ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ফ্রান্স থেকে জাহিদুর রহমান

ফ্রান্সের বনানী

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
ফ্রান্সের বনানী ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্যারিস(ফ্রান্স) থেকে: রাজধানী প্যারিসের ফেলেক্স ফো এলাকা । সেখানে ছবির মতো সাজানো গোছানো সড়কের দু‘পাশের সব স্থাপনা।

এর মাঝেই একটি স্থাপনার নাম থমকে দেয় দৃষ্টিকে। "বনানী রেস্টুরেন্ট ইন্ডিয়া"।

ফ্রান্সের এই বনানী বলতে সবাই এক নামে চেনেন বাংলাদেশকে। স্বাদ আর তৃপ্তির সমন্বয়ে ভারতীয় খাবারের এই রেস্টুরেন্টের প্রধান অতিথিই হচ্ছেন এখানকার ফরাসিরা।

ঢাকার বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান পরিবারের সন্তান কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই রেস্টুরেন্ট।

নিজের দেশ,নিজের এলাকাকে ভালোবেসেই রেস্টুরেন্টের নাম দেন বনানী। আর এটিই ঘুরিয়ে দেয় তার ভাগ্যের চাকা। যার ধারাবাহিকতায় তিনি আজ ফ্রান্সের সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা।

ইউরোপের ৩০টি দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র সেক্রেটারি জেনারেল, ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনোমিক চেম্বার্স এর প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের বনানী গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি।   এছাড়াও রেস্টুরেন্টটি ক্রমে প্রবাসীদের কাছে পরিচিত হয় তাদের জীবনে সফলতার আদর্শ আর দৃষ্টান্ত হিসেবে। আশির দশক থেকেই বনানী বলতেই ফরাসিদের কাছে ভেসে উঠতো ব্যস্ত আর জমজমাট একটি রেস্টুরেন্টের প্রতিচ্ছবি। দেশ থেকে যাওয়া কোন রাজনীতিবিদ বা সরকারি কর্মকর্তাদের দেশি খাবারের স্বাদ নেবার একমাত্র ঠিকানা ছিলো তখন এই রেস্টুরেন্টটি।

ইনু ১৯৭৮ সালে পাড়ি দেন ফ্রান্সে। উচ্চ শিক্ষার জন্যে ভর্তি হন প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে চাকরি করতেন। পরে স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত ফরাসি নেদি আলুন্সু তাইমিলের সঙ্গে অংশীদারিত্বে গড়ে তোলেন ভারতীয় খাবারের এই রেস্টুরেন্ট।

নেদি আলুন্সু তাইমিল বাংলানিউজকে জানান,পড়াশোনা শেষে চমৎকার বন্ধু হিসেবে ইনুর সঙ্গে পার্টনাশিপে ব্যবসা শুরু করি। ওর ব্যক্তিত্ব,দূরদর্শিতা ওর প্রতি আমাকে দুর্বল করে। ব্যবসায়ী অংশীদার থেকে ক্রমেই আমরা হয়ে পড়ি পরস্পরের জীবনের অংশীদার।

বাংলাদেশে গিয়েই ১৯৯৪ সালের ১ জুলাই ধর্মীয় রীতিতে আমরা বিয়ে করি। ওর ভালোবাসার জন্য আমি ত্যাগ করি আমার খ্রীস্ট ধর্ম। ওর পরিবারের সবাই আমাকে আন্তরিকভাবে বরণ করে নেয়। আদর করে আমার শ্বাশুড়ি আমাকে ডাকেন,"শাহিন" নামে।

রেস্টুরেন্টটি গড়ে তুলতে নিজেদের অমানুষিক পরিশ্রমের কথা স্মরণ করে কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু বাংলানিউজকে জানান, চাকরি থেকে সঞ্চয়ের পুরো অর্থটাই খরচ করে গড়ে তুলি এই রেস্টুরেন্ট। এ ব্যবসায় প্রথমে আমাদের ছিলো না কোন অভিজ্ঞতা। আমরাই মিলেমিশে কিচেন ও সার্ভিস সামলাতাম। ডিশ ওয়াশিং থেকে খাবার পরিবেশন। সব কিছুই করতে হতো নিজেদের। দেখা গেলো,অভিজ্ঞতা না থাকায় কোন কোনো শেফ(কুক) আমাদের জিম্মি করতেন। প্রয়োজনীয় সময়টাতেই দেখা গেলো তিনি আসতেন না। তখন এই নির্ভরতা কাটাতেই রান্নাসহ অন্যান্য কাজগুলোও আমরা শিখে ফেললাম। তারপরের ইতিহাস কেবলই সাফল্যের। আমাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এর ধারবাহিকতায় ফ্রান্সে আমরা গড়ে তুলি বেশ কয়েকটি রেস্টুরেণ্ট।

কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু বাংলানিউজকে আরও বলেন, ঢাকার বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির সন্তান আমি। সেই বনানীকে আমি তুলে এনেছি ফরাসিদের মুখে। রুচিসম্মত খাবারের জন্যে তারা নিজেরাই গর্বে উচ্চারণ করেন বনানীর নাম। আমার জন্মস্থানের নাম। এখানকার প্রবাসীদের মুখে মুখেও বনানীর নাম। সেটা শুনতে কি যে ভালো লাগে তা অনুভূতিতে প্রকাশের না। বলতে পারেন এটাই আমার বনানী। এটাই আমার কাছে বাংলাদেশ।

যোগ করেন কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।