফরাসি ভাষায় সগর্বে বলেন, ‘অন এইমো মো মারি জেই আপ্রি আএমএ লু বাংলাদেশ’। যার মানে দাঁড়ায়, ‘স্বামীকে ভালোবাসতে গিয়েই আমি ভালোবেসেছি বাংলাদেশকে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
জেডআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।