ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ফুলবাড়ি হয়ে দার্জিলিং, হ্যাপা কম নয় ২৫ রুপির ঘোষণায়

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
ফুলবাড়ি হয়ে দার্জিলিং, হ্যাপা কম নয় ২৫ রুপির ঘোষণায় ছবি: শামীম হোসেন ও হুসাইন আজাদ

গ্রীষ্মের দার্জিলিং-১

দার্জিলিং থেকে ফিরে:
আগুনে ঘি ঢাললো পণ্যের পাশপাশি মানুষ পারাপারের নতুন ইমিগ্রেশন পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা। ওপারে ফুলবাড়ি।

মাত্র ২৫ টাকায় কম সময়ে শিলিগুড়ি পৌঁছে সেখান থেকে দার্জিলিং, কালিম্পং কিংবা পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরতম গ্রাম হিসেবে সমাদৃত রিশপে যাওয়ার সুযোগ! বাবা-মা-ফুফুদের মুখের নানা গল্প, নাটক, সিনেমা আর কৈশরে শোনা ‘কুয়াশায় ভেজা ভাসা ভাসা সেই পাইন গাছের ফাঁকে ফাঁকে রোদ্দুর...হলদে সবুজ রং...নেপালি গানের সুর... হাতের ভেতর শিশির ভেজা দার্জিলিং কালিম্পং...’ অঞ্জন দত্তের সেই বিখ্যাত গান বারবার প্ররোচিত করতো এই মেঘ পাহাড়ের দেশে যেতে।

সেই অপেক্ষার অবসান হলো অনেক পরে ঝামেলা-ঝক্কি পেরিয়ে। সঙ্গী সহধর্মিনী নিশি, কাজিন টুটুল ভাই, ভাবি ও দুই বাচ্চা এবং দুই সহকর্মী হুসাইন ও শামীম। ভাগ্যের ফেরে অবশ্য ভিসা মেলেনি আরেক সহকর্মী মাহবুবের। তা না হলে টিমটি হয়তো আরও একটু বড় হতো।  

সাংবাদিক হওয়ায় ভারতীয় ভিসা জটিলতা পোহাতে হয়নি। তবে বেশ ভুগিয়েছে অন্যদের। ফলস্বরূপ ভ্রমণের সম্ভাব্য তারিখ পিছিয়ে পড়লো একেবারে এপ্রিলের শেষে। অবশ্য মন্দ হয়নি। ভ্রমণ হলো শীতল দার্জিলিংয়ে ১৫-২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামার গ্রীষ্মে।
 
চলতি বছর ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখে মানুষ পারাপারের জন্য খুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের উত্তরের শেষ সীমান্ত বাংলাবান্ধা (ওপারে ফুলবাড়ি)। খবর ছিলো ওপারে শিলিগুড়ি যেতে খরচ হবে মাত্র ২৫ রুপি। আর দূরত্ব ৩-৪ কিলোমিটার। সে হিসাবে দার্জিলিং এখান থেকে বেশ কাছেই। মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার পথ। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে ঢের বেশি সুবিধা। এই ভেবে আমরা সিদ্ধান্ত নেই এ পথ মাড়াবার।

ভ্রমণে যেতে উদ্বুদ্ধ করা, ‘ফুঁসলিয়ে’ নিয়ে যাওয়া সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে আমার অন্যতম কাজ। এটি ভালো পারি বলেই মনে হয়! আর ‘ভ্রমণ বীজ’ একবার কারও মধ্যে রোপণ করলেই তা ফল দেয় যুগ যুগ ধরে। বন্ধু ও পরিবার-পরিজনের অনেককে দেখে সেটা বুঝে গেছি।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো নতুন এ ইমিগ্রেশন পর্যন্ত কোনো পরিবহন যায় না। তবে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যায় হানিফ ও শ্যামলী পরিবহন। ঢাকা থেকে আমাদের টিকিট হানিফের। ভাড়া ৭শ টাকা। সন্ধ্যা ৬টায় রওয়ানা করে ভোর সাড়ে ৪টায় পৌঁছে দিলো তেঁতুল গাছের তেঁতুলিয়ায়। তবে এসি বাস আছে পহ্চগড় পর্যন্ত। ভোরের আলো ফুটতেই বাস থেকে নেমে হাঁটাচলার মাঝে চা দোকানি ঢাকা থেকে এসেছি শুনে বলেই ফেললেন, ‘ভাই তেঁতুলিয়া আসছেন তেঁতুল গাছ দেখেন। ’ 

সত্যি তাকিয়ে আশপাশে বেশ কয়েকটি গাছ চোখে পড়লো। ঢাকা থেকে ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা মাথায় নিয়ে তেঁতুলিয়ায় গিয়ে দেখা গেলো ভোরে সোয়েটার গায়ে মানুষ চা পানে ব্যস্ত। হিমালয় যে খুব বেশি দূরে নয় তা টের পাওয়া গেলো ভালোই।  

একটু আলো ফুটলে স্থানীয় এক কিশোর বললো, বর্ডার পার হতে সময় লাগবে। ১০টার আগে হবে না। অাপনারা সামনে একটি রেস্ট হাউস আছে। নাম সীমান্তের পাড়। ভাড়াও বেশি না। ওখানে যেতে পারেন। অন্যদের কাছে শুনেও পাওয়া গেলো একই তথ্য। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিলাম রেস্ট হাউজের একটু গড়িয়ে নাস্তা সেরে রওয়ানা দেওয়ার। ঘণ্টা তিনেক সেখানে কাটিয়ে জমিয়ে ঘরোয়া নাস্তা সেরে ফ্রেস হয়ে রওয়ানা হওয়ার পালা।  
 
যাইহোক ১৮০ টাকায় ব্যাটারিচালিত অটো রিজার্ভ করে এবার বাংলাবান্ধায় যাত্রা। ১৫ কিলোমিটার রাস্তা বেশ সুন্দর। নতুন তৈরি। একটু এগোলেই কাঁটাতারের বেড়া দেখা যায়। বড় উঁচু শক্তিশালী ভারতীয় বিদ্যুতের পোলগুলো যেন তাকিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে। আমরা তখন ঢুকছি দেশের মানচিত্রে একেবারে মাথায়। দু’পাশেই ভারত। মাঝের রাস্তা আর সামান্য জমি কেবল বাংলাদেশ। মিনিট চল্লিশের জার্নি শেষে ইমিগ্রেশন। এবার কাজ সারার পালা। ঝামেলা-ঝক্কি কম নয়। দালাল, অবহেলা, উৎকোচ সবই আছে এখানে। বরং আছে বেশি বেশি। ৫শ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স, ৩৭ টাকার স্থলে ৫০ টাকা বন্দর ফি ছাড়াও রয়েছ দালাল ফি, ব্যাগ চেকিংয়ের ফি। অধিকাংশ মানুষকে এটা দিতেই হয়। কারণ তারা একের পর এক আইন দেখাতে ওস্তাদ। অঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী উৎকোচ দিয়ে তবেই ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষার পর পা বাড়ালাম ফুলবাড়ি ভারতীয় ইমিগ্রেশনে। সেখানেও যথারীতি টাকা নিলেও কাজ সারলো দ্রুতই। আগে থেকেই সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো মাহিন্দ্রোর ফোর হুইলার জিপ। গোর্খা ড্রাইভার রাজ ইশারায় বুঝলো আমরাই তার গাড়ির সওয়ার। হাতে শিবঠাকুরের উল্কি। উঁচু-লম্বা স্বাস্থ্যবান রাজ হিন্দি রক গান ছেড়ে মাথা দোলাতে দোলাতে চললো শিলিগুড়ি। অদ্ভুতভাবে অন্য দেশে পা রাখা মাত্রই প্রকৃতি, মানুষ মাটির সোদা গন্ধ যেনো পাল্টে যায়। আমার ভারত ভ্রমণ এটা দশমবার বলা চলে। আর টুটুল ভাই বাদে বাকি সবার প্রথম।
 
এই রুটে বর্ডার পার হয়ে মাত্র ২৫ রুপিতে শিলিগুড়ি পৌঁছানোর যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো তা বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। আর শিলিগুড়ি এখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। আমাদের পরিকল্পনা ছিলো আগে মূল দার্জিলিং শহরে যাবো না। দেখবো একটু উল্টোভাবে। যেদিকটায় মানুষ যায় কম। যাবো দার্জিলিংয়ের যে অংশ এখনো প্রকৃতির কোলে সেখানে। তাই যাত্রাপথ ঠিক হলো শিলিগুড়ি-গরুবাথান-লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ-কালিম্পং হয়ে সময় পেলে দার্জিলিং। আর ফেরার পথে চায়ের জন্য খ্যাত মিরিক হয়ে তবেই শিলিগুড়ি।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।