ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সুজিয়ানায় সাইবেরীয় শীতে তুষারখেলা  

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৮
সুজিয়ানায় সাইবেরীয় শীতে তুষারখেলা   সুজিয়ানার পথে বরফ

চীন (সুজিয়ান) থেকে: তাপমাত্রা মাইনাস ১০। উত্তর-পশ্চিম চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুজিয়ান সিটির তাপমাত্রা। যেন সাইবেরীয় শৈত্য রাজত্ব করছে। বরফ জমাট বাঁধায় বন্ধ আগের রাতে করে দেওয়া হয়েছে মহাসড়ক। এ কারণে ট্রেনে একদিন পরে এসে নামতে হলো চীনের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল সুজিয়ান সিটিতে।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভোরে সুজো থেকে ২০০ কিমিলোটার দূরে সুজিয়ানার পথে রেলে। সড়কপথ তখনও খোলেনি।

সাংহাই বেইজিং ধরে যেতে হয় সুজিয়ানায়। তীব্র তুষারপাতের কবলে পড়ে বছরে এই সময়ে প্রায়ই বন্ধ করে দেওয়া হয় মহাসড়কটি। বন্ধ না করলে বরফে আটকা পড়া বা দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।

ভোরে যান্ত্রিক ‘বরফ কাটার’ দিয়ে তুষার সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুই ঘণ্টার যাত্রা শেষে সুজিয়ান স্টেশনে নামা মাত্রই দেখা গেলো সাদা পেজা তুলোর মতো হয়ে আছে চারপাশ। তুষার কেটে পথচলা শুরু।  

আশপাশে কোনো গাছপালার পাতা দেখা যাচ্ছে না। সব তুষারাবৃত। রাতে এখানে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১০। রোদ ওঠায় এখন একটু একটু করে বরফ গলতে শুরু করেছে। কিন্তু বরফের যে অবস্থা সারাদিনেও গলা শেষ হবে না। সন্ধ্যা থেকে আবার বরফ নতুন করে জমাট বাঁধা শুরু করবে।  

সুজিয়ানার পথে বরফচীনের যে শহরে বরফ উৎসব হয়, সুজিয়ান তার থেকে কম নয়। এখানে বরফ গাছে গাছে ছড়িয়ে পুরো সিটিকে শুভ্রতায় সাজিয়ে দেয়। বরফের আড়ালে পড়ে গেছে পাতাহীন বৃক্ষরাজি আর বনসাই।  

আশ্চর্যের বিষয় হলো, বরফ ঢেকে দিলেও গাছের যত্নে কমতি নেই। সব গাছ একই সমান উচ্চতার। এসব গাছে ঠিকঠাক মতো ট্রিমিং করা। এতো নিয়মিত ট্রিমিং করা হয় যে, একটি পাতাও বেসমান মনে হচ্ছে না। গাছগুলো সোজা দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য লোহার টুকরো দিয়ে কোমর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এমন একটি গাছও নেই যে গাছে এমন যত্ন নেওয়া হয়নি।  

এ সিটিতে সড়ক মেরামত ও নির্মাণের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়। এসবের খোঁজে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের সিইও আবেদ মনসুর। তিনি বনানী বিমানবন্দর সড়কের ডিজিটালাইজেশন ও সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা ও অর্থায়নকারী।  

তুষার খেলছেন প্রতিবেদকআগেও কয়েকবার আবেদ মনসুর চীনের এ শহরে এসেছেন। এ শহরের বরফময়তা দেখে তিনিও মুগ্ধ। ট্রেনের জানালা দিয়ে আসার পথে তার চীনা সঙ্গী জিমি রাউ এসব দেখাচ্ছিলেন। একই সঙ্গে সতর্ক করে দিচ্ছিলেন কীভাবে আগাগোড়া মুড়িয়ে থাকতে হবে। কারণ তাপমাত্রার এ অবস্থায় একটি দু’টি নয়, সবার গায়েই ৬-৭টি ভারী পোশাক।

সতর্কাবস্থায় সুজিয়ান নেমেই বরফ খেলা শুরু। এটাই প্রথম বরফ দর্শন বলে বেশ উত্তেজিত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া আরও কয়েকজন।  

আসার পথে চারজন ছাড়া পুরো ট্রেনে কোনো বাঙালি ছিলেন না। গুয়াংজু, কুনমিং ছাড়া চীনের আর কোথাও বাংলাদেশি নেই তেমন একটা। সুজিয়ানের পথঘাট একের পর এক মেশিনারিজ ইন্ড্রাস্টিজ ঘুরেও বাংলাদেশি বা ভারতীয় কাউকে দেখা গেলো না। তাহলে খাওয়ার মতো রেস্টুরেন্ট এখানে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। অচেনা মেন্যুর সঙ্গে পরিচিত হতে হবে আরেকবার। অচেনা হলেও রান্নার নির্দেশনা দিয়ে রান্না শেষে খাওয়া হলো শিল্প এলাকার ভেতরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৭
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।