ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

রোয়াংছড়ির পথে পথে-১

প্রশাসনের বেড়াজাল পেরিয়ে তিনাপ সাইতারের পথে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
 প্রশাসনের বেড়াজাল পেরিয়ে তিনাপ সাইতারের পথে

বান্দরবান থেকে ফিরে: রোয়াংছড়ির বাসে যখন উঠি তখনও ভাবিনি আগামী তিন ঘণ্টা আমাদের জন্য এতো নাটক অপেক্ষা করে আছে। বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি সদর এক ঘণ্টার পথ।

শুক্রবার। ভাবলাম প্রশাসনের লোকজন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। কীসের কি!!

রোয়াংছড়ি নেমেই বাসস্ট্যান্ডে প্রথম বাধা। পুলিশের এক সাদা পোশাকের সদস্য পথরোধ করে দাঁড়ালেন। রনিন পাড়া যাওয়া যাবে না। সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাকি ভালো না। সব পর্যটকদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তিনি জানালেন আমাদেরও ফিরে যেতে হবে। বলে কি! এতোদূর থেকে এসে এমনি এমনি ফিরে যাবো? সবাই সংবাদকর্মী হওয়ায় যার যার সূত্রে শুরু হলো অনুমতি যোগাড়ের তদবির। কিন্তু পুলিশের সেই সদস্য অনড়, কিছুতেই আমাদের যেতে দেবেন না।

আমাদের পথ প্রদর্শক রনিন পাড়ার জেমসনকে ভয় দেখানো হলো মামলা দেওয়ার। অগত্যা কি করা। রোয়াংছড়ি থানার ওসি ওমর আলী সঙ্গে দেখা করতে হলো। তারও এক কথা, উপর থেকে নাকি রনিন পাড়ার দিকে পর্যটকদের যেতে দিতে না করা হয়েছে। আমরাও বিভিন্নভাবে তাকে আশ্বস্ত করতে লাগলাম।
অনেকক্ষণ চেষ্টার পর তিনি রাজি হলেন। কিন্তু শর্ত প্রতিদিন আমাদের অবস্থা ফোনে জানাতে হবে। আমরা তাতেই রাজি।
প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর সফল হয়ে থানা থেকে বের হয়ে চলেছি বাজারের দিকে। কয়েকদিনের প্রয়োজনীয় খাবার-দাবার কেনাকাটা করে নিতে হবে। থানা থেকে ছাড়পত্র পাওয়া গেছে, ফুরফুরে মেজাজে বাজারে ঢুকতেই আবারও বাধা।

এবার এক সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পথ আটকালেন। থানার অনুমতি পাওয়ার কথা জানালেও তিনি তা শুনতে রাজি নন। অনুমতি নিতে হবে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকেও। এ নিয়ে অনেকক্ষণ চললো দেন দরবার। এর মাঝে এসে ঝামেলা পাকালেন রোয়াংছড়ির পলাশ তঞ্চঙ্গা নামে এক পর্যটক গাইড। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকায় প্রশাসন তাকে অনুমতি না দেওয়ায় তিনি রুষ্ট হয়েছেন। নানা জায়গায় ফোন করে তিনি অনুযোগ জানাতে লাগলেন।

এই গাইডের বিরুদ্ধে নির্ধারিত অঙ্কের চেয়ে টাকা বেশি রাখা, চুরিসহ নানা অভিযোগ থাকায় প্রশাসন থেকে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাননি। ভবিষ্যতে যারা রোয়াংছড়ি থেকে রনিন পাড়ার বিভিন্ন স্পটে যাবেন তারা এর ব্যাপারে সাবধান থাকবেন।

যাইহোক সেই গোয়েন্দা এজেন্টের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যেতে হলো। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর দারুণ মানুষ। আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করলেন, কিন্তু তারও এককথা রনিন পাড়ার অবস্থা ভালো না। সেদিকে এখন যাওয়া যাবে না। এবার নামলাম তাকে আশ্বস্ত করার যুদ্ধে। অবশ্য এ যুদ্ধে জিততে খুব একটা বেগ পেতে হলো না। তবে একটা শর্ত জুড়ে দিলেন। বললেন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় দায়িত্ব তারা নেবেন না।

এই শর্তে ক্যাম্পের খাতায় নাম ঠিকানা রেজিস্ট্রি করে যখন পথে নামলাম আবার ঝামেলা বাঁধলো অন্যদিক থেকে। এবার গাইড জেমসন তার আগের নির্ধারিত পারিশ্রমিক থেকে বেশি দাবি করছেন। এবার তাকেও বোঝাতে হলো। সময় চলে যাচ্ছিলো দ্রুত। তখনও বাজার কিছুই করা হয়নি। জুয়েল থিওটোনিয়াস গেলেন জেমসনকে নিয়ে বাজার করতে। এবার কিন্তু থ্রিল অনুভব করছি।

রনিন পাড়া হয়ে এর আগে সিপ্পি আরসুয়াং পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি। এবারের ট্রিপেও তালিকায় আছে সিপ্পি। সঙ্গে যোগ হয়েছে হালে ট্রেকার কমিউনিটিতে দুর্দান্ত জনপ্রিয় ঝরনা তিনাপ সাইতার, তিদংখদ, মাঙসন সাইতার। এ পথে এবারের সাথীরাও নতুন। আছেন টিভি সাংবাদিকতার পরিচিত মুখ নাফিজা দৌলা, জুয়েল থিওটেনিয়াস, শাকিল হাসান, মনিরুল ইসলাম আর আনিসুর রহমান।

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বাজার করে জেমসন ও জুয়েল থিও ফিরলেন। ভাবলাম পুরো বাজার বোধহয় মাথায় করে আনবে। দেখি একবেলা খাওয়ার উপযোগী মুরগীসহ কিছু প্রয়োজনীয় রান্নার উপকরণ নিয়ে তারা ফিরলেন। তা ছিলো নিতান্তই অপর্যাপ্ত। যাইহোক শেষ পর্যন্ত যখন রোয়াংছড়ির সমস্ত ঝামেলা শেষ করে বাগমারা ঝিরিতে নামলাম তখন দুপুর দুটো বেজে গিয়েছে। অনেক দূর যেতে হবে, রনিন পাড়া পাঁচ ঘণ্টার পথ।    

বাংলাদেশ সময়: ০১০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।