ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

গ্রীষ্মের দার্জিলিং-৫

পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরতম গ্রাম রিশপে

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরতম গ্রাম রিশপে ছবি: শামীম হোসেন ও হুসাইন আজাদ

[পূর্ব প্রকাশের পর]

দার্জিলিং ঘুরে: যে জায়গার আকর্ষণে দার্জিলিং শহরে না গিয়ে এদিকটায় আসা সেই রিশপে যাওয়ার জন্য সবার ছিলো অধীর অপেক্ষা। তাই লোলেগাঁও থেকে বিকেলে ফিরেই সিদ্ধান্ত হলো রিশপে যাওয়ার।

খাওয়া-দাওয়া সেরে তাই বিকেলের গন্তব্য বহুকাঙ্ক্ষিত রিশপ। একে বলা হয় পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরতম গ্রাম।

এর আগে চিন্তা বাড়ালো মোবাইল ফোন। কেনা সিমটি তখনও চালু হয়নি। কেউ সংবাদ পাঠাতে পারছে না দেশে। হুসাইন আজাদ বেশ কাহিল হয়ে পড়লো বাড়িতে খবর না পাঠাতে পেরে। পরে চালক রাজের মোবাইল থেকে কথা বলিয়ে দেওয়া হলো তাকে।

বিকেলে আমরা পৌঁছে গেলাম রিশপে। মূলত রিশপের টানেই এদিকটায় আসা। সে আশা যেন পূর্ণ হলো প্রথম দেখায়ই। তবে লাভা থেকে চার কিলোমিটারের রাস্তাটি ভয়াবহ রকমের খারাপ। পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে গ্রামটি। বসতি কম। পর্যটন কেন্দ্র করেই বসতি- এটা বোঝা যায়। এখানকার প্রধান আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ। পূর্বে ভুটানের উঁচু পাহাড় দাঁড়িয়ে ঢালের মতো।
প্রতিটি বাড়ির সঙ্গেই একটি করে রিসোর্ট। সব কাঠের তৈরি। বিদ্যুৎ আছে। তবে একবার গেলে দু’দিন আসে না এমনও হয়। নিয়মিত বৃষ্টি হয়। দূর থেকে বাড়িগুলো দেখে মনে হয় সবুজ পাহাড়ে ঝুলছে।

ব্যাগ রেখেই বেরিয়ে সদলবলে বেরিয়ে গেলাম ঘুরতে। অর্ডার করে গেলাম বারবিকিউ হবে। পাহাড়ের এই সুন্দরতম নির্জনতায় আগুনজ্বলা রাতে চিকেন বারবিকিউ। খরচও কম। দেড় কেজি মাত্র ৮শ রুপি। হাতে লাঠি নিয়ে সবাই লেগে পড়লাম ট্রেকিংয়ে। টার্গেট করা হলো যতদূর মানুষের পদচিহ্ন আছে ততদূর ওঠা। ঘণ্টাখানেকে আমরা পৌঁছে গেলাম শীর্ষে। উচ্চতা তখন ৭ হাজার ৩শ ফুট। এতো উঁচুতে উঠেও যথারীতি অক্লান্ত সুমেহেরা ও সামি।
 
সন্ধ্যায় ফিরে শিলিগুড়ি থেকে কেনা বছরের প্রথম আমে উদরপূর্তি হলো। দোকানপাট এখানে আছে মাত্র একটি। তাও দূরে। বেশিকিছু পাওয়াও যায় না। ততক্ষণে বারবিকিউয়ের মুরগি হাজির। ঠান্ডাও বাড়তে লাগলো। কিন্তু বাধ সাধলো বৃষ্টি। টানা আধাঘণ্টা তুমুল বৃষ্টি। থামার পর বাইরে বের হয়ে তো চোখ ছানাবড়া। ঘটনা প্রথমে বুঝে ওঠা যায়নি। পুরো চত্বরজুড়ে সাদা আর সাদা। পরে বোঝা গেলো তিন চার ইঞ্চি পুরু সাদা স্তর জমে গেছে শিলাবৃষ্টিতে। আরও অবাক হয়েছিলাম সকালে। কারণ অনেক শিলা তখনও গলেনি!

কুয়াশা বাধ সাধায় ভোরের সূর্যোদয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সাধ মিটলো না। যদিও এজন্যই আসে এখানে। তবে কাঞ্চনচঙ্ঘা ভিউ পয়েন্টে যেন দাঁড়িয়ে থেকেও শান্তি। বাড়িগুলোর বারান্দায় নানা প্রজাতির ফুল। গোলাপগুলো তো ঢাউস সাইজের। আর এক একটি গোলাপগাছ প্রায় ১৫ ফুট লম্বা। এতো বড় গাছ দেখা এটাই প্রথম। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাক বা না যাক, এমন সুন্দর, নির্মল পরিবেশে সকালটা উপভোগ করতে পারাও ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু উপভোগের মন থাকা চাই!
 
জানা গেলো এখানকার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস এলাচ চাষ। বড় সাইজের একরকম এলাচ হয় এসব পাহাড়ে। দাম ১৬শ’ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি। গ্রামটির চারপাশ একবার হেঁটে এলেও শান্তি। পরেরবার গেলে একাধিক দিন সেখানে কাটানোয় মত দিলো সবাই। এখানে সমস্যা শুধু একটি। রাতে রুটি খেতে হবে। সকালেও তাই। সঙ্গে আলুর দম, ডিম। পুরো ট্যুরে খাওয়া নিয়ে ঝামেলা বাধালো নিশি আর সুমেহেরা। বাকিরা ওই দুর্গম এলাকায় এই খাবারেই খুশি। আর একটি কথা বলে রাখা ভালো। এখানে এক থেকে দেড় হাজার রুপি হলেই থাকা-খাওয়া যাবে। সব লজিং সিস্টেম।
পাহাড়ে ঝুলতে থাকা কটেজগুলোর ঝুল বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে মেঘ আর পাহাড় দেখা সত্যি অতুলনীয়। পুরো গ্রামটি ৩০-৪০টি বসতি। সবগুলোর সঙ্গে কটেজ। পাহাড়ের গা ঘেঁষে নিচ থেকে পরতে পরতে গড়ে উঠে বসতিগুলো। প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের।
তবে বেশ অতিথিপরায়ণ তারা। পানি আর শীতের লেপ-কম্বল ঠিকমতো পরিষ্কার না করার সমস্যা রয়েছে এখানেও। সঙ্গে নিজেদের চাদর থাকলে ভালো। সূর্যোদয়ও দেখা গেলো না ঠিকমতো। মে মাসের শুরুতেও কুয়াশা। ভোরে উঠে পুরো গ্রামটি দেখা হলো হেঁটে। সত্যি সুন্দর গ্রাম এটি।  রিশপকে বিদায় জানাতে কষ্ট হচ্ছিলো। তবু এবার রওয়ানা কালিম্পং হয়ে দার্জিলিং।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
এএ

**
মেঘে ভিজে লোলেগাঁও ক্যানোপিতে
** গরুবাথানের পাথুরে স্বচ্ছ পাহাড়ি ধারায়
** ফুলবাড়ি হয়ে দার্জিলিং, হ্যাপা কম নয় ২৫ রুপির ঘোষণায়
** ৭ হাজার ফুট উচ্চতার লাভা শহরে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।