ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মুগ্ধ করবে আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
মুগ্ধ করবে আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য আড়িয়ল বিল

মুন্সিগঞ্জ: বহুতল অট্টালিকা আর আকাশচুম্বি দালান-কোঠার ভিড়ে ঢেকে গেছে আকাশ। ব্যস্ত শহরে প্রতিদিন ছুটে চলে লাখো মানুষ। ইট পাথরের দেয়ালের বন্দি জীবনে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়টুকুও নেই। প্রতিদিনের যান্ত্রিক জীবন থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে আড়িয়ল বিলের কোনো জুড়ি নেই। আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করবে।

পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে ও মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত এ বিলটি। কিছুদিন আগেই যাওয়া হয়েছিল আড়িয়ল বিলে।

যতদূর চোখ যায় চারদিকে দেখা মেলে পানি আর পানি। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র এই তিন মাস বিলে থৈ থৈ করে পানি। স্বচ্ছ পানিতে বিভিন্ন রকম মাছের আনাগোনা। আর স্বচ্ছ পানিতে মেঘেদের ঘোরাফেরার প্রতিচ্ছবি বিলের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।  

পুরো আড়িয়ল বিলে কম হলেও ৫শ’ ব্যক্তির মালিকানাধীন দীঘি রয়েছে। ১৩৬ কিলোমিটারের ভূমি আড়িয়ল বিল। মিষ্টি রোদ আবার কখনো মেঘ কালো করে আসে বৃষ্টি। বৃষ্টির আগমনে প্রকৃতি যেন পরিপূর্ণতা লাভ করে। শীতল বাতাসের সঙ্গে মেঘ ঢেকে আসা বৃষ্টি অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি করে। নৌকায় ভিজে ভিজে কৃষকদের চলাফেরায় গতি বাড়ে। বিলের চারপাশে মেঘেদের চলাফেরা যেন শিল্পীর রঙিন তুলি দিয়ে আঁকা। মনে হবে যেন মেঘগুলো স্পর্শ করেছে বিলের পানি। বর্ষার সময় সাজানো বাগানের মতো বিভিন্ন রঙের শাপলা ফুটে থাকে বিলে। সেসময় বিলের সৌন্দর্য যেন আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। আর এইসব শাপলা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন চাষিরা। তবে এখন বর্ষা শেষ তাই শাপলা তোলাও শেষ।
আড়িয়ল বিলে জাল ফেলে দাঁড়িয়ে আছে এক ব্যক্তি
বিলের কিছু কিছু জায়গাজুড়ে রয়েছে কচুরিপানা। সেসব কচুরিপানা সংগ্রহ করে এলাকার মানুষ নিজেদের বাড়ির সামনে নিয়ে স্তুপ করে রাখে। পানি নেমে গেলে এসব কচুরিপানা জমিতে মিশে তৈরি হয় সার, তারপর সেখানে করা হয় সবজির চাষ। বিলের সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোর আশপাশে খুঁটির উপরে দোচালা-চৌচালা টিনের ঘরবাড়ি। চাইলে এসব বাড়ি সরিয়ে অন্যত্র নিয়েও থাকা যায়। স্বচ্ছ পানির ভেতর জলজ উদ্ভিদের বসবাস নিজ চোখে দেখা যায়। বিলের যত গভীরে যাওয়া যায় সৌন্দর্য যেনো ততো বেশি চোখে পড়ে।
 
আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য ক্যামেরা বন্দি করতে চাইলে বৃষ্টির বিষয়টি মাথায় এখানে আসতে হবে। এখানে বেড়াতে আসা অনেকেই সাগরদিঘী এসেছেন। দুপুর কিংবা বিকেলের দিকে আড্ডা দিয়েছেন। তবে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা অনেকেই খাবারের আবর্জনা ফেলে এখানকার পরিবেশ নোংরা করে ফেলে। মুন্সিগঞ্জের ইতিহাস ও পর্্যটন নিয়ে ‘কালের ছবি’ নামে একটি সংগঠন এসব ময়লা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়। তাদের উদ্যোগে ছোট দ্বীপটির সৌন্দর্্য অনেকাংশে বেড়ে যায়।  
আড়িয়ল বিল
বিলের পথ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়বে ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকা। বিলে ঘুড়তে আসা মানুষদের দেখে সেসব নৌকায় থাকা জেলেরা খুবই আনন্দিত হয়। দিন শেষে যখন আলো ফুরিয়ে যায় আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে যায়। চাঁদের আলোতে দেখা যায় অপরূপ বাংলাদেশের একটি অংশকে।  

জানা যায়, বাঁশ আর কচুরিপানা দিয়ে ঘিরে রাখা হবে পুরো দীঘি যাতে বিলের পানি কমলেও মাছ থেকে যায়। বিলকে কেন্দ্র করে শঙ্খচিল, কানিবক, মাছরাঙ্গা, ডাহুক, পাতিহাঁস ও নাম না জানা পাখিদের ছুটে চলা নজরকাড়ে। বুক অথবা মাথা সমান পানিতে নিমজ্জিত বড় বড় গাছ। শিশু কিশোররা বিলের পানিতে গোসল করছে হেঁসে গেয়ে। আড়িয়ল বিলকে কেন্দ্র করে এই জনপদের মানুষের জীবনযাত্রা। সব মৌসুমে আছে এই বিলের ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র। আড়িয়ল বিলে যার জমি আছে চোখ বুজে বলে দেওয়া যায় তিনি একজন সুখী কৃষক। মৌসুম জুড়েই তার ঘরে পৌঁছে বিলের আশির্বাদ।   

কচুরিপানা একত্রিত করে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা হয় ভেলা,  বাঁশের বৈঠা ঠেলে তাতে করে যাতায়াত করেন কৃষকরা। অনেকদূর যাওয়ার পর কিছু ঘরবাড়ি চোখে পড়ে। কয়েক বাড়ির লোকজন মিলে একটি ডিঙ্গি নৌকা ব্যবহার করেন। বৈঠা হাতে নিয়ে এসব নৌকা নারীরাও চালিয়ে থাকেন। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়, মসজিদ, মন্দির ও বাজারে যাওয়ার জন্য এসব ডিঙ্গি নৌকা ব্যবহার করেন তারা। কেউ কেউ আবার পানিতে ভেসে থাকার জন্য কলা গাছ অথবা বাঁশ দিয়ে বিশেষ কায়দায় ভেলা বানিয়ে থাকেন। বৃষ্টি শুরু হলে চারপাশের পরিবেশের এক অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
আড়িয়ল বিলে কচুরিপানার ভেলা
বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা সরু খাল। বর্ষা মৌসুমের পর বিলের সেই সব সরু খালের কোথাও স্থায়ীভাবে জমে থাকে পানি। বিল তীরবর্তী পাড়াগুলোতে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি চাষ করা হয়। দ্বীপের মতো গড়ে ওঠা এসব পাড়ার মানুষজন সহজ-সরল প্রকৃতির।  

জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে আড়িয়ল সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু লেখা নেই। আড়িয়ল বিল দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। এই বিলে তিন মাস পানি থাকায় এখানে প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজনন ঘটে। বর্ষা মৌসুমে জেগে ওঠে বিলের অপরূপ সৌন্দর্য। তবে আড়িয়ল বিলে ঘুড়ে বেড়ানোর প্রকৃত সময় হলো বর্ষাকাল।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।